ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মৌলভীবাজারে ব্যাঙের ছাতার ন্যায় গড়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী। জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়কের উদাসিনতায় এমনটি হচ্ছে বলে জেলার সচেতন মহলের অভিযোগ। একটি সূত্র বলছে, জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাদল সিকদারের সহযোগীতায় লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী গুলো দিনের পর দিন জেলা জোড়ে রমরমা অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দেখেও না দেখার বান করছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী থেকে জেলা ঔষধ প্রশাসন মাসে বড় অংকের মাসোরা আদায় করছে। আবার কিছু কিছু ফার্মেসীকে জরিমানার ভয় দেখিয়ে নিয়মীত টাকা আদায় করা হচ্ছে। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক প্রতি মাসে জেলার সবকটি উপজেলায় পরিদর্শনে যান। উপজেলা পরিদর্শনের নামে যেখানে গিয়ে একটি ফার্মেসীতে বসে পুরো উপজেলার মাসোরার টাকা তুলে নিয়ে আসেন।
এদিকে ঔষধ প্রশাসনের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রমরমা ফার্মেসী ব্যবসা চলছে। এসব ফার্মেসীতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ ঔষধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা প্রকার ঔষধ অবাধে প্রতিনিয়ত বিক্রি করছে। অনেক ফার্মেসী ব্যবসায়ীর নেই কোন ফার্মাসিষ্ট প্রশিক্ষণ। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন রোগীরা।
ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নম্বর ধারার ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামের ২ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে ‘কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভূক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ব্যতিরেকে কোনো ড্রাগ বিক্রি করতে পারবে না।’ কিন্তু এ সকল বিধি বিধানকে তোয়াক্কা না করে জেলার অধিকাংশ ফার্মেসী চলছে প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট ছাড়াই। নামমাত্র একটি সার্টিফিকে দেখিয়ে একাধিক ফার্মেসীতে ব্যবসা চলছে।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পুরো জেলায় তাদের তালিকাভুক্ত ১ হাজার ৮’শ ৯৯টি ফার্মেসী রয়েছে। এর মধ্যে ১৪ জানুয়ারী পর্যন্ত লাইসেন্সের মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ৮’শ ১৭টির। এর মধ্যে বড়লেখা উপজেলায় ২’শ ৫৮টি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ৪৮টি, জুড়ী উপজেলায় ১’শটি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ৫৪টি, কমলগঞ্জ উপজেলায় ২’শ ৪৫টি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ৯৪টি, কুলাউড়া উপজেলায় ৩’শ ২টি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ৪৫টি, রাজনগর উপজেলায় ১’শ ৯৬টি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ৬২টি এবং শ্রীমঙ্গল উপজেলায় ২’শ ৭০টি ফার্মেসীর মধ্যে মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে ১’শ ১৩টির। অনুসন্ধানে জানা গেছে এর বাহিরেও অনেক ফার্মেসী রয়েছে। যে গুলো ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক এর তালিকাভুক্ত হয়নি। ওই ফার্মেসী গুলোও পাড়া মহল্লায় রমরমা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ফার্মেসীগুলো কোনো আইন তোয়াক্কা না করেই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতিত সিপ্রোফ্লোক্সাসিলিন, এজিথ্রোমাইসনসহ অনেক হাই অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি, ব্যাথা নাশক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অবলীলায় বিক্রি করছে।
জেলা ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ বাদল সিকদার বলেন, “লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী গুলোকে ধারাবাহিক নোটিশ দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে মাসোরা টাকা আদায়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
Post Views:
0