ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কিংবা বন বিভাগের কোনো প্রকার অনুমতি না নিয়ে, শিক্ষক পরিষদের সাথে কথা না বলে এবং কলেজের পরিবেশ কমিটির সাথেও কোনো প্রকার আলোচনা না করে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের গাছ কাটার সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। কলেজের সাবেক শিক্ষক, জেলার সচেতন মহল, জনপ্রতিনিধি, পরিবেশবাদী সংগঠন ও সাবেক শিক্ষার্থীরা নানা সমালোচনা করছেন। অধ্যক্ষের এমন কর্মকান্ডে হতবাগ তারা। মানববন্ধনও করেছে একটি ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
অনেক শিক্ষকরা এনিয়ে ফেইসবুকে ক্ষোভও ও মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। সৈয়দ মুজিব নামের ওই কলেজের সাবেক এক শিক্ষক তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাঠকদের সুবিদার্তে নি¤েœ তার স্ট্যাটাস হুবহ তুলে ধরা হলো, “করোনা কালীন এই দুঃসময়ে দেশবাসী যখন অঘোষিত যুদ্ধে লিপ্ত তখন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ সবাইকে অন্ধকারে রেখে বৃক্ষ কর্তনের মহোৎসবে লিপ্ত। গত কয়েকদিনের স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদপত্রে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় এবং ছাত্রদের মানববন্ধন পালন করায় এই কলেজে দীর্ঘদিন অধ্যাপনা করার সুবাদে না লিখে পারলাম না।
ভাবতে অবাক লাগে অধ্যক্ষ মহোদয় এই জেলা তথা এই শহরের বাসিন্দা। ভেবেছিলাম পত্রিকাগুলোর বক্তব্য বানোয়াট। কিন্তু গতকাল কলেজের ছাত্ররা সরজমিনে কর্তনকৃত গাছগুলোর অবশিষ্টাংশ দেখে এসে যখন বললো, তখন নিজেই খুব বিব্রতবোধ করলাম।
কলেজের অধ্যক্ষ সাফাই গাইলেন তিনি ডেক্স, বেঞ্চ বানানোর জন্য গাছ কেটেছেন। এ কথা তিনি কিভাবে বলতে পারেন? তিনি কি জানেন না কলেজের গাছ কেটে সরাসরি ডেক্স বেঞ্চ বানানো যায় না। গাছ নিলাম করে সব টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়। এই সাধারণ জ্ঞান না থাকলে তিনি অধ্যক্ষ হলেন কিভাবে? উনার কোন স্টাফও কি এই নিয়ম জানেন না। তারাও কি উনাকে এই পরামর্শ দেননি।
কেন সরকারি প্রতিষ্ঠানে গাছ কাটার সাধারণ নিয়ম হলো- প্রথমেই প্রতিষ্ঠান প্রধান তাঁর উচ্চ ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে কতগুলো গাছ? এবং কেন কাটতে হবে তার তালিকা প্রকাশ করবেন। অতঃপর বনবিভাগের অনুমতির জন্য চিঠি পাঠাবেন, বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানে এসে গাছগুলোর প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারন করে গোল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করে যাবে। অতঃপর প্রতিষ্ঠান প্রধান সংশ্লিষ্ট কাগজ সহ মহাপরিচালকের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠাবেন। মহাপরিচালক অনুমতি দিলে সংশ্লিষ্ঠ কমিটির মাধ্যমে গাছগুলো নিলামে তুলবেন এবং প্রাপ্ত সমূদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিবেন।
কলেজের গাছ কাটার চিত্র বলে দেয় কলেজের ভিতর যে দ্র্নুীতি তা করোনার চেয়েও ভয়াবহ। দূর্নীতি করে করে পার পেয়ে গেলে এদের দুঃসাহস এতটাই বেড়ে যায় যে তারা প্রকাশ্যেই দূর্নীতি শুরু করে দেয়। সরকার প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয় কিসের জন্য। তাছাড়া কলেজের উন্নয়ন ফান্ডের টাকা কি করেন। অনেক শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম,তাঁরা গাছ কাটা সহ কোন ব্যাপারে কিছুই জানেন না। এমন কি স্টাফ কাউন্সিলের সম্পাদক মহোদয়ও কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। আপনারা যদি কিছুই জানেন না তবে জানবে টা কে? আমাদের সন্তানদেরে আপনারা কি শিক্ষা দিবেন। দুদক প্রাথমিক শিক্ষকদের পর্যন্ত দেখতে পায় কিন্তু এখানে কি দেখতে পায় না?
কলেজ অধ্যক্ষ ড. ফজলুল আলী তার বক্তব্যে বলছেন, ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কারনে গাছ গুলো ভেঙ্গে যায়। যার কারনে তাৎক্ষণিকভাবে কাটতে হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৯ মে (১৫ রমজান) গাছ গুলো কাটা হয়েছে। আম্পান হানা দেয় ২০ মে। আম্পানে ক্ষতি হয়নি কলেজের কোনো স্থানে।
এ বিষয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর ফাইফ উদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গাছ কাটার বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করা হয়নি। সংবাদপত্রের মাধ্যমে এটা জানতে পারলাম। অধ্যক্ষ এটা ঠিক করছেন কি না এমন প্রশ্নের জনাবে তিনি বলেন, কোনো অবস্থাতেই এটা ঠিক হয়নি।
এবিষয়ে পৃথক পৃথক ভাবে কলেজের একাধিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, গাছ কাটার আগে অধ্যক্ষ আমাদের সাথে কোনো কথা বলেন নি। আমরা এবিষয়ে কিছু জানিনা। এটা আইন সঙ্গত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, কখনো এভাবে কাটা যায় না।
সংবাদ প্রকাশের পর ছাত্র ইউনিয়ন মৌলভীবাজার জেলা শাখার উদ্যোগে কলেজের সামনে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে। নেতৃবৃন্দ এই ঘটনার দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবি করেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে মন্তব্য করছেন, ডেক্স ও বেঞ্চ বানানোর জন্য আলাদা সরকারি বরাদ্দ রয়েছে। কলেজের গাছ কেটে ডেক্স ও বেঞ্চ বানানোর কথা নয়।
মোহাম্মদ খায়রুজ্জামান ইমরান, মুজাম্মেল আলী, জাহের হোসাইন রুবেন, শ্রীয়া শুসমিতা, প্রভীত নাথ, কৃষাণ ভট্টাচার্জ, টি তাসনিম চৌধুরী সহ এভাবে শত শত শিক্ষার্থী গাছ কর্তনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
গাছ কাটার সময় উপস্থিত এক কর্মচারী (চাকুরির নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করা হয়নি) বলেন, ৯ মে (১৫ রমজান) গাছ কাটা হয়। এসময় রোদ ছিল। গাছ গুলো ভেঁঙ্গে পড়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, একটি গাছের উপর বিদ্যুৎতের লাইন ছিল আরেকটি গাছের পাশে পাওয়ার স্টেশন ছিল। তবে কোনোটাই ভেঙ্গে পড়েনি।
মৌলভীবাজার জেলা পরিবেশ সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ও এটিএন নিউজ ও এটিএন বাংলা’র ষ্টাফ রিপোর্টার সৈয়দ মহসীন পারভেজ বলেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনো অবস্থাতে এরকম গাছ কাটা ঠিক হয়নি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান করেন।
মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের গাছ কর্তন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড়
