জামিল আহমদ,বড়লেখা প্রতিনিধিঃ
হাকালুকি হাওরে তৎপর হয়ে উঠেছে মাছ ও পাখি শিকারি চক্র। তারা বিষটোপসহ নানাভাবে ফাঁদ পেতে অবাধে পাখি শিকার করছে। কিন্তু পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় কোনোভাবেই তা ঠেকানো যাচ্ছে না। পাখিপ্রেমী ও স্থানীয়রা পাখি শিকার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
স্থানীয় সূত্রমতে,প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাকালুকি হাওরে প্রায় সারা বছরই নানা প্রজাতির পাখি আসে। এসব পাখির মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, ভুতিহাঁস,গিরিয়াহাঁস,কুড়া ইগল,সরালি,পানভুলানি, কালিম,সাদা বক,কানি বক, পানকৌড়ি। এর মধ্যে দেশীয় প্রজাতির নানা জাতের পাখি রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান,হাওরে শীতকালের মত এখনও অতিথি পাখি আসার সঙ্গে সঙ্গে পাখি শিকারি চক্র তৎপর হয়ে উঠেছে। চক্রটি রাত-দিন নানাভাবে ফাঁদ পেতে হাওরে পাখি শিকার করছে। বন্দুক ও জাল দিয়ে শিকারের পাশাপাশি বিষটোপ দিয়ে পাখি মারা হচ্ছে। বিষটোপ খেয়ে পাখির পাশাপাশি অনেক খামারির হাঁসও মারা যাচ্ছে। শিকারিরা এসব পাখি বিভিন্ন বাজারেও মাঝেমধ্যে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। বিভিন্ন হোটেলে এসব পাখির মাংস বিক্রি হচ্ছে। এমনকি প্রভাবশালী অনেকের ঘরেও এসব পাখি যাচ্ছে।
হাওরের হাল্লা গ্রামের পাখিবাড়ির বাসিন্দা আক্তার আহমদ শিপু বলেন, হাওরে প্রতি বছরের মতো এবারও অতিথি পাখি এসেছে। বছরজুড়ে আমাদের বাড়িতে পাখি থাকে। শিকার বন্ধে রাতে পাহারা দেই। এর পরও শিকারিরা পাখি শিকার করছে নানাভাবে ফাঁদ পেতে। বাধা দিলে হুমকি দেয়।
স্থানীয় পরিবেশকর্মী রিপন দাস বলেন, হাওরে পাখির সংখ্যা দিনে দিনে কমছে। এর কারণ হচ্ছে,অবাধে পাখি শিকার,পাখির আবাস্থল ধ্বংস ও খাদ্যের সংকট। পাখি শিকার বন্ধ না হলে এখানে পাখি আর আসবে না।
পাখি শিকারের বিষয়টি স্বীকার করে বন বিভাগের হাকালুকি (বড়লেখা) বিটের দায়িত্বে থাকা জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট তপন চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘শিকারিরা বিট অফিস থেকে দূরের বিলগুলোর মধ্যে পাখি শিকার করে। গুলির শব্দ শুনে ঘটনাস্থলে যেতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা লাগে। এর মধ্যে শিকারিরা পালিয়ে যায়। বিশাল হাওর এলাকায় জনবলের সংকট নিয়ে কাজ করছি। গত ৩১ ডিসেম্বর গুলির শব্দ পেয়ে হাওরখাল এলাকায় যাই। ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই শিকারীরা।
একইভাবে মৎস্য আইনের তোয়াক্কা না করে অকাতরে ইজারাদাররা এবং মৎস্যজীবীরা অবাধে মৎস্য নিধন করে যাচ্ছেন। বিশেষ ধরনের নেট জাল ব্যবহারের ফলে কোন ধরনের মাছ শিকার থেকে বাদ যাচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাকালুকি হাওরের তীরে কয়কেটি সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। যাদের কাছে রয়েছে হাজার ফুটের উপরে দীর্ঘ এককেটি বেড়জাল। এসব বেড়জাল দিয়ে বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চলে মাছ শিকার। বড় ধরনের একেকটি বেড়জাল টানতে ৩০-৪০ জন জেলে লাগে। এসব বেড়জালের কারণে হাওরে মাছের বসতি দিন দিন কমে যাচ্ছে। জালের আঘাতে হাওরে জলজ উদ্ভিদ কিংবা শেওলা জন্ম নিতে পারে না। অবধৈভাবে শিকার করা এসব মাছ পিকআপ ভ্যানে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়ে যান বিক্রেতারা। প্রশাসন এসব ভ্যান থেকে মাসোহারা পেয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,হাকালুকি হাওরের প্রত্যেকটা বিলে এ ধরনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ যদি এ ধরনের কার্যক্রম বন্ধ না করেন তবে অচিরেই আমাদের হাকালুকি হাওরের মৎস্য ভান্ডার শেষ হয়ে যাবে। ভুক্তভোগী হবে দেশের মানুষ।