লোকাল ট্রেনে নারিতা স্টেশন থেকে ফোনাবাসী স্টেশনে নামলাম। উদ্দেশ্য সেখানে এক বাংলাদেশি ছোটভাই থাকে তার সাথে দেখা করা ও আমাদের ঢাকা মেডিকেলের এক ব্যাচমেটের সাথে দেখা করা। নারিতা এয়ারপোর্ট, রেলস্টেশন, বাসস্টেশন সব একই জায়গায়, আন্ডারগ্রাউন্ডে। সুবিশাল জায়গা জুড়ে, কিন্তু সুপরিকল্পিত। এতোটাই পরিকল্পিত যে শত শত ট্রেন, বাস প্লেন মিনিটে মিনিটে সময় মেনে আসছে যাচ্ছে, অথচ কাউকে খুঁজে নিতে বেগ পেতে হয়না।
মানসিক রোগ বিষয়ে কনফারেন্স এ যোগ দিতে সুদূর বাংলাদেশ থেকে জাপান এসেছি, আর যদি নিজ দেশের পরিচিতজনদের সাথে দেখা করে না যাই তাহলে কেমন হবে? তাই দুজনেই সিদ্ধান্ত নিলাম সেশন ও প্রেজেন্টেসন শেষে যত দ্রুত পারি বের হয়ে প্রথমে তাদের সাথে দেখা করবো, পরে টোকিও শহরটাকে এক নজর একটু দেখবো।
গত দুদিন জাপান ঘুরতে আমরা কোন গাইড নেইনি। আমি ও যুবায়ের ভাই একাই ঘুরছি। এখানে চলতে ফিরতে সবাই গুগল ম্যাপ বা যে শহরে ঘুরবেন তার একট ছাপানো ম্যাপ ব্যবহার করে। কারো কাছে যদি মোবাইল থাকে তাহলে সে গুগল ম্যাপে দেখে নেবে নাহলে রাস্তার মোড়ে বাস ষ্ট্যান্ড, পুলিশ বা শপে গুলোতে ছাপানো ম্যাপ থাকে। ওটা দেখেই আপনি চলতে পারবেন। ম্যাপে প্রতিটি স্থাপনা, অলিগলি নির্দেশিত এবং কোন পথে, কোন বাহনে যাবেন, যেতে কত সময় লাগবে তাও উল্লেখ আছে।
স্টেশনে নেমে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছি। দুজনের একটু পানির তৃষ্ণা পেলে একটা শপে ঢুকলাম। পানি আর কোক নিলাম, সাথে নিলাম প্যাকেট বাদাম ভাজা। ভদ্র মহিলা পানি, ড্রিংকস আর প্যাকেট বাদাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কি এখানেই খাবেন, নাকি হাটতে হাটতে খাবেন?”
আমি বললাম, “ইচ্ছে ছিলো হাটতে হাটতে খাব, কিন্তু শহরের রাস্তাঘাট এতো পরিচ্ছন্ন, খাবার শেষে এই কোকের ক্যান আর বাদামের প্যাকেট কি করবো?”।
তিনি হেসে বিনীত ভাবে বললেন,
“অহ..! এই কথা? আমি আপনাকে ব্যাগ দিচ্ছি। খাবার শেষে ক্যান আর বাদাম প্যাকেট এই ব্যাগে রেখে দেবেন আর হাটতে গেলে কিছুক্ষণ পরপরই দেখবেন ডাস্টবিন রাখা, ওতে আলাদা আলাদা করে ফেলে দিবেন। কোথায় কোকের বোতল আর কোথায় বাদামের প্যাকেট ফেলবেন, সেটা লিখা আছে। যান যান মজা করে খান,….. আরিকাতু গুজাইমাস”।
আমরাও বললাম, “আরিকাতু… আরিকাতু”।
দু’দিনে বহুল ব্যবহৃত এ শব্দের সাথে আমাদের পরিচয় হয়ে গিয়েছে। জাপানে পরিচিত অপরিচিত প্রথম দর্শনে সবাই সবার মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে হালকা ঝুঁকে বাও করে। বাও করা মানে হলো সম্মান করা বা শান্তি কামনা করা। অত:পর টুকটাক কথাবার্তা হোক বা না হোক বলবে “আরিকাতু গুজাইমাসু” বা “আরিকাতু”। মানে, “তোমাকে অশেষ অশেষ ধন্যবাদ, বা তোমাকে ধন্যবাদ”।
জাপানেই দেখলাম স্টল বা রেস্টুরেন্ট এ পুরুষ কর্মীর চেয়ে নারী কর্মী বেশি। ৮০ ভাগই কর্মকর্তা কর্মচারী তরুনী । যেমন স্টলে তেমন রেস্টুরেন্ট এ। অর্থাৎ এদের বেশির ভাগ কলেজ ভার্সিটি স্টুডেন্ট। তাদের এটা পার্ট টাইম জব। আশ্চর্য হলো, তাদের টিপস নেবার কালচার নেই। সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করবে।
শিশু কিশোর ব্যতিত সবাই কাজ করে। যে ক’দিন ছিলাম কোন শিশু কিশোর কে কাজে পাইনি। আমাদের দেশে সব খানেই শিশু কিশোর কে কাজে পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের বাড়িঘরে প্রচুর শিশু কর্মী আছে গৃহস্থালির কাজকর্মে।
জাপানে একেবারে আশি বছরের বুড়ো তারাও কাজ করেন। কাজ আলাদা ভাগ করা। রেডিসন হোটেল থেকে প্রতিদিন বের হয়ে আমরা নারিতা এয়ারপোর্টে যেতাম সেই বাসটিতে শিফট ওয়াইজ যারা ডিউটি করতেন তারা বেশ বয়স্ক ছিলেন। আনুমানিক ষাটোর্ধ হবেন।
একটু শক্ত কাজ তরুন তরুনীরা করেন আর হালকা কাজ যেমন শপিংমল বা রাস্তাঘাট থেকে টুকটাক অব্যবহৃত কাগজ সংগ্রহ করে জায়গা মতো ডাস্টবিন এ ফেলা, পরিচ্ছন্ন রাখা, ড্রাইভিং করা, এ কাজ গুলো অপেক্ষাকৃত বয়স্করা করেন।
এক সন্ধ্যায় আমি আর যুবায়ের ভাই হোটেল লনে বসে কফি খাচ্ছিলাম তখন দেখলাম অতিশায় এক বৃদ্ধা মহিলা এসে আমাদের সামনে রাখা ফুলের টব’টি একটু মুছে দিয়ে গেলেন, যদিও সেটা মুছা ছিলো। তার হাতে গ্লাভস, পরনে প্রোটেকটিভ গাউন।
জাপানে ড্রাইভিং মানে যানে বসে কেবল সুইচ, বাটন টিপা টিপি। গাড়ি, ট্রাম গুলো সবই নতুন আর অটো। রাস্তা, লোকেশন, স্টপেজ গাড়ি বা ট্রামের সাথে পোগ্রামিং করা। কোথায় যাবেন, কোথায় থামবেন, কোন স্টপেজ সামনে এগুলো সব সেটিং করা থাকে। একটু পরপর মাইক্রোফোনে সেটা অটো বেজে উঠছে। ড্রাইভার সাহেবের কাজ কেবল খেয়াল রাখা আর সময় মতো বাটন চাপা।
অনেক বয়স্কা মহিলারাও ড্রাইভিং পেশায় আছেন। আর এখানের পাবলিক বাস গুলোতে প্রিপেইড কার্ড সিস্টেম আছে অথবা বক্স আছে নামার সময় হয় কার্ড টাচ করাবেন নতুবা বক্সে টাকা দিয়ে দিবেন। ভাংতি প্রয়োজন হলে বক্স থেকেই নিবেন বা এটেন্ডেন্ট আছেন তাকে বললেই হবে। কিছুক্ষণ পর পর তিনি এমাথা টু ওমাথা হেটে যাচ্ছেন। তার কাছে ছোট মাইক্রোফোন আছে। বাস বা ট্রামে মিউজিক নেই, আমাদের’তো বাস বা ট্রেনে বাংলা হিন্দী গান ছেড়ে দিবে ড্রাইভার, তারপর ছুটবে আপনাকে নিয়ে পারাপারে না হয় পরপারে।
যাত্রাপথে ওরাও মিউজিক শুনে তবে সবাই যার যার হেড ফোন লাগিয়ে। যানবাহন বা রাস্তাঘাটে উচ্চশব্দে মিউজিক বাজিয়ে কাউকে বিরক্ত করা নেই এখানে। শুনশান নিরব। বাস, ট্রাম বা লোকান ট্রেনে উঠতে কেউ তাড়াহুড়ো করেনা। ধীরে ধীরে উটবে, সিট পেলে বসবে না হয় চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকবে। কাউকে গল্প গুজবে মেতে উঠতে দেখিনি।
জাপানে কাজের ছোট বড় নেই। সবই সমান। তাছাড়া সবাই সবাইকে অতি সম্মানের চোখে দেখেন। প্রথম দর্শনেই বাও করেন। সেটা প্রধানমন্ত্রী হন বা সাধারণ নাগরিক হন কিংবা হন না কেনো একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। কে কাকে আগে সম্মান দেবে, শুভেচ্ছা জানাবে, এটাই তাদের কাছে মুখ্য, এটাই নিয়ম। এটাই তাদের ছোট বেলা থেকে শিখিয়ে দেয় হয়।
জাপান বেড়াতে গেলে আপনি যে একজন মানুষ সেটা বোধহয় জীবনে প্রথম মনে হবে। আমাদের দেশে বা আশে পাশের দেশ গুলোতে কারো কাছে টাকা থাকলেই কেবল তাকে মানুষ হিসেবে মুল্যায়ন করা হয়, সেটা একটা খারাপ মানুষের বা চোরেরও যদি থাকে । সেই চোর সম্মান পাবে, বা সে আপনার কাছ থেকে সম্মান আদায় করে নেবে। আর যদি টাকা না থাকলে আপনি যত ভালো মানুষই হন, যত বিদ্বান হন, আপনার কানাকড়ি কোন দাম নেই।
জাপানিজরা মানুষ কে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা শেখে ছোটবেলা থেকেই। সবাই খুব পরপোকারী। মনে হয় একজন কে উপকার করতে পারলেই তার দিনটা স্বার্থক হলো। এটা যেমন জাপানের সাধারণ মানুষের বেলায় তেমনি জাপানের পুলিশের বেলায়।
ভিজিটর বা ফরেইনার সামনে পড়লে যেচে এসে বাও করবে জিজ্ঞেস করবে, “তোমাদের কোন কিছু লাগবে কি?”, “পথ দেখিয়ে দিবো?” অথবা “তোমার কোন সমস্যা হচ্ছে গন্তব্য চিনতে?”। বাস বা ট্রেনের লাইনে দাড়ালে আপনাকে সামনে জায়গা করে দেবে বা অফার করবে।
হিরোশিমা থেকে মিয়াজিমা দ্বীপে যখন বেড়াতে যাই, সেখান থেকে ফিরতে একটু দেরী হয়, বিধায় টকিও ফেরার সর্বশেষ বুলেট ট্রেন মিস করি। আমাদের ছিলো জাপান রেলওয়ে থেকে নেয়া সাতদিনের জন্য স্পেশাল ‘জেথআর’ পাস। সাতদিন জাপানের এ মাথা টূ ও মাথা যেখানেই ভ্রমন করি না কেন ফ্রী সেটা। ট্রেইন মিস করায় হিরোশিমা স্টেশনে বসেই মোবাইলে গুগলে হোটেল সার্চ করে একটি হোটেলে মেইল করে রাতে থাকার রিসার্ভেশন কনফার্ম করি।
হোটেল ছিলো হিরোশিমা স্টেশন থেকে খানিকটা দূরে। একজন জাপানী কে গুগল ম্যাপে হোটেল টি দেখালে তিনি আমাদের পাশেই ট্রাম ষ্ট্যান্ড এ নিয়ে আসেন। সেখান থেকে শহরের প্রিন্টেড একটা ম্যাপ নিয়ে মার্ক করে দেখালেন আমরা এখন কোথায় আর হোটেল টি কোথায়। তারপর তিনি ট্রামে উঠিয়ে দিয়ে বাও করে, হেসে হাত নেড়ে আমাদের কাছ থেকে বিদায় নেন।
আমাদের হোটেল ছিলো টোকাইচিমাচু শহরে। ট্রাম থেকে নেমে এক হাতে মার্কিং করে দেয়া ম্যাপ আরেক হাতে মোবাইলে গোগল ম্যাপ ধরে এগুছি। খানিকটা এগুনোর পর একটি মোড়ে এসে তারগোল পাকাই আমি ও ডা. যুবায়ের ভাই।
রাত তখন দশটা। সুনসান নিরবতা। সন্ধ্যার পর হিরোশিমার আর টোকাইচিমাচু’র অলগলিতে সুনসান নিরবতা দেখে কিছুটা ভয় হয় আমাদের। একটা গলির মুখে আমরা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম, যদি কেউ আসেন তবে হোটেলটি খুঁজে নেবো।
আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এক তরুনি এগিয়ে আসলেন। আমরা তাকে বাও করে বললাম, “কাওয়াটিয়া হোটেল টি এখানে, কিন্তু খুঁজে পাচ্ছিনা”।
তিনি হেসে বললেন, “অহ, গো স্ট্রেইট থ্রী মিনিট দেন টার্ন রাইট এন্ড ওয়াক এনাদার টু মিনিট”। আগেই বলেছি জাপানীরা সব কিছুর সাথে সময় জুড়ে দেয়, তাতে সুবিধা।
আমরা তার কথামত দুজনে গল্প করতে করতে এগুচ্ছি, একটু পর দেখলাম পিছন পিছন সেই তরুণী ও আসছেন । হোটেল গেটে পৌছে পিছন ফিরে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমিও কি এই হোটেলে উঠেছো?”। সে স্মিত হেসে বললো, “না তোমরা যাতে পথ চিনতে ভুল না করো, তাই আসছিলাম”।
আমরা তাকে একটা কফি অফার করলে সে বিনয়ের সাথে বললো, “আসলে আমি কাজে যাচ্ছি, সময় থাকলে খেতাম অবশ্যই”, “আরিগাতু…আরিগাতু”।
আমরাও রিপ্লাই এ বললাম, “আরিগাতু গুজাইমাস”। আমাদের মুখে এটা শুনে কিছুটা চমকে, জোরে হেসে বলল, “গুজাইমাচ গুজাইমাচ”। বলে রাখি জাপানীরা ডাক্তার দের আলাদা বিশেষ সম্মানের চোখে দেখে। যত ডেস্কেই প্রফেশন হিসেবে ডাক্তার বা সাইকিয়াট্রিস্ট পরিচয় দিতে হয়েছে, তাদের চোখে মুখে তখন দেখেছি অন্যরকম দীপ্তি।
যে ক’দিন ঘুরেছি মসজিদ মন্দির প্যাগোডা কোথাও চোখে লাগেনি। মাঝেমধ্যে মনে হতো, এরা ধর্মকর্ম করেনা তাহলে এতো মনুষ্যত্ব এতো মানবিকতা তারা শিখলো কোত্থেকে? আমাদের দেশে গলিতে গলিতে, পাড়ায় পাড়ায় ধর্মীয় স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান। ধর্মীয় উৎসব পালনেও আমাদের আগ্রহের কমতি নেই। তবুও তাদের তুলনায় আমরা খুব একটা সভ্য নই।
আমরা এক ধর্মের লোক আরেক ধর্মের লোকদের দিকে হিংসার দৃষ্টিতে তাকাই। মসজিদ ভাংগি, মন্দির ভাংগি। ধর্ম আমাদের কে মানুষ করতে পারেছেনা। আমাদের ধর্মীয় দীক্ষা কেবল মসজিদ, মন্দির গীর্জা আর প্যাগোডা ভিত্তিক। ধর্মীয় কাজ শেষে বাইরে বের হলেই আমরা নেমে পড়ি অন্যায়, অনৈতিক কর্মকান্ডে। তাইতো আমাদের মাঝে অসভ্যতা আর নোংরামির এতো ছড়াছড়ি।
আর আমাদের মধ্যে যারা ধর্ম পালন করেনা, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেনা, তাদের মন মানসিকতা, কর্মকা- আরও খারাপ। ধর্ম কিছুটা হলেও মানুষ কে শান্ত রাখে।
বাংলাদেশ নিয়ে যারা ভাবেন বা যারা নিজেকে সবসময় দেশ প্রেমিক ভাবেন, তাদের উচিৎ কেবল ভাবনাতেই নির্ঘুম না কাটিয়ে, চোখের নীচে কালো রেখা না সাজিয়ে, হামেশা দেশপ্রেমের চোংগা না ফুঁকে, আর টক শো বা ফেইসবুকে জ্বালাময়ী বক্তব্য না দিয়ে পারলে একবার জাপান ঘুরে আসা। কোন ডিগ্রীটিগ্রী বা পি এইচ ডি করার জন্যে জাপান যাওয়া না। ডিগ্রী ডক্টরেট গত বিশ চল্লিশ বছর বাংলাদেশে বহু এসেছে। এসব ব্যবহার হয়েছে কেবল নিজের আখের গুছাতে।
এখানে অনেক আদার ব্যাপারীরা আছেন যারা যান জাহাজ বিক্রির উপর ডিগ্রী নিতে। এসবে অর্থ আর সময়ের অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়। এসবে দেশের তেমন একটা মংগল সম্ভব হয়েছে বলে আমার মনে হয়না। তাই বলি ডিগ্রী বা ডক্টরেট নয়, কেবল একটু শিখার উদ্দ্যেশ্যে যদি কেউ জাপান যান তবেই দেশের জন্যে মঙ্গল হবে বেশি।
জাপান যেতে হবে ¯্রফে ঘুরতে, অল্প কিছুদিনের জন্যে। আর এ ঘুরার উদ্দ্যেশ্যই হবে তাদের সাথে মিশে আমি কিছু শিখতে চাই। শিখতে হবে জাপানী সাধারণ নাগরিকের কাছ থেকে ‘মানুষ কে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করা’, শিখতে হবে জাপানের একজন কনভেনিয়েন্ট স্টোর স্যালসম্যান বা একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর কাছ থেকে ‘কিভাবে তারা নিজের আবাস কে পরিচ্ছন্ন রাখে, কিভাবে অন্যকে রাখতে সহায়তা করে’। শিখতে চাই সব তরুণ তরুণীদের কাছ থেকে, ‘কিভাবে তারা শ্রম দিয়ে ধ্বংসস্থুপ একটা দেশ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে’।
যদি তাই হয়, তাতেই বেসি কিছু বিষয় শিখা হয়ে যাবে আমাদের । কিন্তু আমাদের বড় সমস্যা হলো, আমরা বিদেশ ভ্রমন করি সাইট সিং করতে, শপিং করতে, নাচ গান করতে, বডি মাসাজ করাতে, কিংবা পারলে পালিয়ে গিয়ে দেশের বারোটা বাজিয়ে নিজের আখের গুছাতে।
আমাদের বেসিক কিছু বিষয়ে এখনো বড় রকমের গলতি রয়েছে। আমরা মানুষ কে মানুষ হিসাবে মুল্যায়ন করিনা। আমরা স্বেচ্ছাচারী, ক্ষমতা লিপ্সু একটা অলস প্রকৃতির মানুষ। মানুষ কে আমরা মুল্যায়ন করি ক্ষমতা আর টাকা দিয়ে।
আমরা নীতি কথা যা শিখি সেটা সেই প্রাইমারী স্কুলে অল্প কয়েকদিন, তারপর এ চ্যাপ্টারটি ক্লোজ। “সদা সত্য কথা বলিবে” এ বাক্য রয়ে যায় কেবল পাঠ্যপুস্তকে। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে আমাদের মধ্যে মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতা । অথচ জাপানীরা মিথ্যা বলেনা। চিট করেনা। যেটা পারবেনা, সেটা তারা বার বার ক্ষমা চেয়ে বলবে, আমি পারছিনা,ক্ষমা করবে।
যে’কটা দিন ছিলাম পরিচ্ছন্ন এই দেশে ভিক্ষুক দেখিনি। অথচ আমাদের দেশে ঢাকার অলি গলিতে ভিক্ষুক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মাঝে মধ্যে মনে হয় “পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা” নামের একটি মন্ত্রণালয় গঠন করে যদি সমস্ত ভিক্ষুক কে পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিলে মন্দ হবে না। “যাও পথিকের কাছ থেকে টাকা বা কয়েন কালেকশন নয়, কাগজের ঠোঙা, ময়লা গুলো কালেকশন করো তোমার ঝুলায়, আর কেজি প্রতি ময়লার জন্যে পাবে একশো টাকা”। তবেই হয়তো শহর গুলো পরিষ্কার থাকবে। এতে হয়তো দেয়ালে দেয়ালে , “এখানে ময়লা ফেলবেন না, এখানে পশ্রাব করিবেন না, করিলে একশো টাকা জরিমানা” এসব লিখতে হবেনা।
ময়লা আর পশ্রাবের জন্যে দূর্গন্ধে শহরের অলিগলির আকাশ বাতাস ভারি হবেনা।
লেখক: ডা. মোঃ সাঈদ এনাম
টোকিও জাপান