বিশেষ প্রতিনিধিঃ
করোনা সংকটে বিগত প্রায় ৩ মাস যাবত কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বিশ্বের কয়েক কোটি লোক। অর্থনীতিক সংকটে পড়েছেন অনেকেই। অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছেন বিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশগুলোও। নিজের ক্ষমতা শেষ হয়ে যাওয়ায় অনেকেই এখন উপরের মালিকের সাহায্যকামনা করছেন।
এধারা অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের সংকটে পড়বে পুরো বিশ্ব। মারা যাবেন কয়েক লক্ষ লোক। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পায়নি বাংলাদেশও। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের কয়েকশ লোক মারা গেছেন। অসুস্থ্য হয়েছেন কয়েক হাজার। প্রতিদিন মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর কারণে অর্থনীতিকভাবে বড় ধরনের সংকটে পড়েছে দেশটি। মৌলভীবাজার জেলাও এ থেকে রক্ষা পায়নি। জেলার অনেক মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। সংক্রামনের পর থেকে লকডাউনের কারণে অনেকটা অবরুদ্ধ জেলাবাসী। মধ্যবিত্ত ও নি¤œমধ্যবিত্ত অনেক পরিবারের সঞ্চয় প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবার কারো কারো শেষ হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে ২২ মার্চ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৮৩ জন, মারা গেছেন ২ জন, আইসোলেসনে আছেন ২ জন, বাড়িতে হোম কোয়ারাইন্টানে আছেন ২ হাজার ২’শ ২৭ জন।
করোনা ভাইরাসের শুরু থেকেই জেলার আক্রান্ত, কর্মহীন, নিম্ন আয়ের মানুষ, বেকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও পরিবহন শ্রমিক সহ জেলার বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের পাশে সরকারের পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন জেলার বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার লোক এবং সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এর মধ্যে শুরু থেকেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে মৌলভীবাজারের ‘বিলাস’ পরিবার। এ পর্যন্ত তারা কয়েক হাজার লোকের হাতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। প্রশংসাও অর্জন করেছে জেলাব্যাপি। ঝড়ো করে কিংবা ডেকে এনে তাদের ত্রাণ দেয়া হয়নি। বরং অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়। বিশেষ করে করোনা সংকটে ঝুঁকি এড়াতে এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের প্রতিষ্ঠান “বিলাস ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর” এর মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল শাখা বন্ধ রেখে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। অন্যান্য রমজানে এই ২ প্রতিষ্ঠানে কয়েক কোটি টাকার বেচাকেনা হতো।
বিলাস পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে করোনা সংক্রামনের শুরুতে কর্মহীন ৪’শ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা, কাজ ছাড়াই পুরো মাসের বেতন দেয়া হয় ২’শ ৫০ জন কর্মচারীকে, কাউয়াদীঘি হাওর এলাকায় দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, জেলার টেলিভিশন সাংবাদিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা উপকরণ বিতরণ, রাজনগর উপজেলার একাশন্তুষ্ট এলাকায় শ্রমজীবি মানুষের মধ্যে খাদ্য সহায়তা, পরিবহন শ্রমিকের একাধিক কমিটির সদস্যদের মধ্যে খাদ্য সহায়তা প্রদান এবং দরিদ্র মানুষের মধ্যে বিতরণ করার জন্য প্রশাসনের কাছেও তাদের ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।
বিলাসের পরিচালক মোঃ সুহাদ বলেন, পরিবারের সাধ্য অনুযায়ী শুরু থেকেই সংকটপূর্ণ মানুষের পাশে আছি এবং থাকব। তাদের সহযোগীতার জন্য আমাদের চেষ্ঠা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি ঈদুল ফিতরের সময়ই আমাদের পুরো বছরের ব্যবসা হয়। এ সময়ের ব্যবসা দিয়ে বছরের বাকী সময়ের ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু এবার করোনা সংকটে ঝুঁকি এড়াতে এবং ক্রেতাদের নিরাপত্তার স্বার্থে “বিলাস ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর” বন্ধ রাখা হয়েছে। যার কারনে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, আমাদের অপর ৩ ভাই শামীম আহমদ, সেলিম আহমদ ও আহাদ আহমদ লন্ডনে বসবাস করেন। সেখানেও তারা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন। বিশেষ করে শামীম আহমদ হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়মীত সহযোগীতা করে আসছেন।
বিলাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুমন আহমদ বলেন, মানুষ মানুষের জন্য। মানুষের বিপদে আমাদের মানবিক উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। এদিকে বিলাসের উদ্যোগে করোনা সংকটে অবরুদ্ধকালীন সময়ের শুরু থেকেই মৌলভীবাজারে খাদ্য বিতরণ অব্যাহত আছে। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও বিলাসের কর্মচারীদের বেতন ও খাদ্য সহায়তা নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বেও বিলাস পরিবার বন্যা, মহামারি ও প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ নানা সংকটপূর্ণ সময়ে এজেলার মানুষের পাশে দাড়িয়েছে।