মুস্তাকিন মিয়াঃ
ছুটিতে আসা মৌলভীবাজারের প্রায় ত্রিশ হাজারেরও উপরে প্রবাসী করোনা দুর্যোগে আটকে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন। নানা সমস্যায় পড়েছে প্রবাস ফেরত রেমিটেন্স যোদ্ধাদের পরিবার-পরিজন। চলতি বছরে বিদেশ থেকে যারা ছুটিতে এসেছেন, তারা আজ দ্বিমুখী অর্থনৈতিক সংকটে জর্জরিত। একদিকে তাদের কর্মস্থলে বাসা ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক খরচ কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে দেশে এসে তাদের জমাকৃত অর্থ শেষ হওয়ায় অস্বস্তিকর অবস্থায় কাটাচ্ছেন দিন। তাদের অনেকেই এখন দার দেনা করে চলছেন। কেউ আবার জমি কিংবা পরিবারের স্বর্ণ বিক্রি করে সাংসারিক খরচ চালাচ্ছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউই সরকারি কোনো অনুদান পাননি। সমাজে প্রবাসী হিসেবে পরিচিত থাকায় মুখ খোলে কাউকে কিছু বলতেও পারছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে প্রতিনিয়তই মৌলভীবাজারে রেমিটেন্স কমে আসছে। প্রবাসীরা দেশে আসায় এবং প্রবাসে অবস্থানরতরাও কর্মহীন থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারপরেও করোনার ভয়াল থাবায় এ জেলার রেমিটেন্স যোদ্ধারা তাদের পরিবার-পরিজনের জন্য অর্থ জোগান দিতে বিভিন্ন উপায়ে টাকা পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন। করোনা দুর্যোগের কারণে ছুটিতে আসা প্রবাসীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। জেলায় এমনও প্রবাসী রয়েছে, যাদের ছুটিতে আসার পর পাসপোর্ট এবং ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় তারা তাদের প্রবাসের কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারবেন কি না তা নিয়ে রয়েছেন সন্দেহ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মধ্যপ্রাচ্যের ২/১ দেশ প্রবাসীদের নেয়া শুরু করলেও বেঁধে দিয়েছে কঠিন নিয়ম। কর্মস্থলকৃত দেশে গিয়ে তাদেরকে নিজ খরচে উন্নতমানের হোটেলে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টেনে থাকতে হবে। এতেও তাদেরকে বড় অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এটা মরার উপর খড়ার ঘায় পরিণত হয়েছে।
কাতার থেকে ছুটিতে আসা সদর উপজেলার বাসিন্দা মোঃ ইমরানের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, “তিন মার্চ দেশে আসি। ২৫ মার্চ আবার চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে আমার যাওয়া হয়নি। দীর্ঘ দিন দেশে থাকার কারণে এখন আমি চরম অর্থ সংকটের মধ্যে দিন অতিবাহিত করছি। অতিরিক্ত তিন মাস দেশে থাকায় দুই লক্ষ টাকা ঋণ করে চলতে হয়েছে। অন্যদিকে কাতারে আমার অনলাইন বিল জমা হয়েছে তিন হাজার রিয়াল। যা বাংলাদেশী টাকায় ৬০ হাজারের উপরে।
বাবুল মিয়া নামের আরেক কাতার প্রবাসী ৮ নভেম্বর ছুটিতে দেশে আসেন। ছয় মাসের ছুটি থাকলেও তিনি আরো আগে চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাস সব হিসাব পাল্টে দিয়েছে। ছুটি শেষ অনেক আগে, পকেটে নাই টাকা। প্রবাস থেকে এসে এখন পড়েছেন ফাটা বাঁশের চিপায়। ঋণ করেই তাকে চলতে হচ্ছে।
কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ইউনিয়নের দুবাই প্রবাসী কাজল আহমদ বলেন, জানুয়ারীর দিকে ছুটিতে এসে ইতিমধ্যে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভিসার কাগজপত্র ও টিকেট ঠিক করে কিভাবে কর্মস্থলে যাব তা নিয়ে দুচিন্তায় আছি। পাশাপাশি জমাকৃত টাকাও মাস দেড়েক আগে শেষ হয়েছে। ঋণ করে চলছি। কিন্তু সরকারি কোনো ধরনের সহযোগীতা পাইনি।
রাজনগর উপজেলার মশুরিয়া গ্রামের আব্দুল করিম জানান, ৩ মাসের ছুটি নিয়ে সৌদিআরব থেকে ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়ে দেশে আসি। মে মাসে ছুটি শেষ হয়। এখন পর্যন্ত কর্মস্থলে যেতে পারছি না। কবে যেতে পারব তাও ঠিক নেই। প্রবাস থেকে নিয়ে আসা জমাকৃত টাকা ২ মাস আগে শেষ হয়েছে। ঋণ করে সাংসারিক খরব চালাচ্ছি। সরকার থেকে কোনো ধরনের সহযোগীতা পাইনি।
এভাবে জেলার একাধিক প্রবাসীর সাথে কথা বললে তারা সবাই একই কথা বলেন।
Post Views:
0