মুস্তাকিন মিয়াঃ
করোনা ভাইরাসে মৌলভীবাজারে চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সরকারি, বে-সরকারি, সামাজিক ও ধর্মীয় সহ সকল প্রকার অনুষ্ঠান। এতে মহা বিপাকে পড়েছেন মাইক ও ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ীরা। বেকায় হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসার ৫ হাজার শ্রমিক। জীবন জীবিকার তাগিতে ইতিমধ্যে অনেকেই মাইক ও ডেকোরেটার্স দোকানের সামনে পান-সুপারি ও সিগারেট বিক্রি শুরু করেছেন। আবার কেউ কেউ অন্য পেশায়ও যুক্ত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৌলভীবাজার শহরে অর্ধশতাধিক ছোট মাইক ও ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ী রয়েছেন। একদিকে বন্ধ রয়েছে তাদের আয়, অন্যদিকে ফুরিয়ে গেছে জমানো টাকা। ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তারা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পৌর শহরের শাহ মোস্তফা রোড, বেরিরপার, লেইক রোড ও কুসুমবাগ এলাকার দুই তৃতীয়াংশ মাইকের দোকান বন্ধ। আবার কেউ কেউ খোলা রেখে অলস সময় পার করছেন। দিন শেষে কোনো লেনদেনই হচ্ছে না। শূন্য হাতে ফিরছেন বাসায়। এদিকে ডেকোরেটার্স ব্যবসায়ীদেরও একই অবস্থা। পরিবারের দৈনন্দিন খরচ জোগাতে কারো কাছে হাত পাততেও পারছেন না।
মৌলভীবাজার মাইক এন্ড সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী সমিতির কোষাধক্ষ্য কামাল মাইক সার্ভিসের স্বত্তাধিকারী কামাল আহমদ জানান, ৪ মাস থেকে বিভিন্ন সামাজিক সাং¯ৃ‹তিক অনুষ্টান বন্ধ তাই মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায় ধস নেমেছে। এ সময়ের মধ্যে ৪’শ টাকাও আয় হয়নি বরং চার মাসের দোকান ভাড়া ও কর্মচারী বেতন এখন পর্যন্ত দিতে পারি নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা ঠিকে রাখা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। প্রতিদিন দোকান খোলি কিন্তু ব্যবসা হয়নি। তাই কোনো উপায় না দেখে দোকানের সামনে ছোট টেবিলে পান-সুপারী আর সিগারেট নিয়ে বসে কোনো মতে টিকে থাকার চেষ্টা করছি। এ মৌসুমে আমার প্রায় ৪/৫ লক্ষ টাকা লোকশান হবে।
মৌলভীবাজার মাইক এন্ড সাউন্ড সিস্টেম ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ হেলাল মাইক সার্ভিসের মালিক সাইফুল ইসলাম হেলাল জানান, বিভিন্ন ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান পুরো বন্ধ রয়েছে। প্রায় তিন মাসে তাদের কোনো আয় হয়নি। অথচ কর্মচারীদের খরচ দিতে হচ্ছে। জমানো টাকা যা ছিল, তাও শেষ। কিন্তু সরকারি কোনো সহযোগীতা পাইনি। দোকান ভাড়া ৪ মাস আটকা পড়েছে। মালিক চাপ দিচ্ছে কিন্তু ব্যবসা না থাকায় ভাড়া দিতে পারছি না।
মাইক অপারেটর মোঃ রবি মিয়া জানান, করোনাকালে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি। কেউ আমাদের পাশেও দাঁড়াচ্ছেন না। বাকি দিনগুলো কীভাবে কাটবে, সেটাই এখন বড় চিন্তা।
মৌলভীবাজার মাইক অপারেটর সমিতির সভাপতি মোঃ রুবেল আহমদ জানান, করোনাকালে প্রচার-প্রচারণা বন্ধ থাকায় আমাদের কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। আমার প্রায় একশত সদস্য মানবেতর জীবর যাপন করছে। আমরা প্রথম থেকে একাজ শিখেছি, আর কোন কাজ জানা নেই, তাই ঘরে বসেই অলস দিন পার করছি। এখন পরিবার নিয়ে চলা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
শিপন ডেকোরেটর মালিক সিদ্দিক মিয়া জানান, সামাজিক অনুষ্ঠান নেই। তাই তাঁদের ডেকোরেটার্সে ভাড়া দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনায় সব ধরনের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আয়োজন বন্ধ থাকায় কঠিন বিপদে পড়েছেন ডেকোরেটার্স মালিক-শ্রমিকেরা।
Post Views:
0