হোসাইন আহমদঃ
মৌলভীবাজারের প্রধান খড় স্রোতা মনু নদীর ভাঙন রোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকে হাজার কোটি টাকার “মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা” প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে। প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টাস্কফোর্সের গননাকৃত জিও ব্যাগ কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও রাতের আধাঁরে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। জিও ব্যাগের মুখ কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ পূণরায় ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখছে। স্থানীয়রা হাতেনাতে এমন অনিয়ম ধরেছেন। জনপ্রতিনিধি ও নদী তীরে বসবাসকারীদো অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজেসে এমনটি হচ্ছে রাজনগর উপজেলার আদনাবাদ এলাকায়।
জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল বলছেন, সারা দেশের মানুষ যখন বন্যা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন তখনই মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিলুটে ব্যস্থ। তিনি নিজের এবং ঠিকাদারের আখের গোছাতে মরিয়া। এক প্রশ্নের জবাবে রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারে জিও ব্যাগ নদীর কিনারে পালানোর কথা থাকলেও নদীর মধ্যখানে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে এমনটি হচ্ছে। এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী যা বলছেন তাই হচ্ছে।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মনু নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হওয়ায় ঝুঁর্কির মধ্যে রয়েছেন কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সবকটি পয়েন্ট। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুমিকা নিয়ে হতাশ স্থানীয়রা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে ওই প্রকল্প ২০২০ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯’শ ৯৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ২ বছরে মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যেও বেশির ভাগ ভেসে যাচ্ছে নদীর স্রোতে।
সোমবার বিকালে সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগীতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলে রাতের আধাঁরে টাস্কফোর্সের গণনাকৃত হাজারের উপরে জিও ব্যাগ মনু নদীর স্রোতের সাথে ভাসিয়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ রোববার রাতে এলাকার সুন্দর চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমান সহ অনেকেই দেখতে পান নদীর মধ্য স্থানে শ্রমিকরা জিও ব্যাগ পালাচ্ছে। এদিকে নদীর পানি প্রতিরক্ষা বাঁধে চুই চুই অবস্থায়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয়রা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছে যান কিছু জিও ব্যাগের জন্য। সেচ্ছাশ্রমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পালাবেন এমন চিন্তা করে। কিন্তু ম্যানেজার জিও ব্যাগ নেই বলে তাদের তাড়িয়ে দেন। এ সময় এলাকাবাসী বালির গর্তের ভেতর থেকে আড়াই মাস পূর্বের টাস্কফোর্সের গণণাকৃত জিও ব্যাগ উদ্ধার করেন। এসময় পাশের একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে কয়েক হাজার টাস্কফোর্সের গণণাকৃত খালি জিও ব্যাগ দেখতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দদের অবগত করেন। তারা সরজমিনে এসে ঘটনার সত্যতা পান এবং ছিড়া ও খালি ব্যাগ জব্দ করেন।
আদনাবাদ গ্রামের শামীম মিয়া ও মছদ্দর চৌধরী সহ অনেকেই বলেন, জিও ব্যাগ ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না ফেলে ঠিকাদারের লোকজন রাতের বেলা নদীতে কখন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আবার কখনও ব্যাগের মুখ ব্লেড দিয়ে কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ সংরক্ষণ করে রাখেন। ঠিকাদারের লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডর সহযোগীতায় এমনটি করছে।
ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান বলেন, আমার সামনে জিও ব্যাগ পানিতে ফেলতে দেখছি। তাদের ওই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে উপর মহলের ভয় দেখায়।
এম এম বিল্ডার্স এর ম্যানেজার মোঃ সুহান আলী খালি জিও ব্যাগ ঘরে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুলে রেখেছি।
রাজনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, আমার এলাকার মানুষ সবসময় বলে আসছে কাজের অনিয়মের কথা। এখানে এসে দেখলাম এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য। আমরা প্রায় ১’শ মানুষের সামনে নদীর স্রোতে জিও ব্যাগ ফেলতে দেখলাম। এর চেয়ে সত্য আর কি হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ সঠিক। কোন অসাধু এরকম কাজ করল ঝুজে উঠতে পারছিনা।
ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্র ধর বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ছিড়া ব্যাগ জব্দ করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আশারপর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।