সরওয়ার আহমদঃ ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ। সাথে আছে কাশি, সর্দ্দি এবং হাত পায়ে ব্যথা। টানা ৮/১০ দিন রোগে ভোগারপর অনেকে সুস্থ হচ্ছেন আবার বেকায়দায় পড়ে অনেকে হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ক্লিনিকের স্মরণাপন্ন হচ্ছেন। গত এক মাস ধরে এই স্থির চিত্র বিরাজ করছে জেলার প্রতিটি গ্রাম এবং শহরাঞ্চলে। এই উপসর্গকে অধিকাংশ রোগী মৌসুমী ভাইরাস গণ্য করে ঘরে বসেই চিকিৎসা নিচ্ছেন অনুমান নির্ভর ঔষধ সেবন করে। এমনও খবর আছে যে, ঘরগোষ্টী সবাই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে নির্বিকার অবস্থায় নাপা, প্যারাসিটামল সহ অন্যান্য ঔষধ সেবন করেছেন প্রতিনিয়ত। তবু হাসপাতাল অভিমুখী হচ্ছেন না টেষ্ট সহ আই সি ইউ ভীতির কারণে। জেলা ব্যাপী এই উপসর্গের বিস্তার নিয়ে সংশয় জেগেছে বোদ্ধা মহলে। এটা কি প্রচলিত মৌসুমী জ্বর, না করোনা ভাইরাসের বর্ধিত দাপট? ১০/১২ দিন রোগে ভোগার পর যারা হাসপাতালে এসেছেন, পরীক্ষা নীরিক্ষায় তাদের বড় অংশই করোনা আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। এমতাবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে- করোনার ছোবল শহরাঞ্চল ছাড়িয়ে গ্রামে গঞ্জেও প্রসারিত হচ্ছে অসচেতনতার উপর ভরদিয়ে। এমনও নজির আছে -যে গৃহিনীর চলাচল শুধু ঘরের মধ্যেই সীমাবব্ধ তিনিও করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন।
উল্লেখ্য- জেলাতে করোনার বিস্তার শুরু হয়েছে গত ২০২০ সনের এপ্রিল মাস থেকেই। বছর শেষে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন সরকারি হিসেবে ৩৩ জন। তবে বেসরকারী হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৫৩ জনেরও অধিক। শনাক্তকৃত রোগীর হিসাব নিয়েও গড়মিল আছে। তবে সংক্রমণ যে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটি স্পষ্ট। গত ২৩ জুনের হিসাব অনুযায়ী উপসর্গে আক্রান্ত ৪৮ জন রোগীর মধ্যে ১৯ জন করোনা আক্রান্ত। এ হিসাব অনুযায়ী আক্রান্তের হার ৩৯.৫ শতাংশ। উপজেলা এবং জেলা সদরের হাসপাতালে আগত রোগীর পরিসংখ্যানে আক্রান্তের হার ৩৯.৫ শতাংশ হলেও প্রকৃত অবস্থা ভিন্নতর। গ্রামে গঞ্জে আক্রান্ত রোগীরা টেষ্টের ধারে কাছে আসতে নারাজ। মরতে হলে বাড়ীতেই মরবো তবু হাসপাতালে যাবো না- এমন মানসিকতাও রয়েছে অনেকের মধ্যে। ফলে সংক্রমক এ রোগের বিস্তার ঘটছে নির্বিঘেœ। রোগ বিস্তারের ক্ষেত্রে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব মুখ্য ভূমিকা রাখছে। মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের জনৈক প্রভাষক বলেছেন- অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে- করোনারোগ যেনো পান্তাভাত তুল্য। কারো কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। শহরের ফুটপাতে হাটা যায়না পথচারী ভীড়ের কারণে। যানবাহনেও ঠাঁই নাই অবস্থা। করোনা প্রতিরোধী বিধি নিষেধ মানা হচ্ছেনা কোথাও। এমতাবস্থায় বেখেয়ালের খেসারত যদি চূড়ান্ত পর্য্যায়ে উপনীত হয়, তাহলে আশ্চর্য্য হবার কিছু থাকবেনা।