কমলগঞ্জ প্রতিনিধি:
সময়মতো ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে অনেক কৃষকরা কৃষিজমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন স্থানীয় ইটভাটাগুওেলাতে। কৃষকদের দাবী কৃষিজমিতে ফলানো ধানে মণপ্রতি ৫শ’ টাকার উপরে খরচ হয়। অথচ উৎপাদনের পর ৪শ’ সাড়ে ৪শ’ টাকায় বাজারে বিক্রি করতে হয়। কষ্ট করে ফসল ফলানোর পরে লোকসান হয়। ক্ষেত করে কোন লাভ নেই। জানা যায়, মাঠ থেকে আমন ধান ওঠার পরপরই ফসলি জমির মাটি বিক্রি শুরু হয়। এই মাটি ট্রাক ও ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া হয় ইটভাটায়। এই উপজেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ৬টি ইটভাটা রয়েছে। মাটি বিক্রি করেছেন, এমন ৪/৫জন কৃষক বলেন, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় ইটভাটার মালিকরা এবং স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে নেয়। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা না জেনে সহজ-সরল কৃষকেরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করছেন। বর্তমানে এক হাজার ঘনফুট মাটি এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আরো জানা যায়, উপজেলার খুশালপুর,আলেপুর,মুন্সীবাজার, বৃন্দাবনপুর, জালালিয়া গ্রাম এলাকায় ব্যাপক হারে জমির উর্বর মাটি কেটে ট্রাকযোগে ইটভাটায় নেয়া হচ্ছে। ইট তৈরির কাজে তুলনামূলক কম দামে মাটি কিনে ভাটার পাশে জমা করে রাখা হচ্ছে। আর্থিক সুবিধা লাভে কৃষকরা জমির উর্বর মাটি বিক্রি করছেন। আবার অনেকে ইটভাটায় মাটি বিক্রির জন্য কৃষিজমি কেটে পুকুর খনন করছেন। এর ফলে হাজার হাজার একর কৃষিজমি উবর্রতা হারাচ্ছে। কৃষির উৎপাদনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব পড়ছে। তবে কৃষকরা সময় মতো ধানে দাম না পাওয়া, অর্থনৈতিক সমস্যা দূর করতে এবং ইটভাটা মালিকদের চাহিদার কারণে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কৃষক আব্দুল হক, রাসেদ আহমদ,কয়সর আলী, এনামুল হক বলেন, গরিব কৃষকদের বেলায় ধানের চারা রোপনের পর দোকান থেকে সার-কীটনাশক বাকিসহ শ্রমিকের খরচ অনেক টাকা লাগে। ফসল উঠার পর দোকান বাকির টাকা পরিশোধ করতে হয়। তখন বাধ্য হয়েই কমদামে ধান বিক্রি ছাড়া কোন উপায় থাকে না। কৃষকরা আরও বলেন, এ সময়ে লোকসান দিয়ে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। আবার মহাজনরা যখন ধান কিনে নেন তখন ধানের দাম বেড়ে যায়। লাভ হয় মহাজনী ব্যবসায়ীদের। তাই অনেক সময় ইচ্ছের বিরুদ্ধেও জমির উর্বর মাটি বিক্রি করতে হয়। তবে জমির উপরের উর্বর মাটি কৃষির জন্য খুবই উপকারী বলে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন। উপজেলার মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল দেব বলেন, কৃষিজমির উর্বর মাটি খুবই জটিল বিষয়। উর্বর মাটির ছয় ইঞ্চি পরিমাণ গভীরতা চাষাবাদ উপযোগী। এই মাটি সরিয়ে ফেলা হলে পরের বছর ভালো ফলনের আশাকরা যায় না। প্রচুর গোবর-সার দিয়ে মাটি তৈরি করতে হয়। জমিতে প্রচুর পরিমাণ কৃত্রিম সার লাগে। পুণরায় মাটির উর্বরতা সৃষ্টি হতে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর সময় লেগে যায়। এটি কৃষিজমির জন্য খুবই ক্ষতিকর। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এর সিলেট বিভাগীয় সমম্বয়ক এড. শাহ শাহেদা আক্তার বলেন, কৃষিজমির উপরের ৬ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি উর্বর। এই মাটি চলে গেলে উৎপাদনে প্রভাব পড়বে এবং পরিবেশেরও ক্ষতির সৃষ্টি হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা বলেন, জমির উর্বর মাটি কেটে নিলে জমির জন্য খুবই ক্ষতিকর। এটি মোটেই কাম্য নয়। তবে কৃষকের অভিযোগ থাকলেও ধানের মূল্য নির্ধারণ করে খাদ্য অধিদপ্তর। সেখানে কৃষিবিভাগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কৃষিজমির উর্বর মাটি কোন মতেই রোধ হচ্ছে না। এটি দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সৃষ্টি করবে বলে সচেতন মহল মনে করছেন।
কমলগঞ্জে কৃষিজমির উর্বর মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
