রাজনগর প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় কৃষি তালিকায় ও প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এ অনিয়মের অভিযোগ এনে বিক্ষোভে নেমেছেন ক্ষমতাসীন দলের একাংশের নেতাকর্মী ও কৃষকরা। বুধবার দুপুরে ইউএনও কার্যালয়ের সামনে তারা বিক্ষোভ করেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা “ইউএনও’র দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে, দুর্নীতিবাজদের আস্থানা, রাজনগরে হবে না। হই হই রই রই, ইউএনও গেলো কই” সহ নানা স্লোগান দিতে শোনা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উপস্থিত কৃষক ও সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকার রাজনগর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের কাছ থেকে আমন ধান ক্রয় করার জন্য একটি তালিকা তৈরী করে। এই তালিকাটি রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসী আক্তার, উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) অসীম কুমার তালুকদারসহ সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে করা হয়। কিন্তু তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় না করে তালিকায় ভূয়া নাম সংযুক্ত করার জন্য মঙ্গলবার রাতে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার তালুকদারকে ইউএনও অফিসে ডেকে এনে জোরপূর্বক একটি কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়।
এবিষয়ে অসীম কুমার তালুকদার ফোনে এই প্রতিনিধিকে জানান, ইউএনও ফেরদৌসী আক্তার মঙ্গলবার রাতে রাজনগর উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরের ইউএনও অফিসে আমাকে ডেকে নেন। এরপর রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা, একজন যুবলীগ নেতা ও একজন ছাত্রলীগ নেতা আমাকে ভয়ভীতি ও জোরপূর্বক একটি লটারীর ফলাফলের নকল তালিকায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন। এই তালিকাটি প্রথমে করা মূল তালিকা ছিলোনা। এরপর আমি ভয়ে স্বাক্ষর করে চলে যাই।
জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর অধিনে ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ প্রথম ধাপে ১৭-১৮অর্থ বছরে রাজনগর উপজেলায় ৮৯টি ঘর আসে। প্রতিটি ঘরের বিপরীতে ১ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ঘর গুলোর কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌসি আক্তার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সমাপ্ত না করেও প্রকল্পের টাকা উত্তোলন করেছেন।
বিক্ষোভে মিছিলে, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পে এরকম দুর্নীতি হবে, আশাকরিনি। ৫/৬ মাস আগে অনিয়মের অভিযোগ পেলে ইউএনও ফেরদেীসি আক্তারের সাথে কথা বললেও তিনি বিষয়টি গুরুত্ব দেননি। এই দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্তদের আইনের আওতায় আনার জন্য আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলব।
রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাশেম বলেন, “উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনিয়মের বিরুদ্ধে কিছু লোক উপজেলার ভীতরে মিছিল করেছে। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে”।
এবিষয়ে রাজনগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মিছবাউদ্দৌজা ভেলাই জানান, বৈঠকে ধান ক্রয় নিয়ে জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে ইউএনও প্রস্তাব করেন। ইউএনও বলেন, মূল তালিকা অনুযায়ী ধান ক্রয় অতিসত্ত্বর শুরু করা হবে।
মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন জানান, বিষয়টি আমি জেনেছি। তদন্ত করে অবিলম্ভে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।