ষ্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের হয়রানির শিকার পুরো হাশামপুর গ্রাম। বিশেষ করে এলাকার হিন্দু ও দরিদ্র পরিবারের জায়গা নানা কৌশলে দখল করাই তার উদ্দেশ্য। আবার একাধিক নিরিহ পরিবারের জায়গায় ভূয়া দলীল করে জোরে দখলে নেন ওই ইউপি সদস্য। কেউ প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করান। গড়ে তোলেছেন একটি শক্তিশালী বাহিনী। স্থানীয়দের অভিযোগ রাহেলকে প্রশাসন পরোক্ষ ভাবে সহযোগীতা করছে। তার হয়রানির শিকার হয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। জনপ্রতিনিধির আড়ালেই তিনি এসব অপকর্ম করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৯ সালের তৎক্ষালিন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জহিরুল ইসলাম ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে গেলে রবিরবাজারে দুষ্কৃতিকারীরা তার উপর হামলা করে। ওই ঘটনার মামলায়ও আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলকে আসামী করা হয়।
সরেজমিন হাশামপুর এলাকায় গেলে ইউপি সদস্য রাহেলের নির্যাতনের ভয়ে কেউই কথা বলতে চাননা। তারা বলেন, “আপনারা চলে যাওয়ার পর রাহেল তার বাহিনী দিয়ে আমাদের হয়রানি করবে। তবে এসময় সাহস করে শৈলেন্দ্র মালাকার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমার ভাইদের মধ্যে জায়গা নিয়ে রাহেল বিরোধ সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গিয়াস উদ্দিনকে তৃতীয় পক্ষ দাঁড় করিয়ে রাহেল মেম্বার গোপনে জায়গা দলিল করে নেয়। এদিকে একই গ্রামের স্মৃতি রাণী মালাকারের বাড়িতে গেলে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে ৩০ বছর আগে তার স্বামী মৃত মনরঞ্জণ মালাকারের বাড়ি এবং শ্মশান দখলে নেয় রাহেল মেম্বারের যোগসাজসে তার ভাইয়েরা। পরবর্তীতে হিন্দুদের সৌদি আরব নিচ্ছেনা বলে ৩৭ হাজার টাকা দিয়ে তাদের বাড়ি থেকে বের করে দেন। রাহেল মেম্বারের অত্যাচার ও নির্যাতনের ভয়ে আমরা কিছু বলতে পারিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৃদ্ধ চোখের পানি ফেলে বলেন, রাহেল মেম্বারের অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় পুলিশ দিয়ে আমাকে ও আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অন্য এলাকার একটি ডাকাতির মামলায় কারাগারে পাঠায়। ১ মাস পর জামিনে বেরিয়ে আসি। ইউনুছ উল্যাহ, আব্দুল হান্নান ও আব্দুল খালিক সহ অনেকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের হয়রানিতে আমরা এলাকায় শান্তিতে বসবাস করতে পারছি না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাকে কিভাবে হয়রানি করা যায় এই চিন্তায় ওই জনপ্রতিনিধির দিন কাটে। পুলিশের সাথে ভালো সম্পর্ক ও সম্পদের মালিক হওয়ায় সাধারণ মানুষ ভয়ে কিছু বলতেও পারেন না।
ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেল বলেন, শৈলেন্দ্র মালাকারের জায়গা কিছু দিন আমার কাছে ছিল। পরবর্তীতে দলিল করে তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি। সরকারী গভীর নলকূপ আপনার লন্ডন প্রবাসী ভাইর বাড়িতে কিভাবে স্থাপন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই ডিপ টিউবওয়েল চেয়ারম্যানের বরাদ্দ। নির্যাতন ও অনিয়মের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
কুলাউড়া উপজেলার রাউৎগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল জামাল ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ চৌধুরী রাহেলের ভাই লন্ডন প্রবাসী রুবেলের বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপনের বিষয়ে বলেন, আমার কাছে থেকে নিয়ে কাকে দিয়েছে আমি জানিনা। তবে এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিব। চলাফেরা তো ভালোই দেখতেছি। কিন্তু ভীতরে কি করছেন সেটা আমি জানিনা।
কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিণয় ভুষণ রায় বলেন, “আমি যোগদানের পরে এরকম হয়নি। আমার আগে হলে সে দায়িত্ব আমি নিতে পারব না”।