হোসাইন আহমদঃ
মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণার্থী মেয়েদের সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়েছে। এনিয়ে জেলা জোড়ে গুঞ্জন চলছে। অভিযোগ রয়েছে, ওই দুই মেয়েকে নিয়ে প্রায় রাতে সরকারি গাড়িতে করে শহরে ঘুরাফেরা করতেন। মাঝে মধ্যে সরকারি গাড়ি নিয়ে তাদের বাড়িতেও বেড়াতে যেতেন ওই কর্মকর্তা। ওই মেয়ে আপন দুই বোন। ওই দুই বোন ৬ মাসের কম্পিউটার প্রশিক্ষণ শেষ করার পর তাদেরকে পূণরায় ৬ মাসের ড্রাইভিং প্রশিক্ষণে ভর্তি করেন ওই কর্মকর্তা। এর বাহিরেও প্রশিক্ষণার্থী মেয়েদের সাথে অনৈতিক কাজের অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বনেন রাশেদুজ্জামান চৌধুরী। পরবর্তীতে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরেও তাকে ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০১৮ সাল থেকেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সরকারি বাসাতে বসবাস করে আসছেন রাশেদুজ্জামান। কিন্তু অদ্যবধি ১ মাসেরও বাসা ভাড়া পরিশোধ করেননি। ওই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বর্তমানে ৭৩ জন প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। তার মধ্যে প্রতিবন্ধি ৫জন ও এতিম ৩০/৩৫ জন। অন্যান্য প্রশিক্ষণার্থী মেয়েদের দুস্থ্য দেখিয়ে এখানে ভর্তি করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ৩ মাস পূর্ব জেলার বড়লেখা উপজেলার সিরাজ উদ্দিন নামে এক অভিভাবক তার দুই মেয়েকে সমাজসেবা পরিচালিত মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে উদ্ধারের জন্য মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত আবেদন করেন। অভিভাবকের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা এফআইআরডিবি কর্মকর্তা ইয়াহিয়া বিলাল’কে তদন্তের দায়িত্বদেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়ের বাবা-মা ও বড় বোনকে সাথে নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে তাদেরকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তখন তাদের আচরণ ও কথা-বার্তায় মনে হয়েছে তারা মাদকাসক্ত। এসময় বাবা-মায়ের সাথে বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বললে তারা রাজি হয়নি। তাদের মোবাইলের কললিষ্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায় প্রায় রাত ২/৩টা পর্যন্ত সমাজসেবার উপ-পরিচালক বড় বোনের সাথে কথা বলতেন। উপ-পরিচালক বিকাশে তাদের কাছে টাকা পাঠাতেন। রাতে বড় বোনকে নিয়ে সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ঘুরাফেরা করতেন। এসময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাবরীনা রহমান দুবোন’কে বাড়িতে চলে যাওয়ার কথা বললে তারা কোনো অবস্থাতে রাজি হয়নি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেলা সমাজসেবার উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরীকে মৌখিকভাবে সতর্ক করে মেয়ে দুটিকে আবার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে পাঠান। ঘটনার ২০/২৫ দিন পূর্বে উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী মেয়েকে নিয়ে সরকারি গাড়িতে করে বড়লেখা উপজেলার তার বাড়িতে বেড়াতে যান। এবিষয়ে উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, মেয়ের মা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসছিলেন তাদের দেখতে। মা অসুস্থ্য থাকায় তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে গাড়ি দিয়ে বাড়ির রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে আসি। তবে একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে এর আগেও তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে ওই মেয়ের বাড়িতে একাধিকবার গিয়েছেন।
একটি সূত্র জানায়, সদর উপজেলার বুদ্ধিমন্তপুর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩টি মেয়েকে একটি চক্র বিদেশে প্রাচার করতে চাচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাদের উদ্ধার করে জীবনমান উন্নয়নের জন্য মৌলভীবাজার এতিম ও প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি করেন। ওই মেয়েদের ইশারা ইঙ্গিতে উপ-পরিচালক উত্ত্যক্ত করায় ৫দিনের মাথায় তারা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে চলে যায়।
এবিষয়ে চাঁদনীঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার উদ্দিন বলেন, স্থানীয়রা রাত ৩/৪টায় প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মেয়েদের পার্শ্ববর্তী বাজার, রাস্তা ও বিভিন্ন জায়গায় একাধিক দিন পেয়েছেন। তারা মৌখিকভাবে এগুলো আমাদের বলে আসছেন। শুক্রবার প্রশাসন ও স্থানীয়দের সাথে নিয়ে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গেলে অভিযোগের কথা বললে উপ-পরিচালক বাঁচার জন্য অনুরোধ করেন। আগামীতে এধরনের কাজ করবেন না বলে প্রতিশ্রুতিও দেন। তখন মেয়ে দুটিকে উদ্ধার করে তাদের অভিভাবকের কাছে স্থানান্তর করা হয় এবং উর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করি।
মৌলভীবাজার সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ওই মেয়ে দুটি নিজের পাঁয়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু পরিবার মানছে না। তারা এখানে থাকতে চাইলেও পরিবার জোর করে নিয়ে গেছে। সরকারি গাড়িতে করে মেয়েরা রাতে ঘুরাফেরার বিষয়ে তিনি বলেন, ৬ মাস থেকে রাতে সরকারি গাড়ি নিয়ে বের হওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। এর আগে মাঝে মধ্যে রাতে তেল নেয়ার জন্য বের হতো।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান সাংবাদিকদের জানান, এবিষয়ে তদন্ত কমিটি করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।