বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দীর্ঘ ২৫ বছর পর শনিবার মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলা আ’লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৫ বছর যাবত সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই। ওই কমিটিতেও ২৫ বছর ধরে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আছেন আছকির খান। দলীয় নেতারা বলছেন এর আগেও তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা তৎক্ষালিন সভাপতি আব্দুল বারীর সাথে ৭ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এখন আবার সভাপতি হতে চাচ্ছেন আছকির। ভেলাইও সভাপতির পদ ধরে রাখতে মরিয়া।
তবে বর্তমান কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদক উভয়ই অনেক সমালোচিত হয়েছেন। দীর্ঘ এই সময়ে দলীয় পদবী ব্যবহার করে উভয়ই নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। সম্পদ গড়ার পাশাপাশি ছেলে, সন্তান ও স্বজনদের সরকারি চাকুরির সুযোগ করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দলীয় সংবিধান পরিপন্থি কাজ করেছেন একাধিকবার। উভয়ই উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন। দায়িত্বকালীন সময়ে তসরুফ করেছেন সরকারি টাকা। আবার কেউ কেউ এলাকায় বাহিনীও গড়ে তুলেছেন।
জানা যায়, ১৯৯৫ সালের সম্মেলনে সভাপতির দায়িত্ব পান আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই। এখনও তিনি এই পদে বহাল। এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার ২ বছর পর থেকে এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের পদে বহাল। দলীয় কর্মীরা বলছেন, শারিরীক ভাবে দুজনই অক্ষম হলেও পদ ছাড়তে নারাজ। উভয়েরই শ্রবণ শক্তি নেই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬জনের নাম প্রস্তাব করে কেন্দ্রে একটি তালিকা পাঠানো হয়। কেন্দ্র থেকে দলীয় ‘নৌকা’ প্রতীকে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আছকির খানকে প্রতিদ্বন্দীতা করতে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নিজ দলের প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দিতা করার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন উপজেলা আওয়মীলীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ছাতির মিয়া ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শাহজাহান খান। ভোটের দিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেন আওয়ামীলীগের প্রার্থী মুক্তিযোদ্ধা মো. আছকির খান।
এদিকে গত ২৫ আগস্ট আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আহমদ হোসেন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের ব্যাপারে সংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে জেলা আওয়ামীলীগকে নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনার আলোকে জেলা আওয়ামীলীগ গত ২৭ আগস্ট এক পত্রের মাধ্যমে উপজেলা সভাপতি আলহাজ্ব মিছবাহুদ্দোজাকে অব্যাহতি দেয়। কিন্তু বর্তমানে তার এই অব্যাহতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে জেলা আওয়ামীলীগের বর্ধিত সভায় দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর পর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সম্মেলনের তারিখ দিলেও বর্ধিত সভা আহ্বান করতে গিয়ে বিপত্তি দেখা দেয়। সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খান উপজেলা সভাপতির সঙ্গে বসতে অস্বীকার করেন এবং উপজেলা সভাপতি নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নেত্রীর কাছে করা ওয়াদা ভঙ্গ করেছেন- উল্ল্যেখ করে দলীয় কোন সভায় তার সঙ্গে বসবেন না বলে কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সভানেত্রী বরাবর অভিযোগ দেন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিষয়ে উপজেলার একাধিক নেতাকর্মী বলেন, উভয়ই দীর্ঘ দিন যাবত দলীয় পদ আকড়ে আছেন। যার কারণে নতুন নেতৃত্ব আসছে না। কমিটির অনেকেই মারা গেছেন আবার কেউ কেউ নিস্ক্রিয় কিংবা প্রবাসে রয়েছেন। তারা আরও বলেন, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের শ্রবণ শক্তি না থাকায় যে কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সাথে পরামর্শ করা যায় না। ফোনেও তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। দলীয় সভায়ও তাদেরকে বুঝিয়ে কিছু বলা সম্ভব হয়নি। উপজেলার উদীয়মান নেতারা নতুন নেতৃত্ব চান।
সম্মেলনে সভাপতি পদে প্রার্থীরা হলেন- বর্তমান সভাপতি মো. মিছবাহুদ্দোজা (ভেলাই মিয়া), বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খান, উপজেলা আওয়ামীলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কামারচাক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফফার (মায়া মিয়া), উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফয়ছল আহমদ। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশিরা হলেন, রাজনগর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ৮নং মনসুরনগর ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মিলন বখ্ত ও রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান।
শ্রবণ শক্তি না থাকায় সভাপতি মো. মিছবাহুদ্দোজা ভেলাই ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মো. আছকির খান উভয়ই মোবাইল ফোন ব্যবহার করেননি। তাদের ছেলেদের মাধ্যমে তাদের সাথে কথা বলতে হয়। ছেলেরা ফোন না ধরায় তাদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।