বিশেষ প্রতিনিধিঃ
লটারিতে বিজয়ী হওয়ার দুই যুগ পার হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জালিয়াতির কারণে এখনও স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পা রাখতে পারেননি ডিভি লটারি বিজয়ীরা। কিন্তু ভিসার প্রহর গুনতে গুনতে এ পর্যন্ত অনেকেই মারা গেছেন। অধিকাংশ লটারী বিজয়ীরা জলন্ত অভিসাপের মধ্যে ভিটামাটি বিক্রি করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। আবার কেউ কেউ বয়সের ভারে মৃত্যু’র সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। বিষয়টির সমাধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ঘুরতে ঘুরতে তারা ক্লান্ত।
সর্বশেষ এখন তারা ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের কূটনৈতিক সহায়তা চেয়ে চলতি বছরের ৮ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। নব নির্বাচিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অভিবাসন নীতি বিরোধী সকল কার্যক্রম বাতিল করে যেসব দেশের নাগরিক আবেদনের পরেও ভিসা পাননি সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী ভিসা প্রদানের ব্যবস্থা নিবেন মর্মে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তারপরেও বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অবহেলায় তাদের এ কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি বলে ডিভি লটারি বিজয়ীদের অভিযোগ। তারা বলেন, মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের চীফ কনসুলার অফিসার বরাবর একটি আবেদন পাঠান। কিন্তু অদ্যবধি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি মার্কিন দূতাবাসে পাঠায়নি। এবিষয়ে কোনো প্রদক্ষেপ না নেয়ায় ডিভি লটারি বিজয়ীরা একাধিকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত আবেদনের পরেও কোনো উত্তর দেননি। এনিয়ে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সর্বশেষ তারা গত বছরের ৮ নভেম্বর সিলেটে পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ১৯৯৫ সাল হতে আমেরিকা সরকার ডিভি লটারী চালু করে বিশ্বের ৫৫টি দেশ থেকে কোটার ভিত্তিতে প্রতি বছর ৫৫ হাজার লোককে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দেয়। তন্মধ্যে বাংলাদেশের কোটায় প্রতিবছর ৩ হাজার ৮’শ ৫০ জন আবেদনকারীর অভিবাসন নিশ্চিত করা হয়। এ আলোকে ১৯৯৫-২০১২ সাল পর্যন্ত মার্কিন অভিবাসন নীতির আলোকে ডিভি লটারীর মাধ্যমে বাংলাদেশী আবেদনকারীদের উল্লেখ যোগ্য সংখ্যক মানুষের প্রয়োজনী পাসপোর্ট, স্পন্সরশীপ ও মেডিকেল টেস্ট ও ভিসা ফি প্রদান করেও কিছু অসাধু দূতাবাস কর্মকর্তার জালিয়াতি, স্থানীয় দালাল চক্রের যোগসাজেসে প্রকৃত বিজয়ীদের কাগজপত্রে ছবি বদল করে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে অন্যত্র বিক্রি করে ভুয়া লোক পাঠায়।
আবেদন থেকে আরোও জানা যায়, ভিসা জালিয়াতির সাথে ডাক ও বিমান বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। তারা গড়ে তুলে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। ওই চক্র বিজয়ীদের নামে আসা চিঠি তাদের হাতে না পৌঁছিয়ে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে অন্য জনের কাছে বিক্রি করত। পরবর্তীতে ডাক সার্ভিসের তৎক্ষালিন পরিচালক সাইদ উদ্দিন মাহমুদকে চেয়ারম্যান ও এপি এমজি নুুরুল আমিনকে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটিও ঘটন করা হয়। কিন্তু ওই দতন্ত কমিটি ১৮ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।
বিষয়টি নিয়ে ২০১১ সালের ৯ মার্চ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ১১তম সভায় আলোচনা হয় এবং ২০১৩ সালের ১০ জুন সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী জাতীয় সংসদে প্রশ্নোক্তর পর্বে মৌখিক উত্তরদানের জন্য ২৯২ নং প্রশ্নে বিষয়টি উত্তাপন করেন।
এ বিষয়ে আমেরিকান ডিভি লটারী বিজয়ী ও ভিসা বঞ্চিত বাংলাদেশি সমন্বয় পরিষদের সভাপতি সৈয়দ ইউনুছ আলী বলেন, দীর্ঘ দিন যাবত এ ইস্যু নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও মার্কিন দূতাবাসে আবেদন করার পরেও কোনো সমাধান পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক এ বিষয়টি সামাধান করার জন্য আমরা মাদার অব হিউমিনিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তেক্ষেপ কামনা করছি।