হোসাইন আহমদঃ
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি সরকারি দপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ নির্মাণ ও চালুর নির্দেশনা দেওয়া হয় মন্ত্রিপরিষদ থেকে। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত লাল-সবুজের বাংলাদেশকে নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পরিচয় করে দিতে এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চর্চা অব্যাহত রাখতে বর্তমান সরকার এ উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মৌলভীবাজারে অযত্ন, অবহেলা আর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় আলোর মুখ দেখেনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মরণে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্ণার। মৌলভীবাজারের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দায় সারা ভাবে এ নির্দেশনা পালন করেছেন। আবার অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই জানে না তাদের বিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্ণার রয়েছে। বঙ্গবন্ধু কর্ণার থেকে এ যাবত একটিও বই পড়েননি এমন শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। সরকারের এই নির্দেশনা অনেক অফিস প্রধানও জানেন না।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর রচিত দেশি-বিদেশি বই-পুস্তক, জার্নাল, ম্যাগাজিন, স্থিরচিত্র, ঐতিহাসিক ডকুমেন্টারি, সিডি বা মুক্তিযোদ্ধকালীন দুর্লব ছবি বঙ্গবন্ধু কর্ণারে স্থান পাওয়ার কথা। কিন্তু অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড নির্ভর বঙ্গবন্ধু কর্ণার রয়েছে।
সরেজমিন সদর উপজেলার আজমনি দ্বিপাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায়, জরাজীর্ণ কক্ষে একটি বুক সেলফে কিছু বই ও কয়েকটি ছবি রয়েছে। কক্ষের কোথাও বঙ্গবন্ধু কর্ণার লেখা নেই। কক্ষে প্রবেশ করে মনে হয়েছে দায় সারা ভাবে এটা করা হয়েছে। খালিশপুর রহমানিয়া আলিম মডেল মাদ্রাসার একটি শ্রেণী কক্ষের কর্ণারে একটি বুক সেলফে কয়েকটি বই রেখে বঙ্গবন্ধু কর্ণার বসানো হয়েছে। এ যাবত বঙ্গবন্ধু কর্ণার থেকে বই নিয়ে পড়েছেন এমন একটি বই’র নাম জানতে চাইলে দাখিল পরীক্ষার্থী মিরাজ ও দশম শ্রেণীর রুপা আক্তার বাবলী সহ ৫ জনের কেউই বলতে পারেননি। করকপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে দেখা যায় একটি অগোছালো কক্ষে বঙ্গবন্ধু কর্ণারের কয়েকটি বই রয়েছে। পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী তারেক আহমদ, শিহাব আহমদ ও আলিফা জান্নাত কেউই পড়েছেন এরকম একটি বই’র নাম বলতে পারেনি। কাজির বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পাঠদানরত ১১ জন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু কর্ণার থেকে এ যাবত একটিও বই পড়েনি। বাসুদেবশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইনবোর্ড নির্ভর বঙ্গবন্ধু কর্ণার রয়েছে।
এই অবস্থা জেলার অধিকাংশ কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারি দপ্তরে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ শামছুর রহমান বলেন, প্রতিষ্ঠান নিজেদের অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু কর্ণার স্থাপন করেছে। এক্ষেত্রে বাজেট ও কক্ষ সংকটের কারণে হয়তো কিছু সমস্যা থাকতে পারে।
এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফজলুর রহমান বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে বঙ্গবন্ধু কর্ণারকে এখনও নির্দেশনা মতো সাজানো যাচ্ছে না। তবে প্রধান শিক্ষকরা আন্তরিক হলে এটা করা সম্ভব। কিন্তু অনেকেই সরকারি নির্দেশনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন না। আবার কেউ কেউ সুন্দর ভাবে বঙ্গবন্ধু কর্ণার করেছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বর্ণালী পাল বলেন, বিষয়টি খুবই দুঃখ জনক। সরকারের এই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে কথা বলব।