স্টাফ রিপোর্টার:
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে নির্মিত হল ১৯৭১এর মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সিপাহী বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের উপর এবং তার যুদ্ধকালিন সময় নিয়ে ডকুমেন্টারি আর্ট ফিল্ম। আর্ট ফিল্মটি রচনা ও পরিচালনা করেন এস এ টিভির গবেষক ও লেখক মাসুদ হাসান।
হামিদুর রহমান জন্ম গ্রহণ করেন ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারী হামিদনগর (পূর্বতন খোরদা খালিশপুর), মহেশপুর, ঝিনাইদহ (পূর্বতন যশোর) জেলায়। তিনি সম্মুখ সমরে শহীদ হন কমলগঞ্জ উপজেলার ধলই সিমান্তে ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর।
শ্রীমঙ্গলের থিয়েটার কর্মীদের নিয়ে পুরো ডকুমেন্টারি নির্মাণ করা হয়। ১৯৭১ এ বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর এর ভূমিকায় অভিনয় করেন বিজয়ী থিয়েটারের মোস্তাকিম আহমেদ। এই ডকুমেন্টারি আর্ট ফিল্মে আরো কাজ করেন শ্রীমঙ্গলের থিয়েটার কর্মী এস কে দাস সুমন, সাজন আহমেদ রানা, রিয়ন আহমেদ, নাজিমুল হক শাকিল, ইরপান আহমেদ, জলিল আহমেদ, পংকজ বাড়ই, ওয়াহিদ আহমেদ, মুহিবুর রহমান প্রমুখ।
লেখক ও পরিচারক মাসুদ হাসান বলেন, এই কাজ আরো অনেক আগে করার কথা থাকলেও করা যায়নি নানা সমস্যার কারণে। তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের সকল বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে নির্মাণ করব ডকুমেন্টারি। আগমনী দিনগুলোর জন্য এবং সকলের কাছে তাদের জীবনের নাজানা অনেক কথা তুলে ধরব। আমরা স্থানীয় থিয়েটার কর্মীদের নিয়ে কাজ করছি এই সব ডকুমেন্টারি ফিল্ম। আশাকরি এই ডকুমেন্টারি ফিল্মটি বাংলাদেশের আর্কাইভে স্থান পাবে।
এই ফিল্মে উঠে আসে হামিদুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ের কথা, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আক্রমণের মুখে চাকরীস্থল থেকে নিজ গ্রামে চলে আসেন। বাড়ীতে একদিন থেকে পরদিনই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য চলে যান সিলেট জেলার কমলগঞ্জ থানার ধলই চা বাগানের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত ধলই বর্ডার আউটপোস্টে। তিনি ৪নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসে হামিদুর রহমান ১ম ইস্টবেঙ্গলের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। ভোর চারটায় মুক্তিবাহিনী লক্ষ্যস্থলের কাছে পৌছে অবস্থান নেয়। সামনে দু প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে।
শত্রুর অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। মুক্তিবাহিনী সীমান্ত ফাঁড়ির খুব কাছে পৌছে গেলে ফাঁড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত হতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মেশিনগানের গুলিবর্ষণের জন্য আর অগ্রসর হতে পারছিলো না। অক্টোবরের ২৮ তারিখে ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও পাকিস্তান বাহিনীর ৩০এ ফ্রন্টিয়ার রেজিমেন্টের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ বাধে। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয়।
মুক্তিবাহিনী পাকিস্তান বাহিনীর মেশিনগান পোস্টে গ্রেনেড হামলার সিদ্ধান্ত নেয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। সে অবস্থাতেই তিনি মেশিনগান পোস্টে গিয়ে সেখানকার দুই জন পাকিস্তানী সৈন্যের সাথে হাতাহাতি যুদ্ধ শুরু করেন। এভাবে আক্রণের মাধ্যমে হামিদুর রহমান এক সময় মেশিনগান পোস্টকে অকার্যকর করে দিতে সক্ষম হন।