ষ্টাফ রিপোর্টারঃ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর মৌলভীবাজারে আওয়ামীলীগের হাল ধরে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান। এ সময় রাজনৈতিক শিক্ষা গুরু হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। আমার রাজনীতিক জীবনে উনার আদর্শ ও নৈতিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আমি এতো দূর এসেছি। স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমানের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরের কথা বলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়কমন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন এমপি।
এ সময় মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের মানুষের জন্য কিছু করতে হলে আমাদেরকে আদর্শ জীবন গড়তে হবে। আদর্শ মানুষদের জীবনাদর্শ অনুসরণ করে নিজদের জীবন সাজাতে হয়। জীবনে কখনোই আদর্শ থেকে বিচ্যুত হওয়া যাবে না, তবেই মানুষ মনে রাখবে, শ্রদ্ধা করবে।
এ সময় অতিথিরা কবর জিয়ারত ও মোনাজাত করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় জেলা আওয়ামীলীগ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, জনপ্রতিনিধিরা, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গুজারাই উনার বাড়িতে বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এসময় অতিথিরা “স্মৃতিচারণ ও জীবনপাঠ” গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি, অস্বচ্ছলদের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। অতিথিরা আজিজুর রহমানের জীবনী-কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন এবং বিদেয়ী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জামাল উদ্দিন এর সভাপতিত্বে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য নেছার আহমদ, জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান, পুলিশ সুপার মোঃ জাকারিয়া, পৌর মেয়র ফজলুর রহমান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ কামাল হোসেন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ জামাল উদ্দিন সহ জনপ্রতিনিধি, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তা, সুধি, শুভাকাংঙ্খী এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকগন।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১৮ আগস্ট ভোররাতে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এই স্থিতধী পুরুষ, আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ আজিজুর রহমান।
আজিজুর রহমান ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য, ১৯৮৬ ও ১৯৯১ সালের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
আজিজুর রহমান ১৯৪৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার জেলার চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের গুজারাই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম আব্দুল ছাত্তার এবং মায়ের নাম মাহমুদা বেগম (কাঞ্চন বিবি)। তিনি শহরের শ্রীনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক, মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে বি.কম. ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরিচ্ছন্ন, কর্মীবান্ধব এই রাজনীতিবিদ ২০১১ সালের ২০ ডিসেম্বর মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ প্রশাসক মনোনীত হোন। ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন।
ছাত্রজীবন থেকে মানুষের অধিকার আদায়ের যে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন তার ধারাবাহিকতায় স্বাধীকার, স্বাধীনতার আন্দোলন, সামরিক, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ দেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ যোদ্ধা।
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকবাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে এবং তাঁর ওপর চালায় নির্মম নির্যাতন। মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট কারাগার থেকে জেল ভেঙে তাঁকে বের করে নিয়ে আসেন।
তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মৌলভীবাজার জেলা পরিষদ এবং পরিবারের পক্ষ থেকে মিলাদ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক প্রকাশসহ নানাভাবে মৌলভীবাজারবাসী তাঁকে স্মরণ করছে।