সরওয়ার আহমদঃ
(১)
মশা নিয়ে মশকরা হতে পারে নতুন কিংবা পুরাতন অবয়বে। তবে নিজের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। সাম্প্রতিক নাতিদীর্ঘ্য খরতাপে এখান থেকে সেখানে ঘুরপাক শেষে টেবিলে রাখা একটি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাছিলাম সময় অতিক্রমের জন্য। সন্ধ্যা আসন্ন বিধায় বুনো মশক দল ঘরের জানালা ডিঙ্গিয়ে যথাস্থান বেছে নিতে তৎপর। মশা সাধারণত সিদ্ধি হাসিলের লক্ষ্যে মানুষের হাত পা পিঠে কিংবা গর্দ্দানে কামড় বসায়। কিন্তু দুঃসাহসী এক মশা আমার গন্ডদেশকেই মোক্ষম মনে করলো। দংশনে অতিষ্ট হয়ে নিজেই নিজের গালে কষিয়ে চড় বসালাম। কিন্তু ফায়দা হলোনা। তার আগেই মশা সটকে পড়েছে। গিন্নী বললেন- নিজে নিজে চড় খেলে কেনো? কোথাও কি কোন অপরাধ করেছো, যার প্রায়শ্চিত্ত দিচ্ছ আড়ালে আবডালে? বল্লাম প্রায়শ্চিত্ত নয়, মশা তাড়াচ্ছিলাম। বাচাল গৃহিনী বল্লেন- মশাও জায়গা চিনে। যাদের টিকিটি স্পর্শ করার হিম্মৎ আমজনতার থাকেনা- মশা তাদের গন্ডুদেশকে বেছে নেয়- সটান চড় খাওয়ার জন্য। এটাই প্রকৃতির বিধান।
(২)
ঘটনাটি ঈদের আগমুহুর্তের। মধ্যবয়েসী এক ভদ্রলোক শহরের ইউসিবি ব্যাংক থেকে বিশ হাজার টাকা উত্তোলন করে পকেটস্থ মানি ব্যাগে রেখে রওয়ানা হয়েছিলেন পশ্চিম বাজারের দিকে, সি.এন.জিতে চেপে। সি.এন.জির পেছনে অন্য এক জনের পাশে বসার সাথে সাথেই উর্বশী এক যুবতী এই মধ্যবয়েসীর পাশে সাহসা চেপে বসলো। ভদ্রলোক তাকে বিব্রত রোধ করলে যুবতীটি বলে উঠলো- নানা আমারে চিনতায় না, আমি আপনার এক নাতনী। আপনি আমারে না চিনলেও আমি আপনারে চিনি। নাতনী নানার পাশে এমন ভাবে বসলো যাতে তার উন্নত বক্ষ যুগল নানার পিঠে ঠেস বসায়। গাড়ী সামান্য দুলে উঠলেই নানা অনুভব করেন নাতনীর মোহনীয় এবং স্বর্গীয় স্পর্শ। নানার ক্ষণিক তন্ময়তার ছেদ ঘটলো এস,আর প্লাজার সম্মুখে। সি,এন,জি থেকে আগে নেমেই নাতনী মিশে গেছে জনারণ্যে। নানা নেমেই বেকুব। পকেটের মানি ব্যাগ উধাও। মানি ব্যাগের সন্ধানে তিনি রাস্তা এবং গাড়ীর সিট তল্লাশী কালে ড্রাইভার বলে উঠলো-চাচা যা হইবার তা হইয়া গেছে। যুবতীর অঙ্গস্পর্শে আপনি যেভাবে আউলা হইছিলায়, হেই সময়ে কাম বাড়াইছে। আফসোস করে আর লাভ নাই। টাকা গেছে, নাতনীর বুকের মায়াতো পাইছেন……..।
(৩)
বাংলাদেশের পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং সাবেক ঝানু আমলা এম.এ মন্নানের মোবাইল ফোনটি ছিনতাই হয়েছে। মন্ত্রনালয়ের চৌকষ গাড়িতে বসে মন্ত্রী মহোদয় যখন মোবাইল আলাপনে মশগুল, তখন আনাড়ী ছিনতাইকারী ঝাপটা মেরে তার ফোনটি কেড়ে নিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। হর হামেশা ছিনতাইয়ের এঘটনার মধ্যে উল্লেখিত ঘটনাটি অবশ্যই ব্যতিক্রমী। এ নিয়ে আলোচনা সমালোচনা জমে উঠেছে। দুর্মুখ এক ব্যক্তির মন্তব্য হচ্ছে- এ নিয়ে এতো মাতামাতির কি আছে? পরিকল্পনা মন্ত্রীর অনুমোদনকৃত বিভিন্ন প্রকল্প থেকে যে হারে অর্থ ছিনতাই হচ্ছে সে তুলনায় মোবাইল ছিনতাই নস্যি সমতুল্য। তবে এ ছিনতাইকারীটি দুঃসাহসী এবং জবরদস্ত। সে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বিধায় ঐতিহাসিক ছিনতাইকারী হিসেবে তাকে অভিহিত করা চলে।