স্টাফ রিপোর্টার:
শ্রীমঙ্গলে জরুরী অবস্থায় সরকারী হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স থাকলেও এর চালক সোহেল মিয়া কে সময়মত পাওয়া যায় না। এতে করে জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে চালকের দায়িত্ব অবহেলার কারণে মানুষের মনে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, এ্যাম্বুলেন্স চালক সোহেল মিয়া নিজের ব্যবসার কাজে বেশীরভাগ সময় ব্যস্ত থাকেন। যে কারণে জরুরী প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্সের প্রয়োজন দেখা দিলে চালক দায়িত্ব পালন না করায় এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
জানা যায়, গত ৩১ অক্টোবর শহরের মৌলভীবাজার রোডের বাসিন্দা রাহুল নামক এক কলেজ ছাত্র পানিতে ডুবে যায়। স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় রাহুলকে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। রাহুলের স্বজনরা এসময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্সে মৌলভীবাজার নিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে। কিন্তু এসময় ড্রাইভার সোহেল দায়িত্বে না থাকায় অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে পাওয়া যায়। তাকে পাওয়া গেলেও অতিরিক্ত টাকার বিনিময়ে এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে যাওয়া হলে ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যায়। পথিমধ্যে রাহুলের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় রাহুলের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা কর্তব্য কাজে অবহেলা ও সময়মত ড্রাইভারকে না পাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জানালা ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন চৌধুরী হিমু অভিযোগ করেন তার চাচা তানভীর হোসেন চৌধুরী মনি সম্প্রতি সাইকেল দূর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হলে সদর হাসপাতালে ডাক্তার রেফার্ড করলেও এসময় ড্রাইভারকে পাওয়া যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় চাচাকে সদরে নিয়ে যাওয়া হয়।
মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম ইদ্রিস আলীর ভাই আরজত আলী মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যায়। স্থানীরা তাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীকে সদরে প্রেরণের পরামর্শ দেন। এসময় ড্রাইভারকে না পেয়ে উপজেলার বেসরকারী ক্লিনিকের এ্যাম্বুলেন্সে করে সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়।
উপজেলার একমাত্র সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি সূত্র জানিয়েছে, ড্রাইভার সোহেল সুদের দাদন করেন। একারণে প্রায় হাসপাতালে থাকেন না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সেবা নিতে আসা অনেক ভুক্তভোগীর অভিযোগ- এখানকার এ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেলেও সরকারী নিয়ম নীতির বাহিরে ড্রাইভার সোহেল মিয়া অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে থাকেন। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন কর্মস্থলে না থাকার পরেও ড্রাইভার সোহেল মিয়া তার মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক রিক্সা চালক সাবাজ আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ৩ দিন ধরে দেখছি রোগীরা এ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার অনুপস্থিতির কারণে সেবা পাচ্ছে না। মানুষ বাধ্য হয়ে বেসরকারী এ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে রোগী অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছে।
ড্রাইভার সোহেল মিয়ার সাথে যোগাযোগ করতে বুধবার দুপুর ২টায় সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি। তার মোবাইল ফোনে কল দিলে তাও বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ জয়নাল আবেদীন টিটো জানান, বিষয়টি নিয়ে তিনি অবগত আছেন। এরকম অর্বাচিন সরকারী কর্মচারী থাকলে তা জনগণ ও প্রতিষ্ঠান সবার জন্যই ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই ব্যাক্তির জন্য বার বার আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, সিলেট স্বাস্থ্য পরিচালক বরাবর এনিয়ে পত্র পাঠানো হবে। তাকে সাসপেন্ড করে নতুন ড্রাইভার নিয়োগের জন্য পত্রে সুপারিশ করবেন বলে জানান।