স্টাফ রিপোর্টার:
পাট শিল্পের সাথে বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জড়িত। দেশীয় সংস্কৃতি ও কৃষ্টির সাথে মানানসই পাট ও পাটজাত পণ্য দেশে যেমন গুরুত্বের দাবিদার, তেমনি বিশ্ব বাজারেও এটি এখন অনন্য পরিবেশ-বান্ধব পণ্য হিসেবে সমাদৃত। ২০০০ সালের পূর্ব পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলায়ও পাট চাষের অনেক কদর ছিল। পাট চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছিলেন অনেক কৃষক। কিন্তু এরপর থেকে পাট শিল্প বিকাশ ও বাণিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প এখন মৌলভীবাজার থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এদিকে স্থানীয় প্রশাসন দিবসটি পালনের মধ্যেই কর্মসূচি সীমাবদ্ধ রেখেছে।
জানা যায়, ১৯১৫-২০ সালে মৌলভীবাজারের মনুমুখ নামক স্থানে ভারতের মারোয়ারীদের উদ্যোগে পাট শিল্প গড়ে উঠে। সেখানে ৮-১০টি পাট প্রক্রিয়াজাত কারখানাও গড়ে উঠেছিল। তখন পাট শিল্পের কাচামাল হিসেবে কাঁচা পাটের অনেক চাহিদা ছিল। ওই কাচা পাটের যোগান দিতে মৌলভীবাজার সদর, কুলাউড়া, রাজনগর, বালাগঞ্জ, নবীগঞ্জ, জুড়ী, বড়লেখা, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গলসহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকরা পাটের চাষাবাদ করতেন। উৎপাদিত পাট কৃষকরা কুশিয়ারা তীরবর্তী মনুমুখ ও সরকারবাজার এনে বিক্রি করতেন। বৃহত্তর সিলেট বিভাগরে মধ্যে মৌলভীবাজারের সরকারবাজার পাটের বিপনন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হতো। ওই পাট কারখানা থেকে উৎপাধিত পণ্য নারায়নগঞ্জ এবং লন্ডনের ডান্টিতে চলে যেত। ১৯৬৫ সনের পাক ভারত যুদ্ধের পর মারোয়ারী ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ ত্যাগ করায় মৌলভীবাজারে পাট শিল্পের প্রথম ধস নামে। অতপর নদী ভাঙ্গনের মুখে মনুমুখের পাট শিল্প স্থাপনা নদী গর্ভে তলীয়ে যাওয়ার পর এখানে পাট শিল্পের ইতি ঘটে। ফলশ্রুতিতে পাট চাষিরা তাদের উৎপাদিত পাট বাজারজাত করতে না পারায় স্থানে স্থানে পাঠ চাষের ভাটা পড়ে।
বর্তমানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে পুরো জেলায় বাণিজ্যিক ভাবে কোথায়ও পাট চাষ হচ্ছে না। তবে বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু এলাকায় শাক হিসেবে খাওয়ার জন্য স্থানীয় কৃষকরা সামান্য চাষ করছেন।
এবিষয়ে মেসার্স রবিউল ইসলাম রাসেল পাট ও হস্তশিল্প এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী রবিউল ইসলাম রাসেল বলেন, পর্যাপ্ত কাচামাল না থাকায় পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দেশব্যাপি পাট পণ্যের অনেক চাহিদা রয়েছে। তিনি আরোও বলেন, পুঁজি ও প্রশিক্ষণের অভাবে এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারছিনা।
এদিকে জাতীয় পাট দিবস উপলক্ষ্যে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালী বের হয়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমানের নেতৃত্বে র্যালীটি শহর প্রদক্ষিণ করে পুণরায় একই জায়গায় এসে শেষ হয়। এতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন অংশ নেয়।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রোকন উদ্দিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিছবাহুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য হুসনে আরা ওয়াহিদ ও শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদ সহ অন্যান্যরা।
মৌলভীবাজারের পাটের কদর ছিল লন্ডনের ডান্ডিতে
