নিজস্ব প্রতিনিধি:
পয়ত্রিশ বছর থেকে অন্ধজনে আলো ছড়াচ্ছে সিলেট বিভাগের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ চক্ষু বিষয়ক হাসপাতাল মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে পৃথিবীর আলো দেখেছেন কয়েক লক্ষ রোগী। শিশুসহ সকল বয়সের নারী-পুরুষের, চোখের ছানি অপারেশন, লেন্স সংযোজন, টনসিল অপারেশন ও ট্যারা চোখ সোজা করা সহ চোখ সংশ্লিষ্ট সব ধরনের অপারেশন এই হাসপাতালে হয়ে থাকে। হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে সিলেট বিভাগের পার্শ্ববর্তী জেলা গুলো থেকেও প্রতিনিয়ত রোগীরা আসেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিনিয়ত হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
জানা যায়, এই হাসপাতালে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গ্রামাঞ্চলের মানুষজন চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও সমাজের সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য কাজ করে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে সমাজের দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবা দিতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করে। হাসপাতালটিতে ফ্যাকো অপারেশন করা হয়। যার বৈশিষ্ট্য হলো সেলাইবিহীন অপারেশন, অপারেশনের পরপরই দৃষ্টি শক্তি ফিরে পাওয়া। বিশেষ কোন কারণ ছাড়া চমশার প্রয়োজন হয়না।
হাসপাতল সূত্র জানা যায়, বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫’শ থেকে ৬ শতাধিক রোগীরা চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা, বায়োমেট্টি, এ-স্কেন, বি-স্কেন, লেজার চিকিৎসা, মাইনর অপারেশন (নালী, টেরিজিয়াম, কেলজিয়ান), কর্ণিয়া ও ক্যাটারেক্ট ক্লিনিক সার্ভিসের সুবিধা নিয়ে থাকেন। আন্ত:বিভাগে গড়ে প্রতিমাসে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫শ’ জন রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে থেকে চোখে কৃত্রিম লেন্স সংযোজন, ইসিসি, গ্লোকোমা, ডিসিআর অপারেশন, সেপটিক, এসেপটিক চিকিৎসাসহ নিয়মিত ঔষধ ও উন্নত খাদ্য সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা দেশে ইতিমধ্যে ৪০ হাজার শিশু অন্ধত্ব বরণ করেছে। এছাড়াও ১৩ লক্ষ শিশু দৃষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। সিলেট বিভাগে ৩০ লক্ষ শিশুর মধ্যে প্রায় ২ হাজার ৪শ’ শিশু অন্ধত্বের অভিশাপে ভুগছে। আরও প্রায় ১ লক্ষ শিশু বিভিন্ন দৃষ্টিজনিত সমস্যা নিয়ে বেঁচে আছে। ২০০৪ সাল থেকে মৌলভীবাজার বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল ও অরবিস ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে হাসপাতালে একটি আধুুনিক শিশু চক্ষু বিভাগ চালু করা হয়। ১৪ বছরে এই বিভাগের মাধ্যমে আড়াই লক্ষ শিশুর চিকিৎসা এবং ৪ হাজার জনের অধিক শিশুর চোখে বিনামূল্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
হাসপাতালে কর্ণিয়া স্ক্র্যাপিং, কনজাঙ্কটাইভাল সোয়াব, কালচার, রক্ত, প্র¯্রাবের বিভিন্ন রুটিন পরীক্ষা, রক্তের বিটি, সিটি ও গ্লুকোজ, পেনিসিলিন ড্রপসহ রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া ডায়াবেটিক ইউনিট, গ্লুকোমা ইউনিট, স্কুল সাইট টেস্টিং প্রোগ্রাম ইত্যাদি চালু আছে।
হাসপাতালটিতে সিলেট, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোণা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া সহ দেশের বিভিন্নস্থান থেকে রোগীরা এসে চোখের চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ০৯ জন মেডিক্যাল অফিসার ৪জন সহ সব মিলিয়ে ১২৫ জন স্টাফ সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে হাসপাতালে শুরু থেকে এপর্যন্ত চিকিৎসাপ্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৬ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধ কল্যাণ সমিতি (বিএনএসবি) বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ১৯৭৩ সালে যাত্রা শুরু করে দেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। আন্ধেরী হেলফি জার্মানীর কারিতাস এবং বিএনএসবি একযোগে কাজ করে থাকে।
১৯৮৩ সালে ৩.২১ একর জমির উপর বিদেশী দুটি সংস্থার অর্থায়নে গড়ে উঠে এই হাসপাতালটি। এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৮৫ সালে। বর্তমানে ৫টি সাধারণ কেবিন, ১০টি এসি কেবিন ও ৫০টি সাধারণ বেড রয়েছে। ১৯ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটির দিকনির্দেশনায় হাসপাতালটি পরিচালিত হয়ে আসছে। নির্বাচিত পরিষদের অবৈতনিক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ মোসাহিদ আহমদ চুন্নু।
অবৈতনিক (ভারপ্রাপ্ত) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ মাহবুবু বলেন, হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে অন্ধত্বে আলো ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আন্তরিকতার সহিত কাজ করছে। আমরা ইনডোরে কাজ করার পাশাাপাশি দেশের বিভিন্ন গ্রামে চক্ষু শিবিরের মাধ্যমে ফ্রি চক্ষু সেবা দিয়ে থাকি এবং এটা অনেক সাড়া জাগিয়েছে। এছাড়াও সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র আমাদের হাসপাতালে শিশুদের চক্ষু চিকিৎসা দেয়া হয়।