কুলাউড়া প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কুলাউড়া উপজেলার একটি হত্যা মামলায় ১২ আসামীকে যাবতজীবন কারাদন্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের সশ্রম কারাদন্ড দিয়েছেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় সন্দেহবাজন ২ জন আসামীকে বেকাসুর খালাস দিয়েছেন।
জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হাসান শহিদ ফেরদৌস ২৫ ফেব্রুয়ারী এ রায় দেন। রায়ে সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন, (১) মোঃ সিপার আহমদ (২) সেফুল আহমদ, পিতা মৃত তোতা মিয়া (৩) আপ্তাব মিয়া, পিতা মাখন মিয়া (৪) মোঃ সাইফুল ইসলাম, পিতা কামরুল ইসলাম (৫) অজয় দেব, পিতা সুশীল দেব (৬) জামাল আহমদ, পিতা কামরুজ্জামান (৭) মোঃ সেবু আহমদ, পিতা আতাউর রহমান (৮) মোহাম্মদ বাপ্পি, পিতা মৃত কবির মিয়া (৯) মোঃ বিলাল হোসেন, পিতা লিয়াকত আলী (১০) মোঃ সিরাজ উদ্দিন, পিতা মিনহান উদ্দিন (১১) সাহাব উদ্দিন, পিতা কলিম উদ্দিন ও (১২) মোঃ সুজন মিয়া, পিতা মনাইল উল্ল্যা।
মামলার দায় থেকে খালাস প্রাপ্ত সন্দেহ বাজন আসামীরা হলেন, (১) মিলন বাক্তি, পিতা মৃত স্বপন কুমার বসত ও (২) শিপন মিয়া, পিতা মৃত মতিন মিয়া।
মামলার রায় থেকে জানা যায়, সাজাপ্রাপ্ত ১২ জন আসামীই এখন পর্যন্ত পলাতক রয়েছেন। তবে পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করার জন্য অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন পালনের আয়োজন করেন কুলাউড়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামলার বাদী রফিকুল ইসলাম রেনু। অনুষ্টানের শেষ পর্যায়ে বিএনপির কতিপয় সন্ত্রাসীরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটনাস্থলে এসে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা আত্মরক্ষার্তে চিৎকার করিলে সিকিউরিটি গার্ড সিকন্দর আলী ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের বাঁধা দেয়। এসময় মামলার ১নং ও ২নং আসামীর হাতে থাকা রাম দা দিয়ে সিকন্দর আলীকে কুপ মারেন। তাদের অতর্কিত হামলায় সিকন্দর আলী গুরুত্বর আহত হয়। এসময় সিকন্দর আলীকে বাঁচাতে কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক কামরুল বক্স ও সাধারণ সম্পাদক রুবেল আহমদ এগিয়ে আসলে আসামীগণ তাদের কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে। এসময় বিএনপির সন্ত্রাসীরা অফিস ভাংচুর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ভাংচুর করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে আহত সিকন্দর আলী ও আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের উদ্ধার করে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সিকন্দর আলীকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করেন। সিকন্দর আলীর মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্ত্রী হুসনে আরা বেগম হাসপাতালে এসে লাশ সনাক্ত করেন। পরে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য সিকন্দর আলীর লাশ মৌলভীাবাজার সদর হাসপাতাল পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে সিকন্দর আলীর লাশ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাপন করা হয়। পরে এঘটনায় কুলাউড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রেনু বাদী হয়ে কুলাউড়া থানায় ২৯/০৯/২০১৫ইং তারিখ একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ২৫)। মামলায় উপরে উল্লেখিত সাজাপ্রাপ্ত ১২ জনকে আসামী করা হয় এবং খালাস প্রাপ্ত ২ জনকে সন্দেহবাজন হিসেবে আসামী করা হয়। কিন্তু বিচার কার্যাক্রম শেষে সন্দেহবাজন দুজন আসামীকে আদালত খালাস দেয়।
দীর্ঘ ৪ বছর পর সাক্ষ্য গ্রহণ ও পর্যালোচনা শেষে আসামীদের বিরুদ্ধে আদালত এরায় দেন।