ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
দেশের অন্যান্য জেলা কিংবা শহরের চেয়ে সিলেট বিভাগে বিয়ের খরচ অনেকটা দিগুন। এজেলায় তুলনামূলক বেশি খরচ করতে হয় মেয়ের বাবাকে। সেই খরচের সামর্থ না থাকায় দীর্ঘ দিন ধরে অনেক বাবা তাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারছেন না। সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন তারা। মেয়ের যৌবন পার হলেও মেয়েকে বিয়ে দেয়ার মতো বাবার সামর্থ হচ্ছে না।
করোনা ভাইরাসের সুযোগে প্রবাসী অধ্যুষিত মৌলভীবাজারে সীমিত পরিষরে বিয়ের হিড়িক চলছে। শহর কিংবা গ্রামে অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশে প্রতিনিয়ত বিয়ে হচ্ছে। এতে করে বর ও কনে পক্ষের অভিভাবকরা বড় ধরনের ব্যয় থেকে বাঁচছেন। বিশেষ করে এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা তাদের মেয়েকে পাত্রস্থ করতে পারছেন। এই দৃষ্টি ভঙ্গিকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই আবার এটাকে সুন্নতি বিয়ে বলে মন্তব্য করছেন। করোনার কারনেই বড় ধরনের ব্যয় থেকে রক্ষা পেয়েছেন মেয়ের বাবা।
জানা যায়, গণজামায়াত নিষিদ্ধ থাকায় এবং প্রশাসনের নজর এড়াতে বিয়ের দিন ভোর ৬টায় বর ১০/১৫ জন আত্মীয় স্বজন নিয়ে কনের বাড়িতে হাজির হচ্ছেন এজেলার মানুষ। ঘন্টা দেড়কের মধ্যে বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে চলে আসেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিয়ে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও বরপক্ষ ও কনে পক্ষ সবাই আনন্দিত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার অধিকাংশ বিয়েতে বর পক্ষ আসবাবপত্র টিভি, ফ্রিজ ও সাইকেল চেয়ে নিতে। প্রচলিত ভাষায় এটাকে যৌতুক বলে। এতে কনের বাবার কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়। বর পক্ষের আরেকটি আবদার তাকে ২০০/৩০০ জন বরযাত্রীকে দুপুরের খাবার খেয়ে দিতে হবে। এসব শর্ত পূরণ না করলে বিবাহবন্ধন আর হয়ে উঠে না। যা অনেক কন্যা সন্তানের পিতার জন্য কষ্টদায়ক। যার কারনে নিরবে নিভৃতে কাঁদতে হয় তাদের।
এবিষয়ে সদর উপজেলার জগন্নাথপুরের ফজলু মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “৩ জুলাই শুক্রবার মেয়েকে ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে দিয়েছি। যা স্বাভাবিক সময়ে হলে এতো কম খরচে সম্ভব ছিল না। দীর্ঘ দিন যাবত মেয়ে বিয়ে নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু করোনার মধ্যে বিয়ে দেয়ায় অনেক কম খরচ হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কোন ধরণের ডেকোরেশন করতে হয় নাই, শতশত মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, যার দরুন এ কঠিন সমীকরণে বিবাহ সম্পন্ন করতে না পারায় সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে অনৈতিক কার্যকলাপ। কিন্তু করোনা সব হিসাব নিকাশ পাল্টে দিয়েছে। এখন বিবাহ হচ্ছে তবে আগের মতো আর এতো বেশি শর্ত দেখা যায় না। নিষেধাজ্ঞা থাকায় বন্ধ রয়েছে সব ধরনের গণজমায়েত। এখন আর দেখা যায় না সাঁড়ি সাঁড়ি গাড়ি নিয়ে কমিউনিটি সেন্টার/হোটেলে বর আগমন। চুপি সারে ঘরোয়া পরিবেশে বিবাহের কাজ সম্পন্ন হচ্ছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, মৌলভীবাজার পুরাতন কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী বদরুল ইসলাম বলেন, সীমিত পরিসরে অনেক বিয়ে হচ্ছে। অর্থনীতিক দিক দিয়ে এই বিয়েতে কনে ও বর পক্ষের লোকজন সাশ্রয়ী হচ্ছেন। এটা উভয়ের জন্যই কল্যাণকর।
জেলার সচেতন মহল এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, সীমিত পরিসরে বিয়ে করা বর ও কনে উভয়ের জন্য ভালো। এর মাধ্যমে সমাজ থেকে অসামাজিক কার্যক্রম দূর হবে।
Post Views:
0