ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে মা ও মেয়েকে নিজ গৃহে কুপিয়ে খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহষ্পতিবার রাতের কোন এক সময়ে এ নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে উপজেলার ৬ নং আশিদ্রোন ইউনিয়নের পূর্ব জামসী গ্রামে। নিহতরা হলেন মা জায়েদা বেগম (৫৫) ও মেয়ে ইয়াসমিন আক্তার (২৫)।
জানা যায়,শুক্রবার সকাল ৯টা পার হলেও মা ও মেয়ে ঘুম থেকে না উঠলে পাশের টিনশেটের ঘরে থাকা নিহত জায়েদা বেগমের ছোট বোন মিনা বেগমের সন্দেহ হয়। তিনি দরজায় অনেক ডাকাডাকির পর ভেতর থেকে কোন সাড়া শব্দ না আসায় ওই ইউনিয়নের ৭নং সদস্য হবিবুর রহমানকে খবর দিলে তিনিও ডাকাডাকি করেন। পরবর্তীতে খবর পেয়ে এসে ওই ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রাজেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জহর দরজায় ধাক্কা দিয়ে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলে প্রথমে মাকে মৃত অবস্থায় খাটের ওপর পড়ে থাকতে পাওয়া যায়। পরে একই ঘরে কাপড় দিয়ে পেঁচানো মেয়ের লাশও পাওয়া যায়। নিহতের শরীরের একাধিক স্থানে চাকু দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাদের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। এসময় টিনশেডের এ ঘরের পিছনের দিকে বেড়া ভাঙ্গা পাওয়া যায়। এলাকাবাসীর ধারনা খুনীরা বেড়া ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তাদের খুন করে থাকতে পারে।
এদিকে গত কয়েক দিন থেকে উপজেলায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির শব্দে নিহতের হাল্লা চিৎকার কেউ শুনতে পায়নি। ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ, সিনিয়র পুলিশ সহকারি পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান, ওসি আব্দুছ ছালেক, ওসি তদন্ত সোহেল রানা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এছাড়াও পিবিআই ও সিআইডির সদস্যরা আলামত সংগ্রহ ও ঘটনার রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নেমে পড়েন।
এদিকে স্থানীয়ভাবে জানা যায়,পরিবারটি এলাকায় খুবই নিরিহ। দৃশ্যমান কাহারো সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। নিহত ইয়াসমিন আক্তারের পাশ্ববর্তী সিন্দুরখান ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের আজগর আলীর সাথে বিয়ে হয়। তাদের চার ও আট বছর বয়সের দুইজন ছেলে সন্তান রয়েছে। কিন্তু গত দেড় বছর থেকে তাদের মধ্যে পারিবারিক কলহ দেখা দিলে ছেলেরা বাবার সাথে থাকেন এবং নিহত ইয়াসমিন মায়ের বাড়ীতে থাকতেন। তাদের এ কলহ নিয়ে মৌলভীবাজার আদালতে মামলাও রয়েছে এবং ইউনিয়ন পরিষদে কয়েকবার সালিশও হয়েছে বলে জানা যায়। ঘটনার পর মেয়ের স্বামী আজগর আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে ও তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানান শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুছ ছালেক। পুলিশ ও এলাকাবাসীর সন্দেহ পারিবারিক এই কলহ থেকে মেয়ের জামাই দ্বারা নির্মম এই হত্যাকান্ড হয়ে থাকতে পারে।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো.ফারুক আহমেদ পিপিএম (বার) জানান, শ্রীমঙ্গলে মা ও মেয়েকে এক সাথে খুন করার ব্যাপারটি দু:খজনক। আমরা এ ঘটনার সাথে জড়িতদের খুব শীঘ্রই খোঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। আপরাধীদের গ্রেফতার করতে পুলিশ মাঠে রয়েছে।