মুনজের আহমদ চৌধুরী
এম এ সালাম। বৃহত্তর সিলেটের জীবিত প্রবীনতম সাংবাদিক। ষাটের দশক থেকে আজবধি নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছেন সাংবাদিকতায়।
ব্যাক্তি আব্দুস সালাম নিয়ে আলোচনা সমালোচনা আপনি করতেই পারেন। কিন্তু,বাস্তবতা হলো আমার জনপদের সাংবাদিকতায়,সাংবাদিক নেতৃত্বে আর একজন এম এ সালাম আমাদের নেই। আরো কয়েক দশকে যে গড়ে উঠবেন,সে সম্ভাবনাও দেখি না।
৫০ বছর অনেকটা সময়। পাচঁটা দশক। আমি নিজে পঞ্চাশ বছর বয়স অবধি বেঁচে থাকবার সপ্নও দেখি না। অথচ গত ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মৌলভীবাজারের সাংবাদিকতা অঙ্গনের একটি অবিচ্ছেদ্য নাম এম এ সালাম।
মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। তবে এই প্রেসক্লাব প্রাতিষ্টানিক রূপ পায় এম এ সালামদের হাতে। সৈয়দ মতিউর রহমান, এডভোকেট গজনফর আলী, এডভোকেট মোহাম্মদ ফিরুজ,এ আর তালুকদার,মতিউর রহমান সানি এরা ছিলেন মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের প্রতিষ্টাতা সদস্য। এম এ সালাম ১৯৬৬ সালে দৈনিক যুগভেরীর মাধ্যমে সাংবাদিকতায় সক্রিয় হন। বজলুর রহমান সম্পাদিত একতা,অর্ধ সাপ্তাহিক পাকিস্তান হয়ে ১৯৬৭ থেকে আজবধি কাজ করে চলেছেন দৈনিক সংবাদে ও চ্যানেল আই তে।
গত অন্তত চার দশক ধরে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবকে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। নেতৃত্বের বিরোধ নিয়ে প্রেসক্লাব ভেঙ্গেছে। আবার বহুবছর পর হাইকোর্টে মামলা চলার পর ঐক্যবদ্ধ হয়েছে ইতিহাস সৃষ্টি করে। বাংলাদেশের খুব কম জেলাতেই একটা একক ঐক্যবদ্ধ প্রেসক্লাব আছে, আমাদের আছে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব।
এই প্রেসক্লাব ঐক্যবদ্ধ করতেও তাঁর ভুমিকা ছিল। সেই মাহেন্দ্রক্ষনের আদালতের সাক্ষীর তালিকায় আমারও নাম ছিল।
৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানে তৎকালীন মৌলভীবাজার মহকুমায় ছাত্র ইউনিয়নের একজন সংগঠক হিসেবে এম এ সালাম সক্রিয় ছিলেন।
সাংবাদিকতার সুত্রে দক্ষিন সিলেটের ষাটের দশকের খ্যাতিমান ন্যাপ নেতা,সাংবাদিক নেতা মরহুম এডভোকেট গজনফর আলীর ঘনিষ্টজন ছিলেন এম এ সালাম। এই গজনফর আলী চৌধুরী মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের অন্যতম প্রতিষ্টাতা। সংবাদে কাজ করতেন।
সত্তরের আমেরিকার নিউইয়র্ক থেকে তিনি ও তার স্ত্রী মিলে বাংলাদেশের দৈনিক সংবাদ প্রকাশ করা শুরু করেন। অবশ্য এ প্রকাশনায় সাবেক একজন ছাত্রনেতাও সস্পৃক্ত ছিলেন। বাংলাদেশের বাইরে অন্য কোন দেশ থেকে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকা প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা সৃষ্টি করেন নতুন ইতিহাসের।
গজনফর আলী চৌধুরীর স্ত্রী মৌলভীবাজার শহরের প্রথম মুসলিম মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার্স ডিগ্রীধারী সৈয়দা হাসনা বেগম। ষাটের দশকে আমাদের মৌলভীবাজারের সক্রিয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক কর্মী ছিলেন এই নারী। এম এ সালাম আর সৈয়দা হাসনা বেগম সহপাঠী না হলেও সম সাময়িক। মৌলভীবাজারের একটা প্রজন্ম বিনির্মানে একসাথে কাজ করেছেন তাঁরা।
আশির দশকে এরশাদ জামানায় মৌলভীবাজার শহরের আদি বাসিন্দা ছাত্র রাজনীতি করে,রাজনৈতিক কর্মী হয়ে গড়ে উঠা নারী প্রথমবারের মতো আশির দশকে সংরক্ষিত আসনে সংসদ সদস্য হন।
ক্যান্সারকে জয় করে সৈয়দা হাসনা বেগম ঝুবফধ ঈযড়ফিযঁৎু এখনো বেঁচে আছেন। উনার সাথে এখনো নিয়মিতই কথা হয়।
সৈয়দা হাসনা বেগমকে নিয়ে লিখব। স্বাধীনতার আগে ষাটের দশক থেকে ২০২০ সাল অবধি যে চারজন নারী সংসদ এবং সংসদের বাইরে মৌলভীবাজারের নারী সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তারাঁ হলেন সৈয়দা হাসনা বেগম,বেগম খালেদা রব্বানী,হোসনে আরা ওয়াহিদ ও বেগম নুরজাহান সুয়ারা। এরমধ্যে বেগম খালেদা রব্বানী তিনবার,সৈয়দা হাসনা বেগম ও হোসনে আরা ওয়াহিদ একবার করে সংরক্ষিত আসনের এমপি ছিলেন।
বেগম নুরজাহান সুয়ারা সংসদ সদস্য না হলেও সেই ষাটের দশক থেকে মৌলভীবাজারের সংস্কৃতি ও সামাজিক নেতৃত্বে পুরুষ নেতাদের পাশাপাশি আজো নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। কাজ করেছেন মৌলভীবাজারের প্রজন্ম বিনির্মানে গত প্রায় ৫০ বছর ধরে। একাধারে মৌলভীবাজার শহর তথা এ জেলার সংস্কৃতি অঙ্গন,সামাজিক সংগঠন,গার্লস স্কাউট,মহিলা সমিতি থেকে সর্বত্র আজবধি এ নারী অনবদ্য ভুমিকা রেখে চলেছেন। এ চারজনকে চারমাস আগে এক টেবিলে বসাবার একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। গত মার্চ মাসে। দেশে ছিলাম তখন। সৈয়দা হাসনা বেগম,বেগম খালেদা রব্বানী ও বেগম নুরজাহান সুয়ারা ক্যান্স্যারে আক্রান্ত হোসনে আরা ওয়াহিদকে দেখতে যেতে রাজিও হয়েছিলেন। তারিখ নির্ধারিত হয়েছিল গত ২৫ শে মার্চ। আদরের ছোটভাই মোহনের কাছ থেকে হোসনে আরা ওয়াহিদের নাম্বারও নিয়ে আমি কথা বলেছিলাম। তারিখটা সবার সাথে কথা বলে বেগম নুরজাহান সুয়ারাই ( ঘঁৎলধযধহ ঝঁধৎধ) ঠিক করেছিলেন। বাকী তিন জনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয় প্রায় সময়ই। আমি উমরাহ থেকে ফিরলাম। বিশ্বজুড়ে করোনার প্রকোপ শুরু হলে হঠাৎ আমেরিকায় ফিরে গেলেন সৈয়দা হাসনা বেগম। ক’দিন পর বর্ষীয়ান আওয়ামীলীগ নেত্রী, হোসনে আরা ওয়াহিদ মারা গেলেন,ক্যান্সারের সাথে জীবনের যুদ্ধে হেরে। মৌলভীবাজারের আওয়ামী রাজনীতিতে আব্দুল ওয়াহিদ ও হোসনে আরা ওয়াহিদের অবদান আছে। যাঁদের কথা লিখছি, মৌলভীবাজারের সমাজ ও সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে এ মানুষগুলোর ইতিবাচক ভুমিকা আছে। এই প্রত্যেকটা মানুষকে নিয়ে আলাদা করে লেখবার মতোন কর্মময় জীবন তাঁদের। তাদের কর্মময়তার কিছু বছর আমার চোখে দেখা।
সিলেট বিভাগে বাংলাদেশের সাবেক বা বর্তমান কোন প্রধানমন্ত্রীর কোন ব্যক্তিগত বন্ধু রাজনীতিবীদ থাকলে বেগম খালেদা রব্বানী আছেন। সত্তরের দশকে মৌলভীবাজার সার্কিট হাউসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সরাসরি আহব্বানে তিনি রাজনীতিতে আসেন। জিয়াউর রহমান নিজে তাকে মৌলভীবাজার জেলায় মহিলা দল গঠনের আহব্বান জানিয়ে বিএনপিতে যোগ দেবার আহববান জানান। জেলার একটি উপজেলায় মহিলা দলের সভায় যোগ দিয়ে ফেরার পথে তিনি গুরুত্বর আহত হন। ঢাকায় আহত অবস্থায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তাকে দেখতে যান। এরপর সত্তরের দশকে প্রথমবারের মত মৌলভীবাজার জেলায় কোন নারী মহিলা এমপি নির্বাচিত হন। তিনবার এমপি হওয়া এ নারীর বেগম খালদা জিয়ার ব্যাক্তিগত সম্পর্ক বন্ধুত্বে পৌছেঁছিল। মৌলভীবাজার শহরের ষাটের দশকের সমাজ ও সংস্কৃতি অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব, শহরের ষাটের দশকের ধর্নাঢ্য ঠিকাদার মরহুম গোলাম রব্বানীর স্ত্রী হিসেবে রাজনীতিতে আসা গৃহবধু বেগম খালেদা রব্বানী খালেদা জিয়ার আমলেও দুইবার মহিলা এমপি হন। বহুবার খালেদা জিয়ার সাথে ব্যাক্তিগত সফরসঙ্গী বিভিন্ন দেশ সফর করেন দল ক্ষমতায় এবং বিরোধীদলে। দুজনার ব্যাক্তিগত বন্ধুত্বের সম্পর্ক এখনো বিদ্যমান আছে। ওয়ান ইলেভেনের শুরুতে দলের অন্যতম প্রধান নীতি-নির্ধারক এম সাইফুর রহমান দলের সংস্কারপন্থী অংশে যোগ দিলে মৌলভীবাজার জেলার বিএনপির রাজনীতির বৃহত্তম অংশের নেতৃত্ব নিয়ত্রনে নেন বেগম খালেদা রব্বানী। বেগম খালেদা জিয়া কারামুক্ত হয়ে তাকে যুগ্ম আহবায়ক করে নতুন কমিটি দেন। এম নাসের রহমানকে আহবায়ক রাখা হলেও বেগম খালেদা রব্বানীর বলয়ের নেতারাই ছিলেন প্রায় সব যুগ্ম আহবায়ক পদে। এরপর বেগম খালেদা জিয়া তাঁকে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক করে নতুন কমিটি দেন। বিএনপির গত কেন্দ্রীয় কমিটিতেও বেগম খালেদা জিয়া তাকে কেন্দ্রীয় মহিলা বিষয়ক সম্পাদক করেন। এখন বয়স প্রায় আশির কাছাকাছি। তবু বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে তাকে কেন্দ্রীয় মহিলা দলের প্রধান উপদেষ্টা পদে রাখা হয়েছে। তিন বছর আগ পর্যন্ত ছিলেন জেলার বিএনপির সাধারন সম্পাদক। দলের মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের ধমক দিয়ে দলের রাজনীতি নিয়ে তিনি কথা বলতে পারতেন। কেননা, বেগম খালেদা জিয়ার পাশে বসে তিনি রাজনীতি নিয়ে কথা বলতেন এবং বেগম জিয়া তা শুনতেন। গুরুত্ব ছিল। কখনো দুর্নীতি করেন নি। চাইলে তিনবার এমপি থাকাকালে রাজনীতির প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সম্পদের মালিক হতে পারতেন। অথচ কিছুদিন আগে মৌলভীবাজার শহরের শাহ মোস্তফা সড়কের নিজেদের প্রায় শতবর্ষী বাসার অর্ধেক বিক্রি করেছেন আর্থিক প্রয়োজনে। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আজকের সাধারন সম্পাদক ভিপি মিজানুর রহমান মিজান খালেদা রব্বানীর রাজনৈতিক অনুসারী হিসেবে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে সরাসরি জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মনোনীত হন। এম সাইফুর রহমানের আগ থেকে খালেদা রব্বানী বিএনপির রাজনীতি করতেন। এখনো করেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির রাজনীতিতে সাইফুর রহমানের সাথে দলের অভ্যন্তরে জেলার ক্ষমতার রাজনীতি নিয়ে ক্ষমতাশীন দলের দুই এমপির সাথে দুরত্বের সৃষ্টি হয়। তারা হলেন সাবেক ত্রান প্রতিমন্ত্রী, চারবারের এমপি এডভোকেট এবাদুর রহমান চৌধুরী ও বেগম খালেদা রব্বানী।
ইতিহাসের বিষয় নিয়ে ব্যক্তি-বন্দনার বাইরে গিয়ে নির্মোহভাবে লিখতে হলে একজনকে নিয়ে লিখতে গেলে প্রাসঙ্গিকভাবে সমসাময়িকরা চলে আসেন। সেটা ইতিহাসের দৃশ্যপট টুকু সত্যের অক্ষরে তুলে ধরবার প্রয়োজনেই। তাতে লেখার দৈর্ঘ্য বাড়ে। দীর্ঘ লেখা লিখবার সময়ও হয়ে উঠে না। পাঠকেরও সময় থাকে না দীর্ঘ লেখা পড়বার।
যাহোক প্রসংগে ফিরি। খালেদা রব্বানীর পছন্দের মিজানই তার পথ ধরে অনেককে চমকে দিয়ে খালেদা রব্বানীর পর জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক মনোনীত হন। খালেদা রব্বানীর বিষয়ে যতটুকু লিখলাম, মৌলভীবাজারে বিএনপির রাজনীতির তথা জাগদলের প্রতিষ্টাতা সদস্য ও জেলা বিএনপির বর্ষীয়ান নেতা সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বাদশার মতো নেতারা এসব ঘটনা প্রবাহের চাক্ষুষ সাক্ষী হিসেবে শুধু বেঁচেই নেই, এখনো সক্রিয় আছেন রাজনীতিতে। ভিপি মিজানুর রহমান মিজানকে দলের সাধারন সম্পাদক বানাতে মৌলভীবাজারের যে দুজন বিএনপির কেন্ত্রীয় নেতা মুল ভুমিকা রাখেন তারা হলেন এবাদুর রহমান চৌধুরী ও বেগম খালেদা রব্বানী।
মৌলভীবাজার জেলায় এখন এবাদুর রহমান চৌধুরী জেলার সবচেয়ে প্রবীন পার্লামেন্টারীয়ান। ষাটের দশক থেকে রাজনীতি করা জেলার সবচেয়ে জেন্টলম্যান ও স্মার্ট রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত এই নেতা এখনো সুস্থ শরীরে বেঁচে আছেন। ৬৯ এর গনঅভ্যুত্থানে সরাসরি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতাউত্তোর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জমানায় জেলা (মহকুমা) ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক ছিলেন। পরে জেলা জাসদের সভাপতি। আশির দশকে উপমন্ত্রীর মর্যাদায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হন। এরপর মৌলভীবাজার-১ আসন থেকে চারবারের নির্বাচিত এমপি। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসা তুখোড় পার্লামেন্টারীয়ান। জোট সরকার আমলের ত্রান ও পুর্নবাসন প্রতিমন্ত্রী। বাংলাদেশের ইতিহাসে একই আসন থেকে পরপর দুটি নির্বাচনে দুটো মার্কা নিয়ে জয়ী হবার রেকর্ড বাংলাদেশে দুজন রাজনীতিবিদের। একজন মওদুদ আহমেদ, অপরজন এবাদুর রহমান চৌধুরী। আলোচিত নুরজাহান হত্যা মামলার বরেন্য এ আইনজীবি একজন কবি, ছড়াকার ও একজন সম্পাদক ও লেখকও। আশির দশকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক জনপ্রত্যাশা।
আজকের লেখাটা শুরু করেছিলাম বৃহত্তর সিলেটের এ মুহুর্তের প্রবীনতম সক্রিয় সাংবাদিক এম এ সালামকে নিয়ে। মৌলভীবাজারের সাংবাদিকতায় এম এ সালাম গত ৫০ বছরের ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। কর্কট ব্যাধি ক্যান্সারকে জয় করে তিনি এখনো সক্রিয় সাংবাদিকতায়, সাংবাদিক নেতৃত্বে। সরকার এসেছে,সরকার গেছে। কয়েকটা প্রজন্ম জেলায় সাংবাদিকতা করে বুড়ো হয়েছেন। এম এ সালাম দাপটের সাথে সাংবাদিকতা করেছেন,করছেন।
তাঁর সাথে সক্রিয় সাংবাদিকতা করা মৌলভীবাজারের সাংবাদিকতার দিকপাল শফকতুল ওয়াহেদ, শ্রী রাধিকা গোস্বামী, শ্রীমঙ্গলের সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব, আমার অত্যান্ত ঘনিষ্টজন, শ্রদ্বেয় গোপাল দেব চৌধুরী প্রয়াত হয়েছেন। ধুসর চুলেই ১৬ বছর আগে এম এ সালাম চাচাকে আমি পেয়েছি সাংবাদিকতায় আমার সহকর্মী হিসেবে। ব্যক্তিগতভাবে অভিভাবকের ছায়া আজো পাই তাঁর কাছ থেকে। মৌলভীবাজার জেলা সদরে গত অন্তত ত্রিশ বছরে জীবিকা আর রুটি রুজির অবলম্বন যাদের সাংবাদিকতা, তারা সবাই কোন না কোন ভাবে এই মানুষটির দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। লেখার দৈর্ঘ্য বেড়ে যাচ্ছে জানি। তবু, আমার চোখে দেখা,আমার সাথে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা বলি।
জেলার একজন বর্ষীয়ান, জৈষ্ঠ্য
সংবাদকর্মী তাঁর মৌলভীবাজারের কয়েক দশকের সাংবাদিকতা জীবনের প্রায় পুরোটা স্থানীয়ভাবে এম এ সালামের বিরোধী বলয়ের নেতৃত্ব দিয়েছেন। নব্বই ও শুন্যের দশকে এম এ সালামের সাংবাদিকতার নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে পাল্টা বলয়ের জন্ম দেন সেই প্রবীন সাংবাদিক। অথচ সেই বর্ষীয়ান সাংবাদিক যখন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, তখন সবচেয়ে বড় আর্থিক সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসেন এম এ সালাম। পাশে দাঁড়ান বড় ভাই হিসেবে, একজন সাংবাদিক নেতা হিসেবে। ওয়ান ইলেভেনে দৈনিক আমাদের সময়ে আমার করা একটা নিউজ নিয়ে এম সাইফুর রহমানের পুত্র, তৎকালীন সদ্য সাবেক সাংসদ এম নাসের রহমান আমার ব্যাপারে নালিশ করলেন সাংবাদিক নেতা হিসেবে এম এ সালামের কাছে। এম সাইফুর রহমান আর এম এ সালাম একই এলাকার বাসিন্দা। এম সাইফুর রহমান এম এ সালামকে স্নেহও করতেন। তবু সাইফুর রহমান পুত্র নাসের রহমানের নালিশের জবাবে খুব স্পষ্টভাবে এক কথায় বললেন, কোন সাংবাদিকের প্রকাশিত নিউজের বিচার তো আমি করতে পারব না। সাংবাদিক তার নিউজ করেছে, তুমি প্রতিবাদ পাঠাও।
যদি কখনো কাউকে মৌলভীবাজারের পঞ্চাশ বছরের পেশাদার সাংবাদিকতার ইতিহাসের কোন একটা অধ্যায়ও লেখতে হয়, সেখানে এম এ সালামকে, তার অবদানকে অস্বীকার করা মানে সত্যকে অস্বীকার করা। আব্দুস সালামের দুই সন্তান, সব ভাই বিলেতে প্রতিষ্টিত বহুকাল ধরেই। তিনিও চাইলে প্রবাসী হতে পারতেন বহু আগেই। লন্ডনে আসলেই হা-হুতাশ শুরু করেন দেশে ফেরার জন্য। ডাক্তার দেখাতে এলেও এক সপ্তাহ থেকেই ফিরে যান দেশে।
জীবিত থাকতে বর্ষীয়ান গুনী মানুষদের সন্মান দিতে পারার সংস্কৃতি আমাদের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
অগ্রজ সাংবাদিক Mohammed Fokrul সালাম চাচাকে নিয়ে, লেখবার জন্য প্রায়ই তাড়না দেন।
গত ৫০ বছর ধরে দক্ষিন সিলেটের সাংবাদিকতার অঙ্গনে নিরবিচ্ছিন্ন এবং অনবদ্য অবদান রাখা মানুষটিকে অভিবাদন। ভালো থাকবেন চাচা… আরো বহুকাল অভিভাবকের ছায়া নিয়ে সুস্থ শরীরে বেঁচে থাকুন।
লেখকঃ ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলা ট্রিবিউন এর লন্ডন প্রতিনিধি।