স্টাফ রিপোর্টারঃ পাবলিক প্লেস কিংবা গণপরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ থাকলেও মৌলভীবাজারে এই আইনের বিন্দুমাত্র প্রয়োগ নেই। বরংচ দেখা গেছে একাধিক জনসমাগমের স্থানে কিংবা কর্মস্থলে উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে সবাই প্রকাশ্যে ধূমপান করছেন। ফলে রাস্তায় চলাচলরত বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী ও অধূমপায়ী জনসাধারণকে কষ্ট ভোগ করতে হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০৫ সালে এ আইন প্রণয়নের পর থেকে এ পর্যন্ত এক বারও মৌলভীবাজারে এ আইনের প্রয়োগ দেখা যায়নি। যার কারণে প্রতিনিয়ত লাগামহীনভাবে আইনের প্রতি অশ্রদ্ধা বাড়ছে এবং ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে উড়তি বয়সী যুবকরা।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস, গ্রন্থাগার, লিফট, আচ্ছাদিত কর্মক্ষেত্র, হাসপাতাল ও ক্লিনিক ভবন, আদালত ভবন, বিমানবন্দর ভবন, সমুদ্রবন্দর ভবন, নৌ-বন্দর ভবন, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বাস টার্নিমাল ভবন, প্রেক্ষাগৃহ, প্রদর্শনী কেন্দ্র, থিয়েটার হল, বিপণী ভবন, চতুর্দিকে দেয়াল দ্বারা আবদ্ধ রেস্টুরেন্ট, পাবলিক টয়লেট, শিশুপার্ক ও মেলায় ধূমপান করা যাবে না। কিন্তু মৌলভীবাজারে এর কোনোটিই মানা হচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এজেলার ধূমপায়ী দুই তৃতীয়াংশ লোক এ আইন সম্পর্কে অবগত নয়। একাংশ লোক জানলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় এটা মানছে না। বাস, সিএনজি কিংবা অন্যান্য গণপরিবহনে সব সময় ধূমপান চলে। কেউই আইন মানছেন না।
বুধবার দুপুরে সরেজমিন কোর্ট এলাকায় গেলে দেখা যায়, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা, মহিলা ও সরকারি কলেজের সামনে ও ভূমি অফিসের আশপাশে প্রকাশ্যে ধূমপান চলছে। এসময় দেখা যায়, কোর্ট এলাকার বিভিন্ন ভবনের কর্ণারে সিগারেটের খুসার স্তুপ জমে আছে। সরকারি বিভিন্ন অফিসের বারান্দায় সিগারেটের খুসা পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এদিকে মঙ্গল ও বুধবার মৌলভীবাজার পৌর শহরের চৌমুহনী, প্রেসক্লাব চত্বর, বেরিরপার, ঢাকা বাসস্ট্যান্ড, কুসুমবাগ এলাকা, বড়হাট, সরকারি কলেজ, চাঁদনীঘাট ও সেন্ট্রাল রোডসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় প্রকাশ্যে পথচারীরা ধূমপান করছেন। বিশেষ করে উড়তি বসয়ী যুবকরা প্রকাশ্যে ধূমপানে বেপরোয়া।
এসময় চৌমুহনী এলাকায় মধু মিয়া নামের এক ধূমপায়ীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে ধূমপান করা যে অপরাধ সেটা আমার জানা নেই। কুসামবাগ এলাকায় রহমান আলী নামের আরেক যুবক বলেন, সবাই তো দেখি প্রকাশ্যে ধুমপান করছে। কেউতো বাঁধা দেয়নি। তাই আমিও করছি।
আইনে বলা হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বা তার সমমানের কর্মকর্তারা জরিমানা করতে পারবেন। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার বিনেন্দু ভৌমিক বলেন, “এ আইনে জরিমানা করার ক্ষমতা যে আমাদের দেয়া হয়েছে সেটা আমার জানা নেই”। কখনও অভিযানও করিনি।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে বলা হয়েছে, ধূমপায়ীদের জন্য শহরে আলাদা জায়গার ব্যবস্থা করে দেয়ার। কিন্তু মৌলভীবাজার জেলার কোথায়ও এটা করা হয়নি।
এডভোকেট আব্দুল মতিন চৌধুরী বলেন, কোর্টে প্রতিনিয়ত কয়েক শতাধিক লোক প্রকাশ্যে ধূমপান করেন। অথচ এই এলাকায় দুটি কলেজ, ১টি স্কুল, গণগ্রন্থাগার ও শিল্পকলা একাডেমী রয়েছে। কিন্তু এখানে আইনের প্রয়োগ নেই। নোমান আহমদ নামের এ শিক্ষক বলেন, এ আইন সম্পর্কে মৌলভীবাজারের প্রশাসন উদাসীন।
জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, দ্রুত মৌলভীবাজারে এ আইনের প্রয়োগ না হলে ক্রমাগত প্রকাশ্যে ধূমপানের মাত্রা বাড়বে। ফলে অধূমপায়ীরাও নানা রোগে আক্রান্ত হবেন।