ষ্টাফ রিপোর্টারঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারী অফিস, স্কুল, কলেজ, বন্ধ থাকায় মৌলভীবাজারে পত্রিকা বিক্রি কমে দুই তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। আবার কোনো কোনো গ্রাহক পত্রিকার মাধ্যমে করোনা ছড়ানোর ভয়ে বাসা-বাড়িতে পত্রিকা নেয়া বন্ধ রেখেছেন। এতে এই ব্যবসার সাথে জড়িতরা বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার কেউ কেউ পত্রিকা বিক্রি ছেড়ে অন্যান্য পেশার সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। হাতে গুনা কয়েকজন সখের বসে এই পেশা ছেড়ে যেতে পারছেন না। যার ফলে মানবেতর জীবন কাটাতে হচ্ছে পত্রিকা বিক্রেতাদের। খেয়ে না খেয়ে পরিবার নিয়ে দিন নিপাত করছেন তারা।
মৌলভীবাজার সংবাদপত্র হকার সমিতি জানায়, করোনার আগে জেলা সদরে যে পরিমান পত্রিকা বিক্রি হতো এখন তা দুই তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। আবার অনেক সময় অনেক পত্রিকা অবিক্রিত থেকে যায়। জেলা সদরে ৩০ জন পত্রিকা বিক্রেতা রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে ইতি মধ্যে পেশা ছেড়েছেন সমিরুন, সুন্দর ও ইমন সহ ৫ জন। পরিবারের দৈনন্দিন খরচের জন্য আবার কেউ কেউ পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি সম্পৃক্ত হয়েছেন অন্য পেশার সাথেও। পত্রিকা বিক্রি শেষে বাকী সময়টুকু দেন অন্য পেশায়। প্রদীপ নাগ শহরের চাঁদনীঘাট এলাকায় একটি পানের স্টল দিয়েছে। পত্রিকা বিক্রি শেষে এখানে বসে পান বিক্রি করেন।
হকাররা বলেন, করোনা চলাকালীন সময়ে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন পেশার লোকদেরকে প্রণোদনা সহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগীতা করা হয়েছে। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে প্রণোদনা তো দূরের কথা তাদেরকে ত্রাণও দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিকবার আবেদন করেও সরকারি কোনো সহযোগীতা পাননি বলে তারা অভিযোগ করেন।
মৌলভীবাজার সংবাদপত্র হকার সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ নাগ জানান, ইন্টারনেটের কারণে প্রতিনিয়ত পত্রিকা বিক্রি কমে যাচ্ছে। এদিকে করোনা শুরু হওয়ার পর থেকে দুই তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। প্রতিদিন পত্রিকা বিক্রি করে যে টাকা পাই তা দিয়ে দৈনন্দিন খরচও হয় না। ঋণ এবং দোকান বাকীতে চলতে হয়। বছর ধরে এভাবে চলায় এখন কেউ ঋণও দিচ্ছে না। এরকম দিন গেলে পরিবার নিয়ে আমাদের চরম সংকটের মধ্যে পড়তে হবে।
পেপার হাউজের সত্ত্বাধিকারী এজেন্ট রতন কান্তি চাকলাদার বলেন, ২০২০ সালে করোনার প্রথম দাপে ৮০ শতাংশ পত্রিকা বিক্রি কমে ছিল। পরবর্তীতে কিছুটা স্বাভাবিক হলেও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে এসে ফের পত্রিকা বিক্রিতে ধস নামে। এই পেশা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। এতো সংকটের মধ্যেও সরকারি কোনো সহযোগীতা পাচ্ছি না। অথচ অন্যান্য পেশার লোকদেরকে নগদ টাকা সহ বিভিন্ন ধরণের সহযোগীতা করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার প্রতিদিনের সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক সরওয়ার আহমদ বলেন, সরকারের পাশাপাশি পত্রিকার মালিক ও সমাজের বিত্তবান লোকদের এগিয়ে আসতে হবে। অন্যতায় সামান্য পত্রিকা বিক্রি’র আয় দিয়ে তাদের ঠিকিয়ে রাখা যাবে না।