রাজনগর প্রতিনিধিঃ
হাইকোর্টের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার শালকাটুয়া ও মাঝের বান্দ জলমহাল থেকে মাছ লুট করছে একটি সংঘবদ্ধচক্র। ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ আহরণ করে বিক্রি করলেও এখনও প্রশাসন উদাসিন। এ পর্যন্ত মাছ বিক্রি বন্ধ করতে প্রশাসনের কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। দিনে-দুপুরে মাছ আহরণ ও বিক্রি করছে ওই চক্র। অভিযোগ রয়েছে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারই পরোক্ষভাবে মাছ বিক্রেতাদের সহযোগীতা করছেন। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারাও আড়াল থেকে ওই মাছ লুটের সাথে জড়িত।
এবিষয়ে রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌসি আক্তার বলেন, “মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা পাওয়ার আগেই খাস কালেকশন দিয়েছি। এখন কিভাবে খাস কালেকশন বাতিল করা যায় সে বিষয়ে বিজ্ঞ আইনজীবির মাধ্যমে পরামর্শ করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেব”। “এই সুযোগে তো একটি চক্র লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ লুট করে বিক্রি করছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাছ ধরা বন্ধ করার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব”।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২৪ অক্টোবর জেলা প্রশাসন রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌসি আক্তারকে চিঠি দিলেও এখন পর্যন্ত তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। এই সুযোগে মাছ লুট চক্র দেদারছে মাছ বিক্রি করছে।
জানা যায়, সরকার ও রাজনগর শাহ মুরাদ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির মামলা চলমান থাকাবস্থায় গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাজনগর উপজেলার ওই বিল দুটি খাস কালেকশনের জন্য জেলা প্রশাসন রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠি দেন। জেলা প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে শাহ মুরাদ মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক পিন্টু সুলতান হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন মামলা দায়ের করেন (৯২৯৯/২০১৯নং)। পরবর্তীতে হাইকোর্ট শুনানি শেষে ১৪ অক্টোবর ৬ মাস স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন এবং পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত জলমহাল দুটির খাস আদায় কার্যক্রম স্থগিত রাখার কথাও বলেন। এই রিট পিটিশন হাইকোর্টে রোল জারির পর শাহ মুরাদ মৎসজীবী সমবায় সমিতি লি: এর সাধারণ সম্পাদক মো. পিন্টু সুলতান জলমহাল দুটির ইজারা কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা সহকারি ভূমি অফিসারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন জলমহাল দুটির খাস কার্যক্রম স্থগিত রাখার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু অদৃশ্য কারণে গত ১০ অক্টোবর দুপুরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা ভূমি অফিস এবং ১৫ অক্টোবর দুপুরে গুলশান মৎসজীবি সমবায় সমিতিকে মাঝেরবান্দ ও আল বারাকা মৎসজীবি সমবায় সমিতিকে শালকাটুয়া বিল ইজারা দেয়। এদিকে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন হাইকোর্ট ও জেলা প্রশাসনের নির্দেশনা না মানার কারণ তলব করেছিলেন রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। এটায়ও কোনো কাজ হয়নি। অনুসন্ধানে জানা গেছে এগুলো সবই একই সুতায় গাতা।
সরেজমিন রোববার বিকালে শালকাটুয়া ও মাঝের বান্দ জলমহালে গিয়ে দেখা যায়, মুজাহিদুল ইসলাম, আবুল হাসনাত, ফজলুল হক নিরু, আব্দুস ছালাম মধু, আব্দুল লতিফ, আলী নেওয়াজ ও জয়েদ মিয়া মাছ বিক্রি করছেন। এসময় তারা প্রতিবেদককে বলেন, “উভয় বিল মিলে ৭৮ লক্ষ টাকা দিয়ে খাস কালেকশন নিয়ে বিল থেকে মাছ ধরছি। মাছ ধরতে বিল দুটিতে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, আমাদের টাকা ফেরৎ দিলে আমরা বিল থেকে মাছ ধরব না”।
এসময় এক ইজারাদার প্রতিবেদককে বলেন, দুই বিল মিলে দুটি গ্রুপ রয়েছে। একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন মুজাহিদুল ইসলাম। অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন আবুল হাসনাত। মুজাহিদুল ইসলাম ক্ষমতাসীন দলের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের বিষয়টি দেখছেন।
এদিকে ইজারাদাররা স্থিতাবস্থা প্রত্যাহারের জন্য বিগত ২৪ অক্টোবর সুপ্রীম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে পিটিশন মামলা দায়ের করে (মামলা নং ৩০৯৭/২০১৯)। পরবর্তীতে সুপ্রীম কোর্ট ৮ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ইজারাদারদের প্রমাণাদি না থাকায় মামলা ডিশমিশ করে এবং পূর্বের ৬ মাসের স্থিতাবস্থা বহাল রাখা হয়। কিন্তু তার পরেও হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ইজরাদাররা মাছ লুট করছে।
মামলারবাদী শাহ মুরাদ মৎসজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ পিন্টু সুলতান বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আইনের তোয়াক্কা না করে হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিলের মাছ আহরণ করা হচ্ছে। এই মাছ লুটের সাথে রাজনগর উপজেলা প্রশাসন ও সরকার দলের নেতাকর্মীরা জড়িত।
Post Views:
0