ষ্টাফ রিপোর্টারঃ গেল বছরের ১৭ মার্চ থেকে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে সকল ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাসা-বাড়িতে অবসর সময় কাটাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোনে আসক্ত হচ্ছে। নানা বাহানা ধরে অভিভাবকদের কাছ থেকে স্মার্টফোন নিয়ে অনলাইনে গেইম খেলে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় পার করছে। আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী ফেইসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমুতে সময় ব্যয় করছে। নানা কৌশল অবলম্বন করেও অভিভাবকরা তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না। ইন্টারনেটের দিকে ঝুকছে শিক্ষার্থীরা।
গবেষণা বলছে কোভিড পরবর্তী সময়ে ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ইন্টারনেট ও স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। ঝুঁকছে পর্ণগ্রাফি সাইটেও।
মনোবিজ্ঞানীরা ও সাইক্রিয়াট্রিস্টরা বলছেন, দীর্ঘ সময় স্কুলের বাইরে থাকার কারণে এবং স্মার্টফোনের অপব্যবহারে অনেক শিশুর মধ্যেই আচরণগত পরিবর্তন আসছে। এমন পরিস্থিতি একদিকে যেমন তাদের সঠিক মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে অন্যদিকে নিয়মতান্ত্রিক জীবনে অনভ্যস্ত হওয়ার প্রবণতা তৈরি হতে পারে শিশুদের মধ্যে।
এদিকে অনলাইনে পাঠদানের নামেও শিক্ষার্থীদের হাতে মৌলভীবাজারের অনেক অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা হাতে স্মার্ট ফোন পেয়ে অনলাইনে পাঠদান না করে বিভিন্ন ধরণের খেলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করে। অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে গেইম খেলা নেশায় পরিণত হয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীরা একদিকে লেখাপড়া থেকে পিছিয়ে পড়ার পাশাপাশি মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এমন আচরনে চরম দু:চিন্তায় মৌলভীবাজারের অভিভাবকরা।
প্রবাসী অধ্যূষিত মৌলভীবাজারের অভিভাবক ও আত্মীয়রা অতিরিক্ত আল্লাদ করে বিদেশ থেকে ছেলে মেয়েদের জন্য দামি মোবাইল ফোন পাঠান। পুরুষ অভিভাবকরা বিদেশে থাকায় মাদের ফাঁকি দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইলে সময় পার করেন।
একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় সময় পাস করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে গেইম খেলতাম। এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এখন দিনে কয়েক বার ফেইসবুকে ডুকতে হয় এবং গেইম খেলতে হয়।
মৌলভীবাজার পুলিশ কার্যালয়ে কর্মরত এক অভিভাবক বলেন, ছেলে সারা রাত মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। কোনো অবস্থাতে তার হাত থেকে মোবাইল নেয়া সম্ভব নয়। এক রাতে রাগান্বিত হয়ে মোবাইল রাখার কথা বললে পরের দিন সকালে কাউকে কিছু না বলে বাহিরে চলে যায়। রাজনগর উপজেলার বাঁলিগাঁও গ্রামের এক অভিভাবক বলেন, ছেলের বয়স ১০ বছর। কিন্তু রাত ১২/১টা হলেও তার হাত থেকে মোবাইল নিতে পারিনা। অনেক দেন দরবার করতে হয়। এটা মাদকের মতো নেশায় পরিণত হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা শিশু কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন মাসুদ বলেন, অনেক সময় দেখা যায় অনলাইনে ক্লাসের কথা বলে রাত ১২/টায় শিক্ষার্থীরা স্মার্ট ফোন ব্যবহার করছে। স্মার্ট ফোনের অপব্যবহারের কারণে তাদের স্মৃতি শক্তি লোপ পাচ্ছে। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে হেড ফোন ব্যবহারের কারণে তাদের কানে নতুন করে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এসবের কারণে শিক্ষার্থীরা অভিভাবকদের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করে। কথা বার্তা শোনে না।
মৌলভীবাজার জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, প্রতিদিন অনেক অভিভাবকরা এমন অভিযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা থাকায় আমরা কিছুই করতে পারছি না। তবে আমি মনে করি যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যালয় গুলো খোলে দিলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিস্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোঃ সাঈদ এনাম বলেন, ক্লাসের পরবর্তী সময়টুকু স্মার্টফোনের অপব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটে আসক্ত হচ্ছে। অনেক সময় রাত জেগে মোবাইলে গেম খেলে। যার ফলে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করছে। অভিভাবকের কথা শুনে না, তর্কবিতর্ক করে ও খারাপ আচরণ করে।