বিশেষ প্রতিনিধিঃ
‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ কার্যকর হওয়ার পর থেকে মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে ভীড় করছেন গাড়ি চালক ও মালিকগন। গ্রাহক সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে দালালের সংখ্যাও বেড়েছে কয়েক গুণ। ওই অফিসের আশপাশে প্রতিদিন প্রায় ১’শ জন দালাল কাজ করে। চুশিয়ে নিচ্ছে গ্রামগঞ্জ থেকে আশা মানুষের পকেটের টাকা। একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এর ভাগ পাচ্ছেন অফিস প্রধান থেকে শুরু করে অফিসের প্রত্যেকেই।
জানা যায়, মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসে দালালদের হয়রানির বিষয়টি ইতি পূর্বে একাধিকবার জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। অভিযোগ রয়েছে এখানে দালালের মারফতে ফাইল না আসলে কোনো কাজই হয়নি। ফাইলের পরিচয় শনাক্ত করতে দালালরা ব্যবহার করেন সাংকেতিক চিহ্ন।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মৌলভীবাজর বিআরটিএ অফিসে গেলে দেখা যায়, গাড়ি সংক্রান্ত কাজের জন্য জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রায় ২’শ লোক এসেছেন। অফিসের ভীতরে কোনো নিয়ম শৃঙ্খলার লেসমাত্রই নেই। দালালরা নিজে সীল মারছে এবং টেবিল কিংবা আলমিরা থেকে ফাইল নিজ হাতে বের করে প্রয়োজনীয় কাগজ বাহির করছে। অর্থ্যা যে যার মতো করে কাজ করছে। দালালদের কাজ দেখে মনে হচ্ছিল তারাই অফিসের হরতাকর্তা কিংবা অফিস স্টাফ। কোনো অফিস স্টাফ তাদের বাধাও দিচ্ছেন না। এ সময় বিশৃঙ্খলা হলে আশরাফুল নামের এক অফিস পিয়ন চিৎকার করে অফিস স্টাফ দেলোওয়ার ও দালাদের ধমক দেয়। পিয়নি অফিস স্টাফকে ধমক দেয়ার পরও তিনি কোনো প্রতিবাদ করেননি। পরে কথা বার্তায় বুঝা গেল এটাও তাদের পূর্ব শিখানো কৌশল মাত্র।
এ সময় দেখা যায় রফিক নামের এক অফিস স্টাফকে তার টেবিল থেকে ডেকে ভীতরে বাথরুম ও স্টীলের আলমিরার কাছে নিয়ে যায় লাল গেঞ্জি পরিহিত নাজমুল নামের এক দালাল। সেখানেই টাকার লেনদেন হয় এবং রফিক কাগজপত্র বুঝিয়ে রাখেন। এদিকে অফিসে সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও অফিস চলাকালিন সময়ে ভীতরের ক্যামেরা বন্ধ থাকে। যেমনটি ছিল বৃহস্পতিবারও।
বড়লেখা থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা সুমন নামের এক চালকের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দালালের মাধ্যম ছাড়া লাইন ঘাট পাওয়া যায়না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আশা অনেক লোকই একই মন্তব্য করেন। একাধিক দিন এসে ঘুরে যাই কিন্তু জমা দিতে পারিনি।
অভিযোগ রয়েছে মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিস কোনো প্রকার পরীক্ষা ছাড়াই বাড়তি টাকার বিনিময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয়। জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পরও অফিসের ভীতরেই বাম হাতের লেনদেন এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি। জেলা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমানের কুটির জোর কোথায় এমন প্রশ্ন জেলার সাধারণ মানুষের মধ্যে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মৌলভীবাজার বিআরটি অফিস দালালদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে। এখানে দালালদের মারফত ছাড়া কোনো কাজই করানো সম্ভব নয়। প্রতিদিন ৫০/৬০ জন দালাল এখানে কাজ করেন। এর মধ্যে অন্যতম বাবলু, সোহা, সাদিক, মুজাহিদ, আলাল, জনি, সুন্দর আলী, আহাদ ওরফে আহাদ মাষ্টার, নীল মনি, মশাহিদ, খোকন, জাহিদ, মাহমুদ ও অজিত। পরিচয় গোপন রেখে আলাল নামের এক দালালের সাথে কথা হলে সে বলে, “১০ হাজার টাকা দিবেন, কোনো পরীক্ষা ছাড়াই ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া যাবে”।
এবিষয়ে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের মৌলভীবাজার জেলা সভাপতি খিজির মুহাম্মদ জুলফিকার বলেন, অধিকাংশ ড্রাইভার পরীক্ষা না দিয়ে দালালের মাধ্যমে ড্রাইভিং লাইসেন্স সংগ্রহ করে।
নাম গোপন রাখার শর্তে মৌলভীবাজার জেলা বারের একজন আইনজীবি বলেন, প্রতিমাসেই কোর্টের পাশে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ড্রাইভিং লাইসেন্সে জন্য আবেদনকারীদের প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেয়া হয়। কিন্তু দেখা গেছে অনেকেই প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে না পারলেও পরবর্তীতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পান। আবার এমনও নজির রয়েছে কোনো ধরনের পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ না করেও মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিস থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার।
জেলা বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, গত পরশুও অফিস স্টাফকে নিয়ে বসে হুশিয়ার করে দিয়েছি। কিন্তু তার পরেও যদি কেউ অবৈধ লেনদেনের সাথে ঝড়ায় হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরীক্ষায় উত্তির্ণ না হল ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়া হয় এমন অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।
দালালরাই মৌলভীবাজার বিআরটিএ অফিসের হরতাকর্তা
