বিশেষ প্রতিনিধিঃ
কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করে মৌলভীবাজারের বেশিরভাগ কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাস নেয়া হচ্ছেনা। যার কারনে করোনা পরিস্থিতিতে অলস সময় পার করছেন জেলার কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। বেকার থাকায় শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের অপব্যবহার করে অলস সময় পার করছেন। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানগন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা দেখেও না দেখার বান করছেন। আবার কেউ দায়সাড়া ২/১টি ক্লাস ফেইজবুকে আপলোড করে দায় মুক্ত হচ্ছেন।
এদিকে কলেজ ও মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই তৃতীয়াংশ শিক্ষক কর্মস্থল ছেড়ে অনত্র চলে গেছেন। যার কারনে অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে তাদের সাথে সমন্বয় করতে পারছেন না প্রতিষ্ঠান প্রধানগন। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ছিল শিক্ষকরা কর্মস্থলে থেকে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে করোনা পরিস্থিতি সহযোগীতা করার। কিন্তু মৌলভীবাজারের বেশির ভাগ শিক্ষকই এটা করেননি। বিশ্বব্যাপি এ দুর্যোগে তারা বাড়িতে বসেই বেতন তুলছেন।
জেলা শিক্ষা অফিস জানায়, জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা ব্যতিত ৬ উপজেলার ১’শ ৬৫টি বিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ৪৫ বিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস চালুক করেছে। জেলা ২২টি কলেজ অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। তবে অভিভাবকরা বলছেন, এগুলো দায়সাড়া ক্লাস ব্যতিত আর কিছু নয়।
জানা যায়, করোনা আক্রান্তের ১১৪ দিনে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ ৩৬টি ক্লাস কলেজের অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজে আপলোড করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কলেজের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি শিক্ষক কর্মস্থলের বাহিরে অবস্থান করছেন। আবার অনেকেই দায়সাড়া ক্লাস ফেইসবুকে আপলোড দিচ্ছেন। তবে মৌলভীবাজার মহিলা কলেজের অফিসিয়াল ফেইসবুক ফেইজ ঘাটাঘাটি করে ক্লাসের কোনো ভিডিও পাওয়া যায়নি। পৌর শহরের সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজে এ পর্যন্ত মাত্র ২০টি ক্লাস অনলাইনে করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুলাউড়া ডিগ্রী কলেজ, কুলাউড়া ইয়াকুব-তাজুল মহিলা কলেজ, জুড়ী তৈয়বুননেছা খানম ডিগ্রী কলেজ, বড়লেখা ডিগ্রী কলেজ, বড়লেখা নারী শিক্ষা একাডেমী, কমলগঞ্জ সরকারি ডিগ্রী কলেজ ও শ্রীমঙ্গল সরকারি ডিগ্রী কলেজেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার জন্য একাধিকবার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আদৌ তা অনুসরণ করেনি, যা প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন বিরোধী বলে মন্তব্য করছেন জেলার সচেতন মহল।
একাধিক অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, “কতিপয় শিক্ষকের উদাসিনতার কারনে মৌলভীবাজারে অনলাইন ক্লাস প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নেয়নি। যার কারনে অনেক শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছেন।
সৈয়দ শাহ মোস্তফা কলেজের অধ্যক্ষ মুশফিকুর রহমান বলেন, অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তবে এপর্যন্ত কতটা ক্লাস নেয়া হয়েছে সে প্রশ্নের উত্তর তিনি দিতে পারেননি। কলেজের অফিসিয়াল ফেইসবুক আইডিও উনার জানা নেই।
মৌলভীবাজার সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, মাউশির নির্দেশনার আলোকে অনলাইন ক্লাস চলছে। কোভিড-১৯ সঙ্কটে শিক্ষকের তুলনায় অনেক কম ক্লাস হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ১০ শতাংশ শিক্ষক ব্যতীত সবাই মৌলভীবাজারের বাহিরের। কোভিড-১৯ তারা সবাই নিজ বাড়িতে চলে যান। যার কারনে অনেকের সাথে সমন্বয় করা কঠিন হচ্ছে। তবে অধিকাংশ শিক্ষক বাড়িতে বসেও অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। সংকটকালীন সময়ে জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সহযোগীতা করার কথা ছিল কিন্তু আপনার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তো করেন না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা শিক্ষা অফিসার এম এ ওয়াদুদ বলেন, শুরু থেকেই আমরা এ বিষয়ে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে কোনো শিক্ষক আন্তরিকতার সহিত না করলে আমাদের কি করার আছে। তারপরেও আমাদের তদারকি অব্যাহত আছে।
Post Views:
0