ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারে নৈতিক স্খলন ও দলীয় শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকান্ডের জন্য বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের জেলা কমিটির বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হান আনছারীকে সাময়িক অব্যাহতি এবং ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর সভাপতি সজিবুল ইসলাম তুষারকে দলীয় সকাল প্রকার সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত বাকী ৩ জনের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে সূত্র বলছে।
ঘটনার সাথে জড়িত মাহমুদ এই খানের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে জানা যায়, গত ৩ আগস্ট তার বন্ধুরা মিলে মাহমুদের বাসায় ঈদ পূর্ণমিলনী পার্টির আয়োজন করে। একান্ত বন্ধুদের এই আয়োজনে যুক্ত হন মাহমুদের বন্ধু নারী অধিকারকর্মী মারজিয়া প্রভা, তার প্রেমিক ছাত্র ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলার সাবেক নেতা বর্তমান শ্রমিক ফ্রন্টের সংগঠক রায়হান আনসারি। তাদের সাথে পার্টিতে নিয়ে আসেন ছাত্র ফ্রন্টের মৌলভীবাজার জেলা কমিটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কবি সজিবুল ইসলাম তুষারকে। তুষারের সাথে সে পার্টিতে যুক্ত হয় তারই বাল্য বন্ধু একটি মেয়ে। পার্টিতে ব্যাপক খাওয়া-দাওয়া হয়, আড্ডা হয় এবং এক পর্যায়ে তারা গাজা টানেন।
গত ২৫ আগস্ট সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খান নিজের ফেইসবুক পেইজে ৩ আগষ্ট কি ঘটে ছিল বিস্তারিত উল্লেখ করেন। সামাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও শহর সভাপতি সজিবুল ইসলাম তুষার এর বিরুদ্ধে মধ্যপ অবস্থায় এক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। এ কাজে মারজিয়া প্রভা নামের এক নারীবাদী এবং রায়হান নামের এক বাম নেতা সহযোগীতা করেছেন বলে তিনি স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেছেন।
এর একদিন পর অভিযুক্ত তুষার তার ফেইসবুক আইডিতে স্ট্যাটাসে ওই দিনে গাঁজা পার্টি বসেছে এবং তারা মধ্যপ অবস্থায় সম্মতির ভিত্তিতে যৌন কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন। তবে ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি ওই মেয়ের আগ্রহে যৌন কাজে লিপ্ত হয়েছেন তা অকপটে স্বীকার করেন।
অনলাইনে এসব ঘটনা প্রকাশ্যে ভাইরাল হওয়ার পর মৌলভীবাজারের কতিপয় সংগঠনগুলোর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। অনেকের মতে ওই সংগঠনগুলো প্রগতিশীলতার আড়ালে মাদক সেবন ও নারী ভোগের একটি প্লাটফর্ম তৈরী করেছেন।
এই ঘটনা সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর অনলাইনে অনেকেই প্রতিবাদ করছেন। প্রশাসন বিষয়টি সম্পূর্ণ জেনেও কোনো ভুমিকা না নেয়ায় জনমনে না প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। জেলার সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের এবং উলাম পরিষদের ভুমিকা নিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছেন।
এদিকে অনলাইনে যারা প্রতিবাদ করছেন তাদেরকে নানা ভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুলিশি নির্যাতন ও বাড়ি ঘরে হামলার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
মাহমুদের একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি বলেন, অভিযান চালালে মাহমুদের বাসায় এখনো মদের বোতল সহ অনেক মাদকদ্রব্য পাওয়া যাবে। তার ব্যক্তিগত কম্পিউটার চেক করলে অনেক মেয়ের বিতর্কিত ছবি পাওয়া যাবে। যেগুলো মাহমুদ ব্লেক মেইল করার জন্য রেখেছে। ইতিমধ্যে মেয়েদের সাথে তার অন্তরঙ্গ বেশ কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ সহ বেশকিছু ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ মৌলভীবাজারে ওই সকল ছাত্র সংগঠনের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবী তুলেছেন। তারা বলছেন, জেলার বিভিন্ন কলেজে নবাগত শিক্ষার্থীদেরকে তাদের দলে যুক্ত করে নানা ভাবে ব্রেইন ওয়াশ করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। সে জন্য অবিলম্বে অপরাধীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে এসে ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হউক।
প্রতিবাদ জানিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত ইমতিয়াজ রিপুল তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, যদি এই কাজ কোনো ছাত্রলীগের কর্মী করতো, তাহলে এতক্ষণে পৃথিবী গরম হয়ে যেতো। তিনি এ নিকৃষ্ট কাজের তীব্র নিন্দা এবং এর সাথে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান। রাজনজর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল আহমদ ও এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বাসদ মৌলভীবাজা জেলা শাখার আহ্বায়ক ময়নুর রহমান মগনু স্বাক্ষরিত এক দলীয় প্যাডে ২৮ আগষ্ট শৃঙ্খলা বিরোধী কার্যক্রম ও অনৈতিক জীবনযাপনে নিয়োজিত থাকায় সকল শাখার দায়িত্ব থেকে জেলা কমিটির বর্ধিত ফোরামের সদস্য রায়হান আনছারীকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে এবং তাকে সংগঠনের সকল দায়িত্ব থেকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এ মর্মে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ২৭ আগষ্ট দলীয় প্যাডে সংগঠনের জেলা সভাপতি রেহনোমা রুবাইয়াৎ ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন সাংগঠনিক সম্পাদক সজিবুল ইসলাম তুষারকে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের জন্য দলীয় সকাল প্রকার সাংগঠনিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে।
বাসদ মৌলভীবাজা জেলা শাখার আহ্বায়ক ময়নুর রহমান মগনু বলেন, প্রমাণাধির ভিত্তিতে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় রায়হান আনছারীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার অপকর্মের দায় সংগঠন নিতে পারে না।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের জেলা সভাপতি রেহনোমা রুবাইয়াৎ বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একাধিক অভিযোগ উঠার পর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সজিবুল ইসলাম তুষারকে আমরা সংগঠন থেকে বহিষ্কার করেছি।
এবিষয়ে জেলা উলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গিয়াস উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এখন আপনার কাছ থেকে শুনলাম। আমাদের এক বিন্দু রক্ত থাকলেও এদের বিরুদ্ধে লড়ে যাব।
এ বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক সংগঠনের সভাপতি খালেদ চৌধুরী বলেন, ঘটনা ফেইসবুকে দেখেছি। বিষয়টি নিয়ে খুব গাটাঘাটির সুযোগ হয়নি। তবে শীঘ্রই আমরা আলোচনায় বসবো।
মাহমুদ এইচ খানের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা পুলিশ বলছে অপরাধীদের কখনও ছাড় দেয়া হবে না।