মোহাম্মদ আবু তাহের
করোনায় এখন সারা পৃথিবী বিপর্যন্ত। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি ও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করেছে। দিন দিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আক্রান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, আক্রান্ত হচ্ছেন পেশাজীবি, আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও ব্যাংকাররাও। সাধারণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে হাসপাতালেই আক্রান্ত হচ্ছেন করোনা ভাইরাসে। সেবা না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর করোনা রোগীরা সেখান থেকে পালিয়ে আসার ঘটনা সংবাদপত্র থেকে জানা যায়। এমতাবস্থায় মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা জরুরি হয়ে পড়েছে। ডাক্তার ও নার্স আক্রান্ত হওয়ায় কিছু কিছু হাসপাতাল লকডাউন হওয়ার কারনে ননকভিড রোগীরাও জরুরি চিকিৎসা সেবা পেতে সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসা সেবা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার, যে কোন পরিস্থিতিতে যে কোন ধরনের রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা দরকার। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয় ছাড়া এ সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায় কিছু রোগীদের তথ্য গোপন করার কারণে চিকিৎসকরাও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একজন করোনা আক্রান্ত রোগী তথ্য গোপন করে হাসপাতালে দেশ ও সমাজকে ঝুকিতে ফেলতে পারেন। ইচ্ছা করে যারা এ কাজ করেন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে সব হাসপাতালে নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। নির্দেশনা গুলো হচ্ছে (১) সব বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে সন্দেহভাজন কোভিট রোগীদের চিকিৎসার জন্য পৃথক ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(২) চিকিৎসা সুবিধা থাকা সত্বেও জরুরি চিকিৎসার জন্য আসা কোনো রোগীকে ফেরত দেয়া যাবে না। রেফার করতে হলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেফার করতে হবে। (৩) দীর্ঘ দিন ধরে যে সব রোগী কিডনি ডাায়লিসিস সহ বিভিন্ন চিকিৎসা গ্রহণ করছেন তারা কোভিড আক্রান্ত না হয়ে থাকলে তাদের চিকিৎসা অব্যাহত রাখতে হবে। দেশের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে উল্লেখিত নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রচলিত বিধান অনুসারে লাইসেন্স বাতিল সহ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এধরনের নির্দেশ সময়ের দাবি। দেশের মানুষ উক্ত নির্দেশনার যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে চায়। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই চিকিৎসা পেশা কোনো সাধারণ পেশা নয়। একজন রোগী যখন শয্যাশায়ী থাকেন মূমুর্ষ থাকেন তখন আশার আলো হয়ে যে মানুষটি তার মনে বিরাজ করেন তিনি হলেন চিকিৎসক। বর্তমানে দেশের অনেক চিকিৎসকরাই জীবনবাজী রেখে মানুষের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। আদর্শ চিকিৎসকরা এখন মানবতার রক্ষকের ভুমিকা পালন করছেন বলে মনে করি। একজন মানুষের জীবন বাচাতে যে সাহায্য করে সে মানবতাকেই রক্ষা করে। বর্তমান করোনা ভাইরাসের এই মহামারির সময়ে অসুস্থ্য ও রূগ্ন ব্যক্তিকে চিকিৎসা ও সেবা যতœ করা ক্ষুধার্তকে অন্নদান করা, বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান করা মানুষের ইমানী ও মানবিক দায়িত্ব। যারা অসহায় বিপদগ্রস্থ বঞ্চিত মানুষকে সাহায্য বা ত্রাণ সাহায্য করেন আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হন। এ সম্পর্কে হাদীছে কুদসীতে বর্ণিত আছে নবী করিম (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা কেয়ামতের দিন মানুষের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলবেন, হে আদম সন্তান আমি অসুস্থ্য ছিলাম তুমি আমার সেবা করোনি। সে মানুষ অবাক হয়ে বলবে হে প্রভু আপনি তো বিশ্বজাহানের প্রতিপালক, কিভাবে আপনার সেবা করব। আল্লাহ বলবেন আমার অমুক বান্দা পিড়ীত অবস্থায় কষ্ট পাচ্ছিল তুমি তার সেবা করোনি।
হে আদম সন্তান আমি তোমার কাছে খাবার চেয়েছি, তুমি খাবার দাওনি, সে বলবে হে প্রভু আপনি তো জগত সমূহের প্রতিপালক কিভাবে আপনাকে খাবার দেব। আল্লাহ বলবেন আমার অমুক বান্দা ক্ষুধার্ত হয়ে তোমার কাছে গিয়েছিল তুমি তাকে খাদ্য দাওনি, তুমি কি জানতে না তুমি তাকে খাবার দিলে তার প্রতিদান তুমি আমার কাছ থেকে পাবে। এখন করোনায় লন্ডভন্ড বিশ্ব। চরম এক কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশও। বর্তমান পরিস্থিতিতে পৃথিবীতে ৮০ কোটি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ১২ কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। এই মহামারী পৃথিবীর মানুষের জন্য এক ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সরকার মানুষের সুরক্ষার জন্য ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। সীমিত আকারে ব্যাংক খোলা রাখা হচ্ছে। দীর্ঘ দিন লকডাউন থাকার কারণে দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছে। বাড়ছে কর্মহীন হওয়া মানুষ। এখন সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ হলো দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। অর্থনীতি চাঙ্গা না থাকলে মানুষ করোনায় আক্রান্ত না হলেও ক্ষুধার জ্বালায় মরবে। সরকার ৫০ লক্ষ মানুষকে অর্থ সহায়তা দিচ্ছেন। খাদ্য সহায়তা এবং অর্থসহায়তা মাসের পর মাস চালিয়ে যাওয়া সরকারের পক্ষেও সম্ভব হবে না। করোনা ভাইরাস কখন পৃথিবী থেকে চিরতরে বিদায় নেবে এটা কেউই বলতে পারছেন না। সব মানুষই স্বীকার করবেন লকডাউন কোন স্থায়ী ব্যবস্থা হতে পারে না, লকডাউন চিরকাল রাখাও যাবে না। সুতরাং পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ না করে এলাকাভিত্তিক লকডাউন করা যেতে পারে, অর্থ্যাৎ যে সমস্ত এলাকায় করোনা রোগী পাওয়া যাবে শুধুমাত্র সেসব এলাকা লকডাউন করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মানুষের জীবন নিরাপদ রেখে অফিস আদালত, লকারখানা, জীবানুমুক্ত রেখে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর মনিটরিং এর ব্যবস্থা করে সর্বোপরি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজ ও আধুনিক করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড সচল করে দেয়া সময়ের দাবি।
মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস সত্বেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিল হচ্ছে। দেশব্যাপী লকডাউন চলাকালে আমাদের দেশের অনেক মানুষেই বিধিনিষেধ মানছেননা। অনেকেই নিজ নিজ নাগরিক দায়িত্ব পালন করছেন না। অতচ মানুষের সচেতনতাই করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে মূল রক্ষা কবচ। সরকার করোনা ভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য বেশ কিছু চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন, যা প্রশংসার দাবী রাখে। প প্রয়োজনে আরও কিছু পুলিশ সদস্য নিয়োগের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষকে বাধ্য করতে হবে। জনসমাগম হওয়া স্থানগুলো যেমন হাসপাতাল, রাস্তাঘাট, বাজার, শপিংমল, অফিস আদালত, ব্যাংক বীমা অন্যান্য স্থানে মাস্ক পড়া সহ অন্যান্য বিধি বিধান মানতে কঠোর মনিটরিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখকঃ কলামিষ্ট, ব্যাংকার ও গবেষক।