ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
২০১৭ সালের ২৯ মার্চ। দেশ-বিদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল মৌলভীবাজারের নাসিরপুর ও বড়হাটের জঙ্গি আস্তানা। ওই দুই বাড়ির জঙ্গি আস্তানায় হয়েছিল অপারেশ হিটব্যাক আর ম্যাক্সিমাস। অভিযানের সময় দুই বাড়িতে পুলিশের সাথে জঙ্গিদের বিস্ফোরণ ঘটে এবং ব্যাপক গুলাগুলি হয়। অভিযানে আত্মহত্যা করে ১০ জঙ্গি। এদের মধ্যে ছিল নারী, নাবালক কন্যা এমনকি ১ মাসের শিশুও। আলোচিত নাসিরপুর ও বড়হাটের জঙ্গি অভিযানের দুই বছর পূর্ণ হলেও এখনও নিহত ২ জঙ্গির পরিচয় শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদককে বলেন খুব শ্রীঘ্রই তাদের পরিচয় শনাক্ত করা হবে। অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সনশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম।
নাসিরপুর ও বড়হাটে জঙ্গি বিরোধী অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা দুটি বিস্ফোরক মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে ক্রিমিনাল ইনভেস্ট্রিগিশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এর কাছে। নাসিরপুরের মামলার তদন্তের দায়িত্বে আছেন জেলা সিআইডির ওসি মোঃ আব্দুস ছালেক (মামলা নং ০১)। মামলায় নিহত ৭জনকে আসামী করা হয়েছে। ঘটনার পরপরই ৭জনের পরিচয় সনাক্ত হয়েছে। তারা নব্য জেএমবির সদস্য ছিল বলে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন। তবে বড়হাটের ‘জঙ্গি আস্তানায়’ নিহত ৩ জঙ্গির মধ্যে ১ জনের লাশ শনাক্ত করেছেন নিহত আশরাফুল আলম নাজিমের মা মনোয়ারা বেগম। বাকী ২ জনের পরিচয় এখনও শনাক্ত হয়নি। এঘটনায়ও ৩ জনকে আসামী করে এসআই তাপস চন্দ্র পাল বাদী হয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ০৩)। তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাশ বলেন, পরিচয় শনাক্ত করার জন্য নিহত দুই জঙ্গির আলামত সংগ্রহ করে ডিএনএ টেস্টের জন্য কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সনশনাল ক্রাইম ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ ধারণা করছে ২ জনের বাড়ি খাগড়াছড়ি অথবা ময়মনসিংহে হতে পারে। এই আলোকে মংয়মনসিংহ থেকে সন্দেহবাজন একটি পরিবারকে চিহ্নিত করে ডিএনও টেস্টের জন্য তাদের রক্ত ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তাত আরো বলেন, ঢাকায় সংগ্রহকৃত জঙ্গিদের ডিএনএর নমুনা ক্রস ম্যাচিং চলছে।
সিআইডি জানায়, ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সকাল ৬টা থেকে ৩০ মার্চ রাত ৮টা পর্যন্ত নাসিরপুরের আস্তানায় অপারেশন হিটব্যাক চলে। অপারেশন হিটব্যাকে জঙ্গিরা নিজেরাই বোমা ফাটিয়ে আত্মহত্যা করে। পরে ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে ৭জনের লাশ সনাক্ত করা হয়। তারা হলেন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ডাঙ্গাপাড়ার হাজি নুরুল হোসেনের ছেলে লোকমান হোসেন। তার স্ত্রী শিরিনা আক্তার (৩৫)। তাদের সন্তান ১৪বছরের মেয়ে আমেনা আক্তার, ১২ বছরের মেয়ে সোমাইয়া, ১০ বছরের ফাতেমা, ৭ বছরের মরিয়ম ও ১০ মাসের অজ্ঞাতনামা শিশু। তারা বড়হাটের আত্মঘাতি ৩ জঙ্গীর আত্মীয়। বড়হাটের জঙ্গিদের মাধ্যমেই নাসিরপুরে জঙ্গিরা আস্তানা তৈরী করে। পৌর শহরের বড়হাটে কাউন্টার টেররিজম এন্ড ট্রান্সনশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা অপারেশন ম্যাক্সিমাস পরিচালনা করে। অভিযানে বাড়ির ভীতরে থাকা ৩ জঙ্গি নিহত হয়। এপর্যন্ত ১ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এখনও আত্মঘাতি এক নারী ও পুরুষ জঙ্গির পরিচয় শনাক্ত হয়নি। একটি সূত্র বলছে পুলিশ বড়হাটের জঙ্গিদের পরিচয় শনাক্ত করতে অনেকটা হিমশিম খাচ্ছে। আদৌ কি জঙ্গিদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে কিনা এনিয়ে জেলার সাধারণ মানুষে মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।
উল্লেখ্য মৌলভীবাজার খলিলপুর ইউনিয়নের ‘নাসিরপুরে’ ও পৌর শহরের ‘বড়হাটে’ সোয়াতের অপারেশন হিটব্যাক ও ম্যাক্সিমাসের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সকাল থেকে অভিযান শুরু হয়ে ৩দিন পর সফলতার মুখ দেখে পুলিশের বিশেষায়িত ‘সোয়াত টিমে’র সাহসিকতায়। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ সকাল ৬টায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে দুটি বাড়ি ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। পরে ঢাকা থেকে আসে সোয়াত দল। রুদ্ধশাস ৮২ ঘন্টার অভিযানে কোন বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সফল সমাপ্তি ঘটে।
এবিষয়ে সিআইডির ওসি আব্দুস ছালিক বলেন, “উভয় মামলার তদন্ত চলছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশের আলোকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে”।
এখনও সনাক্ত হয়নি ২ জঙ্গির পরিচয়
