স্টাফ রিপোর্টারঃ প্রবাসীদের নিয়ে চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন মৌলভীবাজারের প্রবাসী পরিবারগুলো। প্রবাসী অধ্যুষিত এজেলার প্রায় প্রতিটি পরিবারের একজন প্রবাসে রয়েছেন। আবার কোনো কোনো পরিবারের সবাই কিংবা অধিকাংশ লোক প্রবাসে থাকেন। পরিবারে সচ্ছলতা আনতে এবং মা-বাবার মুখে হাঁসি ফুটাতে দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন তারা। বিশেষ করে এজেলার বেশির ভাগ প্রবাসী ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। ইউরোপে করোনা বয়াবহ আকার ধারণ করায় চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বাড়িতে থাকা প্রবাসী পরিবারের সদস্য এবং তাদের স্বজনরা।
মৌলভীবাজারে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোববার রাতে ৬৫ বছর বয়সী এক প্রবাসী নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তিনি পৌর শহরের কাশিনাথ সড়কের দীঘিরপারের মকসুদ ভিলার বাসিন্দা। গত ২০/২৫ দিন আগে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই ঘটনার পর থেকে প্রবাসী পরিবারের মধ্যে আরও আতংক বেড়েগেছে।
এ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশে মৌলভীবাজারের ৩ হাজার ৩’শ ৬০ জন প্রবাসী দেশে এসেছেন। এর মধ্যে ৪’শ ৮৬ জন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টেনে রাখা হয়েছে। এর বাহিরের প্রবাসীদের হোম কোয়ারেন্টেনের আওতায় আনার জন্য কর্মীরা কাজ করছে। তবে নিজ উদ্যোগে না আসলে কে কোথায় আছেন বলা মুশকিল।
বেশির ভাগ প্রবাসীই বাসায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছেন মৌলভীবাজারের অনেক প্রবাসী। এমন পরিস্থিতিতে ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত মৌলভীবাজারের বহুসন্তানকে নিয়ে আতঙ্ক ও উৎকন্ঠায় রয়েছেন তাদের পরিবার ও স্বজনরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা নিজ নিজ ধর্মের রীতি অনুযায়ী বাসা বাড়িতে বসে প্রার্থনা করছেন। মুসলিম নারী-পুরুষরা নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতে সময় পার করছেন।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাস নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এখন গোটাবিশ্ব। চীনের উহান প্রদেশ থেকে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে। ইরানের পর ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ ইতালিতে ভয়ানক আঘাত হেনেছে এ ভাইরাস। এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা তোরো হাজারের অধিকে পৌঁছেছে।
জেলার কুলাউড়া উপজেলার ছকাপন গ্রামের ফ্রান্স প্রবাসী ফয়ছল আহমদের মা রঙ্গি বেগম বলেন, ছেলের কথা মনে পড়লে রাতে ঘুম আসে না। এ পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় সময় পার করছি। কমলগঞ্জ উপজেলার লন্ডন প্রবাসী করিম মিয়ার মা বলেন, মুখে খাবার ডুকছে না। নামাজ পড়ে ছেলের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করছি। ইটালি প্রবাসী রাজনগরের সাইফুর রহমানের বাবা লিয়াকত মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর থেকে কোনো অবস্থাতে মনকে শান্ত রাখতে পারছি না। প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের জীবন কঠিন সময় পার করছি।
এ অঞ্চলের অধিকাংশ পরিবারের আত্মীয়-স্বজন বছরের পর বছর প্রবাসে বসবাস করছেন। করোনা ভাইরাস সেই পরিবারগুলোর মধ্যে দুশ্চিন্তার বড় সংকট তৈরী করেছে। ঘরে ঘরে চলছে নিরব কান্না।
Post Views:
0