বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজারের সাত উপজেলার প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের সর্বশেষ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শতশত রোগী সেবা নিতে আসেন। কিন্তু সন্তুষ্টজনক সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ মনে অনেককে ফিরে যেতে দেখা যায়। আবার কতিপয় ডাক্তার ও কর্মচারীদের দায়িত্ব অবহেলার কারণেও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জেলাবাসী।
সরেজমিন রোববার দুপুর ১২.২৮মিনিটে হাসপাতালের বহিঃ বিভাগে গেলে দেখা যায় চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তাসনুভা আশরাফ ও গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাঃ রওশন আরা জামানের চেম্বারের সামনে সেবা নিতে আসা রোগীরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। তখন ডাঃ তাসনুভা আশরাফের চেম্বারের ভীতরে গিয়ে দেখা যায় ডাঃ তাসনুভা আশরাফ ও ডাঃ রওশন আরা জামান বসে গল্প করছেন। এ সময় কি কারণে উভয় রোগী দেখছেন না জানতে চাইলে তারা বলেন, এখন ৩০ মিনিট আমাদের নাস্তার সময়। তাই আমরা নাস্তা না করে একটি বিষয় নিয়ে আলোচানা করছি। এখনও ৫ মিনিট বাকী আছে। বিরতীর নির্দিষ্ট সময় পরে রোগী দেখব বলে উভয় চেম্বার থেকে বের হয়ে চলে যান।
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ তাসনুভা আশরাফের চেম্বারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা এনি আক্তার, তাবাসসুম সহ অনেকেই বলেন, বার বার অনুরোধ করলেও আমাদের দেখেননি। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করে চলে গেছেন। কিন্তু এবিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পার্থ সারথী দত্ত কাননগো বলেন, বহিঃ বিভাগে ডাক্তারদের নাস্তার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে প্রাকৃতিক কিংবা রোগাীর চাপ কম থাকলে একান্ত প্রয়োজনে ৫/১০ মিনিট সময় ব্যয় করা যেতে পারে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৪ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে কার্যক্রম শুরু হলে পরবর্তীতে ১০০ শয্যায় উন্নিত হয়। ২০১২ সালে ১০০ শয্যা হাসপাতালটি ২৫০ শয্যা আধুনিক হাসপাতালে রূপান্তরিত হলেও জনবল সংকট ও বহিঃ বিভাগে ডাক্তারের অবহেলার কারনে প্রকৃত সেবা থেকে বঞ্চিত সাত উপজেলাসহ জেলা সদরে বসবাসকরী সাধারন মানুষ।
জানা যায়, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সহ ১৯ জন চিকিৎসক, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর মোট ৮৬ জন কর্মচারী সংকট রয়েছে। যার ফলে, ২৫০ শয্যা হাসপাতালে সেবার মান প্রতিনিহিত কমছে ও গর্জিয়ে উঠছে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।
আধুনিক হাসপাতালে সব ধরনের পরীক্ষার নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও বহিঃ বিভাগের ডাক্তাররা রোগিদেরকে পরীক্ষার পরার্মশ দিলে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা রোগীদের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করানোর কথা বলছেন। এতে তারা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পাচ্ছেন কমিশন। ডাক্তাররা রোগীদের পরীক্ষা করে নানা রকম ঔষধ লিখে থাকলেও কাউন্টারে পাওয়া যায় না চাহিদামত ঔষধ। কেউ কেউ পাচ্ছেন অর্ধেক আবার কেউ ফিরে যাচ্ছেন খালি হাতে। এ সময় দেখা যায় সার্জারী বিভাগে ডাক্তার দেখাতে আসা আব্দুল আহাদ বাহিরে থেকে এক্সরে করে নিয়ে এসেছেন। এখানে কেন এক্সরে পরীক্ষা করালেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিপোর্ট দিতে দেরি করে এবং বিভিন্ন ঝামেলা করে যার কারণে বাহির থেকে করে নিয়ে এসেছি। সেবা নিতে আসা জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার কালাপুর গ্রামের গণি মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে এসে ছিলাম এখানে ভালো ডাক্তার দেখাব ও ঔষধ পাবও। কিন্তু কোনো ধরনের পরীক্ষা নিরিক্ষা না করে দূর থেকে ডাক্তার সাবেহ কথা শুনে ২টা ঔষধ লিখে দেন। আমার কি সমস্যা হয়েছে এটাও বললেন না।
সার্বিক বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ পার্থ সারথী দত্ত কাননগো বলেন, প্রকৃত সেবার মান নিশ্চিত করার জন্য আমি আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য ডাক্তারদেরও নির্দেশনা দেই। নিয়মীত সরকারী নির্দেশনার আলোকে কাজ করছি।