সরওয়ার আহমদ ঃ
জঙ্গঁলে আগুণ লাগলে সে আগুণ যখন সর্বব্যাপী এবং সর্বগ্রাসী হয়ে উঠে তখন তার ভয়াবহতা টের পাওয়া যায়। আগুণের লেলিহান শিখায় দগ্ধ হতে হয় মহীরুহী বৃক্ষ থেকে শুরু করে আগাছা পরগাছা সহ যাবতীয় উদ্ভিদকে। অগ্নি জিহ্বা থেকে রেহাইপেতে তখন অরণ্যক প্রাণীকূল নিরাপদ অবস্থানের দিকে ধাবিত হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম দেখা দেয় কীটপতঙ্গের মধ্যে। ফড়িঙ্গঁ উঁহপোঁকা থেকে শুরু করে যাবতীয় কীটপতঙ্গ ঝাঁক বেঁধে নেচেগেয়ে ধাবিত হয় অগ্নিকু-লীর দিকে। এক পর্য্যায়ে নির্বিকার কিংবা মোহাছন্ন হয়ে তারা অগ্নিবলয়ে ঝাঁপ দিয়ে ছাঁই ভষ্মের পরিণতি বরণ করে। অগ্রোৎপাতের এসমস্থ পতঙ্গেঁর মতোও ভাইরাস আগ্রাসনের মুখে এক শ্রেণীর মানুষ যে স্বপ্রণোদিত হয়ে মৃত্যু গহ্বরে ঝাপ দিতে পারে, তার উদাহরণ তৈরী হয়েছে চলমান করোনা ভাইরাসের দুর্নিবার অভিযানের প্রেক্ষাপটে। গোটা বিশ্বকে থমকে দেওয়ার মতো মহা পরাক্রমশালী করোনা ভাইরাস যখন চীন সীমান্ত অতিক্রম করে পশ্চিমা বিশ্বে হানা দেয়, তখনও এ উপসর্গকে নস্যিতুল্য গণ্য করা হয়েছে। সংক্রমণ রোধে বিভিন্ন দেশের সরকার যখন তারস্বরে হুসিয়ারী উচ্চারণ করে চলেছিলো, তখনও সে হুসিয়ারী সংকেত এক শ্রেণীর মানুষের কর্ণকুহরে প্রবেশ করেনি। আমেরিকা, ইতালী, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যের পর্য্যটনস্পট, ক্যাসিনো, বারবণিতা অঙ্গঁণ এবং নাইট ক্লাব গুলোতে চলছিলো নরক গুলজার সমাচার। মদ্যপ অর্ধনগ্ন এবং নগ্নিকাদের দাপাদাপিতে করোনা ভাইরাসকে মনে হয়েছিলো নস্যিতুল্য। এই দাপাদাপির মধ্যেই করোনা ভাইরাস তার সক্রমণের মোক্ষম পথ আবিস্কার করতে সক্ষম হয়। দেশে দেশে করোনা থাকায় বনিআদমকূল যখন কাতারে কাতারে অক্কা পেতে শুরু করলো, তখন বিলম্বিত বোধোদয় ঘটলেও বলা যায়-“যা হইবার তা হইয়া গেছে”। আণবিক শক্তিধর বিশ্বকে ভ্রƒকুটি প্রদর্শন করে ক্ষুদ্র এ ভাইরাস গোটা বিশ্বকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে। নিরীহ পাবলিক থেকে শুরু করে সুপার পাওয়ার রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট প্রধামন্ত্রী সহ ভি ভি আইপি দেরকেও খাতির করছে না। তারপরও স্থানে স্থানে একশ্রেণীর “মানব পতঙ্গের” দাপাদাপির কি কমতি আছে? এ প্রসঙ্গে গ্রামীণ কেচ্ছা হিসেবে ষাড় এবং বাঘের কা-টি মনে পড়ে। কিশোর বয়সে এ কেচ্ছাটি শুনেছিলাম এক দাদার মুখে। গ্রামের এক হবু কৃষক আলাল মিয়া আয়েশ করে দুলাল হিসেবে পুষেছিলেন এক ষাঁড়কে। অতিযতনে চারবছরের মাথায় ষাড়টি বেড়ে উঠেছিলো ধারণাতীত ভাবে। গতরে এবং অবয়বে যৌবনের বেসামাল ছাপ থাকায় ষাঁড়টি নিজ প্রজাতিকে হেনস্তা করার পাশাপাশি শিং দিয়ে উচু আল উপড়ে ফেলে, গাছ দেখলে টেস দিয়ে দেয়। শক্ত রসি দিয়ে বাধলে রসি ছিড়ে ফেলে। কা-কীর্ত্তি গুণে আলাল মিয়ার ষাঁড়রূপী দুলালটি এলাকায় কিংবদন্তী হয়ে উঠে। একদিন নিকটবর্তী পাহাড় থেকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার লোকালয়ে ছুটে এসেছিলো শিকারের ধান্ধায়। বাঘের উপস্থিতি টেরপেয়ে মাঠের ছাগল, ঘোড়া, গরু এবং মহিষ যখন লম্বাদৌড়ে পালাচ্ছিল তখন হামবড়া ষাড়টি নিজ অবস্থানেই ঘাড়বাকিয়ে অনড় ছিলো। শিকারী বাঘ যখন ষাড়ের কাছাকাছি চলে আসে তখনও ষাঁড়ের চাইতে ছোট আকৃতির বাঘকে ষাঁড়টি পরোয়া করেনি। বরং গর্জন দিয়ে এবং শিংবাকিয়ে বাঘকে ধাওয়া করেছিলো। বাঘ তখন কৌশল অবলম্বন করে ষাঁড়ের সম্মুখ থেকে হঠে গিয়ে পেছন দিকে ষাঁড়ের লেজটি ধরে ফেলে। পরপর তিনটি ঘুরান্টি দেওয়ার পর বেপরোয়া ষাঁড়টি চিৎপটাং অবস্থায় ধরাশায়ী হলে বাঘ তার স্বভাব সুলভ হিং¯্রতা নিয়ে ষাঁড়ের শাসিতে কামড় বসায়। বেকুব ষাঁড় তখন ঠ্যাং ও মাথা দিয়ে নিষ্ফল চাটাচাটি করে বাঘকে চিনলেও জীবন বাচাতে পারেনি। করোনা আগ্রাসনের মুখে দেশ দুনিয়ার অবস্থাটিও ষাঁড় এবং বাঘের দৃশ্যপটের মতো প্রতীয়মান হচ্ছে।
চলবে-
বাঘ চিনেনা ষাঁড়ে…
