স্টাফ রিপোর্টারঃ মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাহাদুরপুর, বাজরাকোনো ও নাদামপুর সংলগ্ন কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন থামছে না। ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে আ’লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গত ১ মাস যাবত সেলু মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। ফলে ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে নদী তীরবর্তী কয়েকটি এলাকা। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও এ পর্যন্ত প্রশাসন কার্যকরি কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আবার প্রভাবশালীদের ভয়ে এলাকার নিরিহ মানুষ আন্দোলনও করতে পারছেন না। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে আতাত করে প্রতিনিয়ত এ কাজ চলছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করছেন সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফ আলী ওরফে বালু আশরাফ।
জানা যায়, শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন ভরাটের কথা বলে বালু আশরাফ ইতিমধ্যে প্রায় শতকোটি টাকার বালু বাহিরে বিক্রি করেছেন। একটি সূত্র বলছে শুধু সিলেট ক্যান্টেনমেন্টেই প্রায় ৩৫/৪০ কোটি টাকার বালু দেয়া হয়েছে।
আবার একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল হক শেফুলও বালু সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত। আ’লীগ ও বিএনপির নেতারা ভাগবাটোরা করে পকেট ভারি করছেন। স্থানীয়রা বলছেন নেতারা রাজনীতিতে ভিন্ন দলের হলেও অর্থের স্বার্থে কেউই কারো বিরুদ্ধে কথা বলছেন না। এবিষয়ে বিএনপি নেতা খলিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক শেফুল অভিযোগ গুলো অস্বীকার করে বলেন, “একজন মানুষের অনুরোধে আমার ইউনিয়নের ভীতরে সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফকে বালু উত্তোলনের সুযোগ দেই। বাহাদুরপুর ও নাদামপুর দুই থেকে আড়াই মাস বালু তোললেও কেউ কিছু বলেননি। কিন্তু আমার এখানে আসার পর পরই কানা ঘোষা শুরু হয়। আমি নাকি সুবিধা নিচ্ছি। তাদের এই মিথ্যা অভিযোগের কারণেই রাগ করে আমি এমদাদুল হক চুন্নু ও দিলদার মিয়া এখান থেকে তোলার অনুমোধন দিয়েছি।
এলাকাবাসীর কাছ থেকে জানা যায়, সদর উপজেলার বাহাদুরপুর, বাজরাকোনো ও নাদামপুর সংলগ্ন কুশিয়ারা নদী থেকে মায়ের দোয়া, মক্কা-মদিনা ও আরেকটি (নাম লেখা নেই) সেলু মেশিন দিয়ে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন হচ্ছে। অথচ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ওই এলাকায় কোনো ঘাট ইজারা দেয়া হয়নি। এর ফলে ঝুকির মধ্যে পড়েছে নিজ বাহাদুরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। মেশিনের শব্দে বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। রাতে এলাকার মানুষ ঘুমাতে পারছেন না। হুমকিতে পড়েছে ওই এলাকার মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘরবাড়ি। একটি চক্র দাপট ও ভয় দেখিয়ে স্থানীয় লোকজনদের জিম্মি করেই বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের এই অবৈধ কার্যক্রম। এর প্রতিবাদে গত প্রায় ১৫ দিন আগে বাহাদুারপুর ও নাদামপুরের স্থানীয় বাসিন্দারা একটি মানববন্ধন করেন। কিন্তু শেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তারা মানববন্ধন স্থলে গিয়ে এলাকাবাসীকে থামিয়ে দেন। এঘটনার পর থেকে ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে। তারা বলছেন, যুক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করলেও পুলিশ রহস্যজনক কারনে বন্ধ করে দেয়।
মনুমুখ ইউনিয়ন আ’লীগের এক সিনিয়র নেতা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, এখান থেকে মৌলভীবাজার, রাজনগর ও উসমানীনগর আ’লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এবং প্রশাসনের উপজেলা পর্যায় থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারাও সুবিধা পাচ্ছেন। যার কারণে ইজারাদারকে কোনো অবস্থাতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কোনো নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে যেভাবে ইচ্ছা বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনকারীদের বাধাঁ দিলে তারা বলে, “আমাদের কিছুই করতে পারবেন না। আমরা সব জায়গায় ভাগ দিচ্ছি”।
এবিষয়ে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বাহিরে থাকায় কথা বলতে রাজি হননি। তবে সদর উপজেলা ইউএনও শরিফুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা তদন্তের জন্য ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে বলেছি। এবিষয়ে কাউকেই কোনো ছাড় দেয়া হবে না। তিনি প্রশাসনে সুবিধা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।