রাজনগর প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলায় ইউপি নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকেরা প্রতিপক্ষের দোকানে ভাঙচুর এবং পাম্পে আগুণ জ্বালিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। পরবর্তীতে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে আগুণ নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় লোকমান হোসেন বাদী হয়ে ২৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ০৪/০১/২০২২ইং তারিখে মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন। দোকান পোড়ানোর অভিযোগ এনে স্থানীয় আরোও ৪ ব্যবসায়ী আদালতে পৃথক মামলা করেছেন বলে জানা যায়।
মামলার এজহার ও স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, রাজনগর সদর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন রেজাউল করিম সোহেল। বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন জুবায়ের আহমদ চৌধুরী। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চলান উভয় প্রার্থীর সমর্থকরা। ২৬ ডিসেম্বর ভোটগননা শেষে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জুবায়ের আহমেদ চৌধুরী পান ৫৪৩৪ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী আওয়ামীলীগের রেজাউল করিম সোহেল পান ৪৭৮৩ ভোট। বিজয়ী ঘোষণা করা হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী জুবায়ের আহমেদ চৌধুরীকে। এটা শুনার সাথে সাথে উত্তেজিত হয়ে যান আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকরা। বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের মারধর করে এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপি কর্মীদের দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর ও আগুণ ধরিয়ে দেয়। এক পর্যায়ে শাহনুর আহমদ এর নেতৃত্বে হাজী মোবারক এন্ড সন্স পেট্টোল পাম্পে আগুণ ধরিয়ে দেয়া হয়। মুহুর্তের মধ্যেই আগুণ পুরো পেট্টোল পাম্পে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ৩ ঘন্টা চেষ্টা করে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে পাম্পের কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়।
পাম্প মালিক মোঃ লোকমান হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, পাওনা টাকা চাওয়ার কারনেই তার পাম্পে পরাজিত নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা আগুণ ধরিয়ে দেয়। তিনি আরও জানান, “২০ ডিসেম্বর নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম সোহেল এর সমর্থকরা মোটরসাইকেল শোডাউন দেয়ার সময় ৬০/৭০ কর্মী পেট্টোল পাম্প থেকে মোটরসাইকেলে পেট্টোল ভরেন। সবার পেট্টোল ভরা শেষ হলে শাহনুর বিল দিবে বলে তারা চলে যায়। আওয়ামীলীগ প্রার্থী সোহেলের কাছে বিলের কথা বলি। তিনি বলেন নির্বাচন পরে বিল দিবেন এবং এ বিষয়ে বেশি বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকিও দেন। এই কারণেই তার কর্মী এবং সমর্থকেরা আমাদের পেট্টোল পাম্পে আগুন ধরিয়েছে।”
তিনি আরো বলেন যারা আগুন দিয়েছে তারা চিহ্নিত। কিন্তু পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছে না।
অপর আরেক ব্যবসায়ী বেঙ্গল ফুডের মালিক আব্দুল মালিক জানান, নির্বাচনের দিন তাই আমি আইন মেনে দোকান বন্ধ রাখি। সন্ধ্যায় খবর পাই আমার দোকানে আগুন জ্বলছে। দোকানে এসে দেখি আমার পুরো দোকান পুড়ে চাই হয়ে গেছে। পরে জানতে পারি পরাজিত প্রার্থী সোহেলের কর্মী সমর্থকেরা আগুন দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই। আমি মামলা দায়ের করেছি।
মিলা ক্লথ স্টোরের মালিক মকবুল আহমেদ জানান, আমার অপরাধ আমি বিএনপি করি। আমার দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করাই অপরাধ ছিল। প্রায় ২৫ লাখ টাকার কাপড় পুড়ে চাই হয়। থানায় বার বার মামলা করতে গিয়েছি কিন্তু পুলিশ এদের বিরুদ্ধে কোন মামলা গ্রহন করেনি। এখন আদালতে মামলা করেছি। আসামীরা প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে সঙ্কায় আছি।”
এবিষয়ে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমরাও অবগত হয়েছি। ঘটনার সাথে জড়িতদের খোঁজে বের করা হবে।