বিশেষ প্রতিনিধঃ
মুজিব শত বর্ষকে সামনে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারী সেবা মানুষের দৌঁড়গোড়ায় সহজে পৌঁছে দিতে ইতিমধ্যে নানা পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। এ আলোকে সচিবালয় থেকে নির্দেশনা এসেছে জেলা উপজেলা পর্যায়ে। কিন্তু মৌলভীবাজারের প্রশাসন ব্যবস্থা চলছে সম্পূর্ণ উল্টো। সকাল ৯টায় অফিসে উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও বেলা ১১টা পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। আবার কয়েকটি অফিসে ১১টা পর্যন্ত তালাও ঝুলতে দেখা গেছে। বছরের প্রথম রোববার মৌলভীবাজারের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের একাধিক অফিসের এমন চিত্র ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, যে যার মতো করে অফিসে আসছে এবং বাসায় ফিরছে। এ জেলায় কর্মস্থলে যোগদান ও প্রস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হচ্ছে।
এসময় দেখা যায় একাধিক অফিসের সেবা গ্রহীতারা বাহিরে দাড়িয়ে কর্মকর্তাদের অপেক্ষা করছেন। ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থাকার পরও কর্মকর্তারা না আসায় অনেকেই ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিন রোববার সকাল ৯টা ৩৪ মিনিটে শ্রীমঙ্গল রোডস্থ সমবায় আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে গেলে দেখা যায় মামুন নামের এক প্রশিক্ষক টেবিলে বসে সিগারেট টানছেন। অফিস প্রধান কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্যার ছুটিতে আছেন”। ৯টা ৩৮ মিনিটে বিসিক শিল্পনগরীতে গেলে দেখা যায় শিল্প নগরী কর্মকর্তা অনুপস্থিত। উনি কোথায় আছেন জানতে চাইলে দারোয়ান আতাউর রহমান বলেন, “স্যার ঢাকায় আছেন”। ৯টা ৪৫ মিনিটে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গেলে দেখা যায় পিয়ন বাবুল মিয়া ও ড্রাইভার ব্যতীত আর কেউই আসেননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মালেকা পারভীন কোথায় জানতে চাইলে পিয়ন বাবুল মিয়া বলেন, “ম্যাডাম ঢাকা থেকে আসতেছেন, রাস্তায় আছেন”। ৯টা ৫০ মিনিটে পানি উন্নয়ন বোর্ডে গেলে দেখা যায় একজন পিয়নও এখন পর্যন্ত আসেনি। অফিস কখন খোলা হয় বদরুল নামের এক আনসার সদসস্যের কাছে জানতে চাইলে সে বলে, “১০টা পরে সবাইকে পাওয়া যাবে”। ৯টা ৫৫ মিনিটে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে গেলে দেখা যায় দুজন মহিলা কেবলমাত্র অফিস ঝাড়– দিচ্ছেন। নির্বাহী প্রকৌশলী আছেন কিনা হিসাব শাখার আব্দুশ শহিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “স্যার আসতে দেরি হবে”। বেলা ১০টায় সদর উপজেলা ভুমি অফিসে গেলে দেখা যায়, হেল্প ডেক্সে বসে অফিস পিয়ন নুনু মিয়া সিগারেট টানছেন, ভুমি কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ কোথায় জানতে চাইলে বলেন, “স্যার এখনও আসেননি, ঘন্টাখানিক সময় লাগবে”। এসময় পার্শ্ববর্তী সাবরেজিষ্ট্রার অফিসে গেলে অফিস পিয়ন খালেদ বলেন, স্যার এখনও আসেননি”। ১০টা ১০ মিনিটে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলে দেখা যায় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র দাস এখনও আসেননি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে আজাদ নামের এক অফিস স্টাফ বলেন, স্যার রাস্তায়, আসতেছেন, ঘন্টাখানেক সময় লাগবে”। ১০টা ১৫ মিনিটে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসে গেলে দেখা যায় জেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক অনুপস্থিত। কোথায় আছেন জানতে চাইলে উনার পিও সায়েম বলেন, স্যার ঢাকা থেকে আসতেছেন”। একই ভবনের নিচ তলায় জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আদিল মোত্তাকিনকেও এসময় অফিসে পাওয়া যায়নি। কোথায় আছেন জানতে চাইলে আবুল কাশেম নামের এক অফিস স্টাফ বলেন, স্যার বাসা থেকে ডিসি অফিসে মিটিংয়ে চলে গেছেন। ১০টা ৩৫ মিনিটে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গেলে দেখা যায় কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোতাহার বিল্লাহ অনুপস্থিত। কোথায় আছেন জানতে চাইলে অফিস স্টাফ বলেন, “স্যার চট্টগ্রামে ছুটিতে আছেন”। ১০টা ৪০ মিনিটে উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে গিয়ে অফিস প্রধান জিতেন্দ্র সরকারকে পাওয়া যায়নি। এসময় তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে পরিচয় গোপন রেখে কল দিলে তিনি বলেন, “আমি বাসাতে আছি, ব্যাংকের কাজ শেষ করে অফিসে আসতে ১২টা হবে”। ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত উপজেলা মাধ্যমিক অফিস তালা বদ্ধ অবস্থায় দেখা যায়। পূর্বের সময় নির্ধারণ করে দেয়া একাধিক সেবা গ্রহীতাকে এসময় দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। ১১টা পর্যন্ত একজন পিয়নও অফিস খোলেনি।
এবিষয়ে জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি ভিডিও কনফারেন্সে আছেন বলে কথা বলতে রাজি হননি।
মৌলভীবাজার-হবিগঞ্জ সংরক্ষিত আসনের মহিলা সংসদ সদস্য সৈয়দা জহুরা আলাউদ্দিন বলেন, এটা কোনো অবস্থাতে কাম্যনয়। সরকার তাদেরকে বেতন দিচ্ছে কিন্তু তারা সময় মতো অফিসে আসছে না এটা কোনো অবস্থাতে মেনে নেয়া যাচ্ছে না। এরকম কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।