মোহাম্মদ আবু তাহের
গভীর রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে গেল সিলেটবাসীর সর্বস্তরের মানুষের জনপ্রিয় কামরান ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদে । কিছু কিছু দুষ্ট লোকের কারণে এখন আর ফেসবুকের সংবাদ তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্বাস করা যায় না । যাই হোক সত্যিই শেষ পর্যন্ত সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ১৪ জুন দিবাগত রাত আড়াইটায় মায়াময় পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন । বিনয় আর কোমল ব্যবহার দিয়ে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন কামরান । অনেক মানুষই এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না কামরান ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ । খুব সকালে বেশ কয়েকজন আমাকে ফোন করেছেন , অবাক হয়েছেন দুঃখ প্রকাশ করেছেন । বেশ কিছুদিন আগে নাটাবের একটি মতবিনিময় সভায় কামরান ভাই প্রধান অতিথি হয়ে সিলেটের একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টে এসেছিলেন । তার চমৎকার অসাধারণ ব্যবহার ও বক্তব্য আমাদের সকলকে দারুণভাবে মুগ্ধ করেছিল । তার ছিল বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন । তিনি ছিলেন মেয়র হিসাবে একজন খ্যাতিমান সমাজসেবক অন্যদিকে তিনি ছিলেন দেশের খ্যাতিমান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । তিনি কেবল আওয়ামীলীগ নয় তিনি ছিলেন সিলেটবাসীর অবিচ্ছেদ্য অংশ । তিনি সিলেটের সর্বকনিষ্ঠ পৌর কমিশনার ছিলেন । তিনি একবার কারাগারে থেকে ও বিপুল ভোটে সিলেটের মেয়র নির্বাচিত হন । কামরান ছিলেন একজন সৃষ্টিশীল মানুষ । সৃষ্টিশীল মানুষ দেশ, কাল,সমাজ, বয়স সবকিছুর ঊর্ধ্বে । বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ছিলেন এমনই একজন মানুষ তার দায়িত্ববোধ ,মানবতাবোধ, সাধারণ মানুষের উপকার করার আগ্রহ ছিল অনেক প্রশংসনীয় । যে সমস্ত মানুষের কাজ চিন্তা ও মূল্যবোধ মানুষের জীবনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে যায় তারা শারীরিকভাবে গত হলেও তারা মানুষের জীবন ও চেতনায় থেকে যান । বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও ছিলেন তেমনি একজন । মৃত্যু পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সত্য । কিছু কিছু মহৎ লোকের কারণে সমাজ এগিয়ে যায় সভ্যতা বিকাশ লাভ করে । দেশের জন্য সমাজের জন্য ভালো ও কল্যাণমূলক কাজ করার মানসিকতা সবার থাকে না মহৎপ্রাণ লোকদেরই থাকে । পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম ঘটনা মানুষের মৃত্যু ।মানুষ একটা ক্ষণস্থায়ী জীবন নিয়ে পৃথিবীতে আসে । এরপর জীবনের নাট্যমঞ্চে অভিনেতার ভূমিকা পালন করে চলে যায় চিরদিনের জন্য । এ পরিণতি থেকে রেহাই নেই কারোর কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে মহামানব পর্যন্ত ।
মহান আল্লাহর ঘোষণা কুল ইন্নাল মাওতাল্লাজি তাফিররুণা মিনহু ফা ইন্নাহু মুলাক্বিকুমথ বলুন, যে মৃত্যু হতে তোমরা পলায়ন করতে চাও তা একদিন তোমাদের পাকড়াও করবেই । মানবজীবনে মৃত্যুই একমাত্র নির্মম সত্য । কিন্তু আকস্মিক , মহামারী আচমকা বা দুর্ঘটনা কবলিত মৃত্যুর ঝাঁকুনি অনেক বেশি প্রবল হয় । অনেক বেশি বেদনাদায়ক হয় । এসব ঘটনা থেকেও আমরা উপলব্ধি করি না জীবন কতটা অনিশ্চিত আর মৃত্যু কতটা নিশ্চিত । ক্ষমতা , অর্থবিত্ত সহ নানামুখী লোভের লড়াইয়ে আমরা প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করি । কিন্তু আমরা একবারও ভাবি না এক মুহূর্ত পর বেঁচে থাকবো কিনা । সকল মৃত্যুই আমাদের একটি বার্তা দিয়ে যায় আমরা সকলেই একই পথের পথিক । এই যে, ক্ষণস্থায়ী জীবন সে জীবন অর্থবহ হয় তখনই যখন তার কর্মে সন্তুষ্ট হয় স্বজন ও দেশবাসী । মানুষের মৃত্যু হবেই । তারপরও কোনো কোনো মৃত্যু আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাইকে স্তম্বিত করে দেয় ।
না মেনে উপায় নেই জেনে ও মেনে নিতে পারে না মানুষ তার আপনজনের মৃত্যু । মহান আল্লাহর ঘোষণা , আমি মৃত্যু ও জীবন দান করেছি এজন্য যে , মানুষ যাতে কর্মের দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে পারে , আমরা আশাবাদী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সকল ভাল কাজগুলো গ্রহণ করে তাকে মহান আল্লাহ শ্রেষ্ঠত্ব দান করবেন । মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি কামরান মানুষের সাথে যেমন ভালো নম্র ব্যবহার করতেন হে আল্লাহ তুমি ও তার প্রতি কবর হাশর ও কেয়ামত পর্যন্ত নম্র ব্যবহার করে জান্নাতুল ফেরদাউস নসিব কর । এছাড়া বাংলাদেশের দুজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট শেখ মোঃ আব্দুল্লাহ চির নিদ্রায় শায়িত হলেন । উনাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি । আল্লাহ তুমি আমাদের সকলকে করোনাভাইরাস সহ সকল বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করো ।
লেখক কলামিস্ট,ব্যাংকার ও গবেষক