স্টাফ রিপোর্টারঃ ছোট্ট পোকা। তবে বড় ক্ষতি করে সে। এ পোকা কমলার উপর বসলে বা এর উপর দিয়ে হেঁটে গেলে সেটি ঝরে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা।
মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার বাগানগুলোতে এ বছর কমলার ভালো ফলন হয়েছে। তবে পোকার আক্রমণে গাছ থেকে কমলা ঝরে পড়ায় বাগানমালিক ও চাষিরা উদ্বিগ্ন। অনেক চাষি পোকার আক্রমণে আগেই কমলা বিক্রি করেছেন।
জুড়ি উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়নের রূপাছড়া, লালছড়া, হায়াছড়া, শুকনাছড়া, কচুরগুলসহ পাহাড়ি এলাকার কমলা বাগান ঘুরে চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের শুরুতে কমলায় গান্ধি পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণে গাছ থেকে ঝরে পড়ছে কমলা। এ কারণে চাষিরা আগাম বিক্রি করে ফেলছেন।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১৭৮ হেক্টর জমিতে ১৪৬টি কমলা বাগানে রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় জুড়ী উপজেলায় ৯২ হেক্টর জমিতে, বড়লেখায় ৬০ হেক্টর, কুলাউড়ায় ২০ হেক্টর জমিতে এই কমলা চাষ। এর মধ্যে কমলা চাষি রয়েছেন ১৪৬ জন। গত বছর প্রতি হেক্টরে কমলার উৎপাদন ছিল চার থেকে সাড়ে চার টন। এ বছর প্রতি হেক্টরে উৎপাদন ৬ মেট্টিক টন।
লালছড়া এলাকার কমলা বাগানের মালিক জয়নুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমার বাগানে প্রায় ১২০০ গাছ আছে। সব গাছেই কমলা ভালো এসেছে। কিন্ত গান্ধিপোকার কারনে কমলার গুনাগুন ভখালো থাকে না। গাছগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ‘শো-দেড়শো’ কমলা ঝরে পড়ে। কমলার ওপর দিয়ে যদি গান্ধিপোকা একবার হেঁটে যায় দুই একদিনের মধ্যে সেটি ঝরে পেড়ে যায়।
তিনি বলেন, এই প্রজাপতি পোকা মানে ‘গান্ধিপোকা’ রাতে কমলায় আক্রমন করে। যে কারনে কমলাগুলো মিষ্টি হতে পারে না। তাই এসব কমলা টক হওয়াতে কম দামে বিক্রি করতে হয়।
কথা হয় স্থানীয় আরেক কমলা চাষী খোরশেদ আলমের সাথে কথা হয়। তার বাগানে এক হাজার গাছ রয়েছে। তিনি জানান, আমি মৌসুমের শুরুতেই বাগানের কমলা বিক্রি করে দিয়েছি। শুধুমাত্র পোকার আক্রমণের কারণে। দেরি করলে আর কমলাও পাওয়া যাবে না। যে গাছ সবচেয়ে ভালো কমলা ধরে সে সব গাছে পোকাগুলো আক্রমন করে। পরবর্তী বছরে আর কমলা ধরে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কমলা গাছে কার্টাপ গ্রুপের কীটনাশক ব্যবহার করলে গান্ধি পোকা, ফলের মাছি পোকা দমন করা সম্ভব। লেবু জাতীয় গাছে ফেনা রোগ, গ্রিনিং, ফোম ডিসিস আগা মরা (ডাই বেক) ও গামোসিস (গাছ থেকে আঠার মতো কষ ঝরা) ধরনের রোগ দমনে কপার অক্সিক্লোরাইড ও হেক্সাকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১৫ দিন পর পর তিন বার স্প্রে করলে এই জাতীয় রোগ দমন করা যায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী লুৎফুল বারী জানান, নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করলে গান্ধি পোকা দমন সম্ভব। এ ছাড়া লেবু জাতীয় গাছে আগা-মরা রোগ হয়ে থাকে। এটাতেও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। আমরা চাষিদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ সহ পরামর্শ দিয়ে থাকি।
তিনি আরোও জানান, কমলার উৎপাদন নিশ্চিত করতে বর্ষার পর পর গাছের ডাল ছাঁটাই এবং খরার সময় সেচ দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে, পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসে সেচ দিলে রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। এজন্য জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বাগানগুলোতে পানির পাম্প বসিয়ে ডিপ সেচের মাধ্যমে এ সমস্যা দূর করার জন্য একটি প্রকল্পের কথা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার চাষীরা উপকৃত হবেন।