ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
চলমান বন্যায় মৌলভীবাজারে মৌসুমি গরুর খামারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। অনেক খামারীরা গরু নিয়ে চরম বিপাকেও পড়েছেন। খাদ্য সংকটের কারণে কমছে গরুর ওজন। এবার লাভের চেয়ে লোকশানের চিন্তায় দিন কাটছে তাদের। পানি বাড়ায় কোনো কোনা এলাকায় চুরের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারীরা রাত জেগে গরু পাহারা দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার হাওর পারের এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় খামারীরা বাজার, ব্রীজ ও রাস্তার পাশে গরু রাখছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৭ উপজেলার ২৭টি ইউনিয়নের ২০ হাজার ৯’শ ৯টি গরু, ১ হাজার ৭’শ ৭০টি মহিষ, ৭ হাজার ৪’শ ১৫টি ছাগল ও ১ হাজার ৫’শ ৩৩টি ভেড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে খামারীদের সম্ভাব্য ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ১৬ লক্ষ ১২ হাজার ৩’শ টাকা।
এদিকে আসন্ন কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে মৌলভীবাজার জেলায় কোরবানী যোগ্য গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে গরু ৪৩ হাজার ৪’শ ৯৪টি, মহিষ ২ হাজার ৮’শ ১৬টি, ছাগল ১২ হাজার ৬’শ ২১টি ও ভেড়া ৫ হাজার ২৬টি।
এদিকে বিগত বোরো মৌসুমে মূষলধারে বৃষ্টি’র কারণে খড় সংগ্রহ করতে পারেনি কৃষকরা। ফলে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত এসব গবাদি পশুর খাদ্যের জোগানে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষক ও খামারীরা। গরুর খাবারের জন্য কচুরিপানা সংগ্রহে বিভিন্ন খাল-বিলে ছুটছে তারা। কৃষকরা তাদের পালিত গরু, মহিষকে পর্যাপ্ত খাবার দিতে পাড়ছেনা। যার কারণে ক্রমান্বয়ে কমছে গরুর ওজন।
জানা যায়, জেলার হাওর অঞ্চলের গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়িতে দেশিয় জাতের ২/৫ টি কোরবানী যোগ্য গরু পালনপালন করা হয়। হাওরে এমন কোনও বাড়ি নেই যেখানে তাদের বাড়িতে গরু-বাছুর নেই। এসব গবাদিপশু পালনে খোলা মাঠে বেঁধে ঘাস খাওয়ানো হয়। এভাবে দুগ্ধগাভী ও ষাড় গরু মোটাতাজা করে থাকেন কৃষকরা। এসব গরুর দুধ ও গরু বিক্রি করে বার্ষিক প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় করেন তারা। কিন্তু চলতি বোরো মৌসুমে মূষলধারে বৃষ্টি থাকার কারণে ভরা বর্ষা মৌসুমে গরুকে খাওয়ানোর জন্য খড় সংগ্রহ করতে পারেনি কৃষকরা। ফলে গবাদিপশুর দেখা দিয়েছে খাদ্যাভাব। এছাড়া খড়ের দাম বেড়েছে ১০ গুণ। এ কারণে বিপাকে পড়েছে খামারীরা। গরু বাঁচাতে নানা দুশ্চিন্তায় পড়েছে তারা।
হাকালুকি এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী হোসাইন আহমদ বলেন, পুরো বছর গরু মোটাতাজা করি কোরবানীর ঈদে ভালো দামে বিক্রি করার জন। আমার মতো গরু মোটাতাজাকরন ব্যবসায়ীদের কোরবানীর ঈদ হচ্ছে মূল টার্গেট। কোরবানীর ঈদে গরু বিক্রির আয় দিয়ে আমরা পুরো বছরের ব্যয় নির্বাহ করি। কিন্তু এবারের বন্যায় আমাদের চরম ক্ষতি হয়েছে। যা কোনো অবস্থাতে পুসিয়ে উঠার মতো নয়। কুলাউড়া উপজেলার রসুলগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আকমল হোসেন একই কথা বলেন।
জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ সিনথিয়া কবির বলেন, আমরা খামারিদের খোঁজ খবর নিচ্ছি এবং প্রাথমিক চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। তালিকা করে বরাদ্দের জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি।