বিশেষ প্রতিনিধিঃ
ইতিমধ্যে মৌলভীবাজারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২’শ ৫০ জন। ক্রমান্বয়ে এজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। জেলার কয়েকটি এলাকাকে অতিঝুঁকিপূর্ণ সনাক্ত করে লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এদিকে নমুনা পরীক্ষায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার মধ্যে পিছিয়ে রয়েছে মৌলভীবাজার। প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকা ও সিলেটের দু’টি পিসিআর ল্যাবে প্রেরণ করা হলেও ৪/৫ দিনের রিপোর্ট সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট “ওয়েটিং বাক্সে” পড়ে থাকছে গুরুত্বহীন অবস্থায়। অত:পর কিছু কিছু নমুনার ফলাফল পাঠানো হচ্ছে সিভিল সার্জনের অফিসে।
সামাজিক সংংগঠনের নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের দাবি যত দ্রুত সম্ভব মৌলভীবাজারে পিসিআর স্থাপন করা হয়। অন্যতায় তারা কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন। পিসিআর স্থাপনের দাবিতে সচেতন নাগরিক ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে শুক্রবারে অর্ধ দিবস হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও ছাত্রনেতারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি তুলেছন। জেলার বিভিন্ন উপজেলায়ও একই সুরে এ দাবি জোরদার করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে মৌলভীবাজার থেকে সিলেটে নমুনা পাঠানো হয়েছে সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক। কিন্তু ফলাফল পাওয়া গেছে দেড় হাজারের মতো। এমতাবস্থায় সম্ভাব্য সংক্রমিতদের ফ্রি ষ্টাইল চলাফেরায় সংক্রমণের জাল কেবলই প্রসারিত হচ্ছে। নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে মৌলভীবাজার জেলাকে পেছনে রাখার হেতু কি তা নিয়ে আছে ধ¤্রজাল।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে সিলেটস্থ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শাহ জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নমুনা পরীক্ষার জন্য দু’টি পিসিআর ল্যাব রয়েছে। সংগৃহীত নমুনার ভীড়ে তাই নমুনা পরীক্ষা বিলম্বিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে সিলেট, হবিগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জকে দুদিনের সংগৃহিত নমুনা ফলাফল প্রেরণ করা হলেও মৌলভীবাজারে আসছে ৩/৪ দিন অন্তর। কখনও কখনও আরও বেশি সময় লাগে। বিষয়টিকে অবহেলা কিংবা বিমাতা সুলভ আচরণের সাথে তুলনা করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জেলার সচেতন মহল। অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষাকে গতিশীল করার লক্ষ্যে হবিগঞ্জে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জন ১টি পিসিআর ল্যাব এবং সিলেটস্থ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অপর একটি ল্যাব স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারে পিসিআর স্থাপনের কোনো সম্ভাবনা নেই। এনিয়ে কোনো জনপ্রতিনিধিরও মাথা ব্যাথা নেই।
জেলার সচেতন মহল যুগান্তরকে বলেন, জনপ্রতিনিধি ও উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের উদাসিনতার কারণে এমনটি হচ্ছে।
এছাড়া জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর অধীনে সিলেটস্থ যক্ষাব্যাধী হাসপাতালে একটি এবং সুনামগঞ্জে অপর একটি পিসিআর ল্যাব মেসিন স্থাপনও প্রক্রিয়াধীন আছে। বাকী রইলো শুধু মৌলভীবাজার। তবে মৌলভীবাজার কবে পিসিআর স্থাপন হবে এটা কেউই নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না।
বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাকের আহমদ অপু বলেন, “মৌলভীবাজারে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে ১০ দিন সময় লাগে। ১০ দিন পরে দেখা যাচ্ছে নমোনা দেয়া অনেকেই করোনায় আক্রান্ত। ওই ১০ দিনে তাদের সংস্পর্শে এসে আরও অনেক আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই যত দ্রুত সম্ভব মৌলভীবাজারে পিসিআর স্থাপন করা হোক। অন্যতায় ছাত্র সমাজ কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
এবিষয়ে জেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার তাওহীদ আহমদ যুগান্তরকে বলেন, শুধু মৌলভীবাজার নয়। প্রায় সব জেলাতেই এরকম সময় লাগছে। মৌলভীবাজারে পিসিআর স্থাপনের কোনো সম্ভাবনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, হবিগঞ্জে একটি স্থাপনের পরিকল্পনা চলছে। সেখানে হলে আমরা লাভমান হব। তবে সারা দেশের ন্যায় ধারাবাহিক মৌলভীবাজারেও পিসিআর স্থাপন করা হবে।