বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজারের চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও তার কর্মী নাহিদ আহমদ মাহি হত্যা মামলার দতন্ত সাড়ে তিন বছরেও শেষ হয়নি। এনিয়ে নিহতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হাতশা বিরাজ করছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে মৌলভীবাজার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলার অন্যতম আসামি ফাহিম মুনতাসিরকে ২২ মে রাতে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা থেকে আটক করেছে পিবিআই।
২০১৭ সালের ৭ডিসেম্বর গ্রুপিং দ্বন্দ্বে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও তার কর্মী নাহিদ আহমদ মাহিকে। এঘটনায় নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী মৌলভীবাজার মডেল থানায় ১২ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়ের সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও কোন কূল-কিনারায় পৌঁছায়নি। বাদীনির নারাজির প্রেক্ষিতে মামলাটি পিবিআই এখন তদন্ত করছে। আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় শাবাবের পরিবার থেকে তার মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করলেও নিহত মাহির পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি।
নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমানের অভিযোগ আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরা-ফেরা করে তাদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। নিজের নিরাপত্তা চেয়ে মৌলভীবাজার মডেল থানায় তিনি জিডি করেছেন। জিডিতে তিনি প্রতিপক্ষ আনিসুল ইসলাম তোষারসহ ৭ জনের নাম উল্লেখ করে বলেন, শাবাব হত্যা মামলার এ আসামীরা হাজতে থেকে পরবর্তীতে জামিনে মুক্তি পায়। এরপর থেকেই তারা প্রকাশ্যে হুমকি দেয়। তিনি তার ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারী থানায় (জিডি নং-৭১৬) জিডি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে নিরাপত্তার দাবী জানান।
কান্না জরিত কন্ঠে তিনি প্রতিবেদককে বলেন, তার পুত্র হত্যার হোতা ফাহিম মোনতাছিরকে আইনের আওতায় না এনে চার্জশীট দেয় পুলিশ। সমস্থ চার্জশীট এলোমেলো ভাবে দেয়ার কারণে মামলার তদন্তভার আদালত পিবিআইতে পাঠায়। মামলা তদন্তাধীন থাকা সত্ত্বেও আসামীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। তারা কার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এতো বেপরোয়া হয়ে গেল? তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুত্র হত্যার বিচার দাবী করেন।
তিনি বলেন, কে বা কারা ফোন করে শাবাবকে নিয়ে গেছে এই ঘটনা এখনও উদঘাটন হয়নি। পুলিশের তদন্তেও তা তুলে ধরা হয়নি। এই বিষয়টা সঠিকভাবে তদন্ত করা হলে মূল ঘটনার রহস্য উদঘাটন হবে। শাবাব তার ফোনে কল পাওয়ার আধা ঘন্টা পরেই তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু পিবিআই এতদিন ধরে তদন্ত করছে কিন্তু ঘটনার কোন রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারে নি।
লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডের দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পর আদালতে চার্জশীট দায়ের করেন মডেল থানার তৎক্ষালীন ওসি সোহেল আহাম্মদ। তিনি তুষারসহ ১০আসামীকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট জমাদেন। কিন্তু বাকী দুই আসামীকে চার্জশীটের অন্তভূক্ত না করায় বাদীনীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলাটি পিবিআইতে প্রেরণ করেন আদালত। নিহত শাবাব মৌলভীবাজার শহরের পূরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার আবুবক্কর সিদ্দিক ও সেলিনা রহমানর কনিষ্ঠ পুত্র। মাহি সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া ও জুলেখা বেগমর পুত্র।
নিহত শাবাবের বোন কানাডা প্রবাসী রিফাত নওরীন বলেন, আসামীরা গ্রেফতার হয়ে চুপি চুপি বের হয়ে পূর্ণ মর্যাদায় রাজনীতি করছে। একজন আসামী ইতিমধ্যে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশী চলে গেছে। বাকীরাও বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বাহিরে চলে যাবে।
এবিষয়ে পিবিআই মৌলভীবাজারের এসপি মোঃ আবু ইউসুফ বলেন, চার্জশীট থেকে বাঁধ দেয়া ফাহিম মুনতাসিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার রিমান্ড চাওয়া হবে। তার কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে খুব শীর্ঘই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেব।