হোসাইন আহমদ ঃ
মৌলভীবাজার পৌর শহরের সেন্টাল রোডের পিংকি ষ্টোরে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে একই পরিবারের ৩জন সহ ৫ জন পুড়ে মারা গেছেন। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এই ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে মৌলভীবাজার ফায়ার ষ্টেশন ও শ্রীমঙ্গল ফায়ার ষ্টেশন সহ ৪টি ইউনিট দেড় ঘন্টা চেষ্টা করে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন, পিংকি স্টোরের সত্ত্বাধিকারী সুভাষ রায় (৬৫), সুভাষ রায়ের ছোট ভাই মনা রায়ের স্ত্রী দিপ্তী রায় (৪৫), সুভাষ রায়ের মেয়ে প্রিয়া রায় (১৫), সুভাষ রায়ের শালক সজল রায়ের স্ত্রী দিবা রায় (৪০) ও শালক সজল রায়ের ৪ বছরের শিশু দিপীকা রায়। এসময় স্থানীয়রা মনা রায় ও মিলনকে উদ্ধার করেন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মর্মান্তিক এ ঘটনায় মৌলভীবাজারে শোকের মাতম বিরাজ করছে। নিহত সুভাষ রায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ প্রভাত রায়ের ছেলে। দু’তলা এই বিল্ডিংয়ের নিচে সুভাষ রায়ের জুতা ও ব্যাগের দোকান ছিল এবং উপরে সুভাষ রায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।
নিহত সুভাষ রায়ের ভাই আহত মনা রায় বলছেন, ইলেক্ট্রনিক্স সার্কিট থেকে এই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে গ্যাসের রাইজার ফেটে আগুন লেগেছে বলে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে।
এঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি ঘটন করা হয়েছে। এই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজেস্ট্রেট তানিয়া রহমানকে। এদিকে মৌলভীবাজার পৌরসভার পক্ষ থেকেও পৃথক ৭ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি ঘটন কর হয়েছে। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয়েছে কাউন্সিলর জালাল আহমদকে। সংবাদ সম্মেলনে আগুনের সূত্রপাতের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বলেননি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারকে ১ লক্ষ টাকা দেয়া হয়।
দোকানে কর্মচারী অরবিন্দু জানান, ২২ জানুয়ারী ছিল সুভাষ রায়ের মেয়ে পিংকির বিয়ে হয়। বিয়ে উপলক্ষে স্বজনরা তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ২৭ জানুয়ারী ছিল বৌভাত। বৌভাত শেষে অনেক স্বজনরাই তাদের বাড়িতে ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ৩জন পরিবারের ও ২জন আত্মীয়। নিহতদের লাশ আগুনে পুড়ে মেঝেতে ফেলা অবস্তায় ছিল। আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা লাশ উদ্ধার করে।
প্রত্যক্ষদর্শী আরাফত চৌধুরী জানানঃ সকাল ১০টা ২০ মিনিটের সময় তারা দেখেতে পান পিংকি ষ্টোরের উপর দিয়ে ধোয়া বের হচ্ছে। এসময় তারা দেখেন দোকানে ৩টি সাটারের মধ্যে একটির অর্ধেক খোলা। এ অবস্থ দেখে তারা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেন। পরবর্তীতে দেড় ঘন্টা ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। তখন ঘরে থাকা ৩জন মহিলা ও ১জন মেয়ে বাসার পিছন দিয়ে বেরিয়ে আসেন। তবে ঘরে কতজন লোক ছিলেন এখন পর্যন্ত সঠিকভাবে জানা যাচ্ছে না। বের হয়ে আসা ৩ জন মহিলারও নাম জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে বের হয়ে যাওয়া মহিলার সুভাষ রায়ের নিকট আত্মীয়।
সোমবার শেষ হয় পিংকির বৌভাতঃ পিংকি ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী নিহত সুভাষ রায়ের বড় মেয়ের বৌভাত ছিল সোমবার ২৭ জানুয়ারী। ২২ জানুয়ারী মৌলভীবাজার পৌর শহরের কলিমাবাদ এলাকায় পিংকি’র বিয়ে হয়। আত্মীয় স্বজন অনেক এখনও পিংকিদের বাড়িতে ছিলেন। কিন্তু মর্মান্তিতক দুর্ঘটনায় পিংকির বাবা সুভাষ রায়, ছোট বোন প্রিয়া রায়, চাচী দিপ্তী রায়, মামী দিবা রায়, ৪ বছরের মামাতো বোন দিপীকা রায় নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের পরিবারে শোকের মাতম বিরাজ করছে। ৫ ভাই ও ত বোনের মধ্যে পিংকি সবার বড়।
বিয়ের পরবর্তী আনন্দ কেড়ে নেয় আগুনঃ বাড়িতে বিয়ের আনন্দ। বিয়ের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে বাসায় আত্মীয় স্বজনের সমাগম। কতই না আনন্দ ছিল বাসায়। এই আনন্দ বেশীক্ষণ স্থায়ী হয়নি আগুনের লেলিহান শিখায়। মুহূর্তেই বিয়ের পরবর্তী আনন্দ কেড়ে নেয় আগুন।
সুভাষ ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানঃ পিংকি ষ্টোরের সত্ত্বাধিকারী সুভাষ রায় ছিলেন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযোদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর হাতে তার বাবা ডাঃ প্রভাত রায়ের ছেলে।
বিভিন্ন মহলের শোকঃ এই ঘটনার ৫ জনের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে শোক প্রকাশ করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ূ পরিবর্ত মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন, জেলা প্রশাসক, পৌর মেয়র, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ড্রাস্ট্রি, বিজনেস ফোরামসহ অনেকে সামাজিক সংগঠন শোক জানায়।
শশান ঘাটে নেয়া হয়েছে লাশঃ লাশের শেষকৃত্যের জন্য মঙ্গলবার বিকালে পৌর শহরের শশান ঘাটে নেয়া হয়েছে। স্বজনরা বলছেন রাতেই তাদের শেষকৃত্যে করা হবে।
স্থানীয়দের ধারণা, সিগারেটের আগুন কিংবা কয়েলের ধোয়া থেকে আগুন লাগেছে।
এ বিষয়ে মৌলভীবাজার ফায়ার ষ্টেশনের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হারুন পাশা বলেন, গ্যাসের রাইজার ফেটে আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তদন্ত করে সঠিক কারণ উদঘাট করা হবে। তবে মৌলভীবাজার জালালাবাদ গ্যাস ফিল্ডের ম্যানেজার আওলাদ হোসেন গ্যাস থেকে আগুনের সূত্রপাতের বিষয়টি অস্বীকার করেন।
পুলিশ সুপার মোঃ ফারুক আহমদ বলেন, খবর পেয়ে আমার ফোর্স ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সহযোগীতা করে।
জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন বলেন, খুব শীঘ্রই আগুনের সূত্রপাতের কারণ উদঘাটন করা হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।