ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের বিচার দীর্ঘ তিন বছরেও শেষ হয়নি। এনিয়ে নিহতদের পরিবারের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পিআইবি দীর্ঘ দুই বছরেও আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। রাজনৈতিক প্রভাবে বিচার কাজকে প্রভাবিত করা হচ্ছে বলে দাবি নিহতদের পরিবারের।
২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর গ্রুপিং দ্বন্দ্বে মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে হত্যা করা হয় ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আলী শাবাব ও তার কর্মী নাহিদ আহমদ মাহিকে। এঘটনায় নিহত শাবাবের মা সেলিনা রহমান চৌধুরী মৌলভীবাজার মডেল থানায় ১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলা দায়ের তিনবছর পেরিয়ে গেলেও মামলাটি এখনো কোন কূল-কিনারায় পৌঁছায়নি। পুলিশের দেয়া চার্জশিটে বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলা এখন তদন্ত করছে পিবিআই।
নিহত শাবাব মৌলভীবাজার শহরের পুরাতন হাসপাতাল সড়ক এলাকার আবুবক্কর সিদ্দিক ও সেলিনা রহমানের ছোট ছেলে। মাহি সদর উপজেলার কনকপুর ইউনিয়নের দুর্লভপুর গ্রামের বিল্লাল মিয়া ও জুলেখা বেগমের ছেলে।ছেলে হারানো শোকে এখন কাতর হয়েছে আছে এই দুটি পরিবার। আলোচিত এ জোড়া খুনের ঘটনায় শাবাবের পরিবার থেকে তার মা সেলিনা রহমান চৌধুরী বাদী হয়ে মামলা করলেও নিহত মাহির পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ মামলা দায়ের করেন নি।
নিহত শাবাবের বাবা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, এত বড় চাঞ্চল্যকর ঘটনার পিছনে কে বা কারা কাটি নারের কিছু বুঝতেছি না। কোন সঠিক বিচার পাব কি না সেটাও বুঝতে ছি না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি। দুইজন আসামীকে রিমান্ড মঞ্জুর হইল আবার ওই দিনে রিমান্ড কেনসেল হয়ে গেল। এটাইবা কি। আবার দুইটা ছেলে বিদেশ চলে গেল। এসব কি ভাবে সম্ভব হল। আমরা চাই যারা দুষি তাদের বিচার হোক যাতে এই ধরণের ঘটনা ঘটাতে কেউ সাহস না করে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, নিহত শাবাবের সাথে তুষার গ্রুপের বিরোধের কারণেই তুষার শাবাবকে হত্যার চেষ্টা চালায়। গত ১০/১২ দিন পূর্বে নিহত মাহির সাথে তুষার গ্রুপের ফাহিমের ঝগড়া হয়। এই বিষয়টি মীমাংসা করার জন্যই ঘটনার দিন ৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শাবাব ও মাহিকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাত্রাবাস এলাকায় ডাকা হয়। সেখানে তুষার গ্রুপ শাবাব ও মাহিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এসময় ঘটনাস্থলে থাকা শাবাব ও মাহির বন্ধুরা ও পথচারীরা গুরুতর আহত শাবাব ও মাহিকে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালে পৌঁছালে চিকিৎসক তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, লোমহর্ষক এ হত্যাকা-ের দীর্ঘ ১ বছর পর আদালতে চার্জশিট দায়ের করেন মডেল থানার তৎকালীন ওসি সোহেল আহাম্মদ। তিনি তুষারসহ ১০ জনকে আসামি করে চার্জশিট জমা দেন। কিন্তু বাকী দুই আসামিকে চার্জশিটের অন্তর্ভুক্ত না করায় বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে মামলা পিবিআইতে প্রেরণ করেন আদালত।
এব্যাপারে পিআইবি মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. আবু ইউসুফ বলেন, বাদিনী দুজন আসামীকে অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেয়ায় আদালতে না রাজি জানান। আদালত মামলাটির তদন্তভার পিবিআইকে দিয়েছেন। মামলাটির তদন্ত পেয়ে আমাদের তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন, স্বক্ষদের জবানবন্দি নিয়েছেন, যাবতীয় কার্যকলাপ সম্পূর্ণ করেছেন। অচিরেই মামলাটির পুলিশি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে।