কুলাউড়া প্রতিনিধি :-
স্বামী পরিত্যক্তা রাহেলা সিদ্দিকা। মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। যিনি কখনও নিজেকে সাংবাদিক, কখনও যুবলীগ নেত্রী, কখনও শ্রমিক ফেডারেশনের নেত্রী ও কখনও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের নেত্রী পরিচয় দিয়ে দাপড়ে বেড়ান (কুলাউড়া-জুড়ী-বড়লেখা) তিন উপজেলায়।
বছর খানেক থেকে কুলাউড়া শহরের উত্তরবাজারস্থ ফরমুজাবাদ আবাসিক এলাকায় একটি বাসার ৩য় তলায় বিশাল ফ্লাট ভাড়া নিয়ে একাই বসবাস শুরু করেন। কিছু দিন পর থেকেই তার বাসায় শুরু হয় অজানা-অচেনা নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা। কানাগোষা শুরু হয় পাড়ার মানুষের মধ্যে। বিষয়টি নিয়ে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে মৌখিকভাবে অবগত করেন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ কুলাউড়ার কর্মরত সাংবাদিকরা। কিন্তু কোন প্রতিকার না পেয়ে শেষতক এই প্রতারক নারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন পত্রিকার ২৫ জন সাংবাদিক স্বাক্ষর করে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা যায়, রাহেলা সিদ্দিকা জুড়ী উপজেলা শহরের একটি দর্জির দোকানে সেলাইয়ের কাজ করতেন। সে সময় মাদকসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িয়ে পড়েন। জুড়ীর কয়েকজন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গের তোপের মুখে পড়ে ওই এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন। কুলাউড়ায় এসে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে উত্তর কুলাউড়া এলাকার বিজয়া রোডের একটি বাসায় ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। অশ্লিল চালচলনের কারনে সে বাসা থেকেও বিতাড়িত হন। আশ্রয় নেন শহরের উত্তরবাজারস্থ ফরমুজাবাদ আবাসিক এলাকায়। বাসা ভাড়া নিয়েই শুরু করেন আগের মতই নানা অপকর্ম। শুরু হয় নানা বয়সী মানুষের আনাগোনা। এই বাসায় পতিতাবৃত্তির সাথে সাথে চলে ইয়াবা সেবন ও বিক্রি। পাশাপাশি চলে বিভিন্ন মানুষকে ব্লেকমেইল করে চাঁদা আদায়।
কুলাউড়া রেলওয়ে রিক্রিয়েশন ক্লাবে চাঁদা দাবি করলে তাকে সেখানে আটকে রাখে ক্লাবের সদস্যরা। এই কথিত সাংবাদিকের কোন দৃশ্যমান আয় রোজগার না থাকলেও বসবাস করেন শহরে বিশাল বাসায়। সারারাত তিনি শহরের অলিতে গলিতে, বিশেষ করে স্টেশনে বিচরণ করেন। সাংবাদিকের প্রভাব খাটিয়ে স্টেশনের টিকিট কালোবাজারির সাথে জড়িত। দৈনিক যুগান্তরসহ বেশ কিছু অনলাইনে এই টিকিট কালোবাজারির নামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে বিয়ে করে ব্ল্যাকমেইলিং করা যার প্রধান নেশা ও পেশা। জুড়ী উপজেলায় একটি ব্যাংকের নৈশপ্রহরীর সাথে সখ্যতা গড়ে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেন। ব্ল্যাকমেইলের শিকার সেই নৈশপ্রহরী বাধ্য হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। কিন্তু কিছুদিন পরে সেই নৈশপ্রহরীর পরিবারকে জিম্মি করে দেড় লাখ টাকা নিয়ে ছাড়াছাড়ি হয়। এরপর বড়লেখা উপজেলার দরগাবাজারের বাসিন্দা মিতুন নামক এক সিএনজি অটোরিক্সা চালককে ৩ দিনের জন্য বিয়ে করে। তাকে ব্ল্যাকমেইল করে ১০ লাখ টাকার কাবিন করে। ৩দিন পরে তালাকের নামে তার কাছ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিয়ে সেই সিএনজি অটোরিক্সা চালক রাহেলার খপ্পর থেকে মুক্তি পায়। প্রতারক রাহেলার প্রতারণার শিকার হন জুড়ী উপজেলার শীর্ষস্থানীয় পত্রিকার ২ সাংবাদিক। দু’জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে কুলাউড়া থানায় জিডি করে। পরে টাকার বিনিময়ে জিডি তুলে নেয়। কুলাউড়ার এক সিনিয়র সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সিলেট কতোয়ালী থানায় মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে জিডি করে।
সর্বশেষ কুলাউড়ার বাসা থেকে মোবাইল হারানোর কথা বলে কুলাউড়া থানায় অভিযোগ দিয়ে উত্তরবাজারস্থ একটি হোটেলের নিরীহ কর্মচারিদের হয়রানি করে। সেই হোটেল বয়দের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিলে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে বলে জানায়।
বর্তমানে যে বাসায় উক্ত প্রতারক বসবাস করছে সেই ফরমুজাবাদ আবাসিক এলাকার মানুষ তার অপকর্মে অতিষ্ঠ। বাসার মালিক তাকে বাসা ছাড়ার কথা বললেও সে বাসা না ছেড়ে উল্টো বাসার মালিককে নারী নির্যাতন মামলার হুমকি ধামকি দেয়। এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলে হামলা, মামলার হুমকি দেয়। ফলে সাধারণ মানুষ অনেকটা অসহায়।
কুলাউড়া থানার নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন পুলিশ অফিসার জানান, ভাই আমরা ওকে ভয় পাই। থানায় আসলে রুম থেকে বেরিয়ে যাই। মহিলা মানুষ কোন সময় কার কাছে কি অভিযোগ করবে। মান সম্মান থাকবে না। শুধু পুলিশ সাংবাদিক নয় কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ আতঙ্কে থাকে এই নারী প্রতারকের। কাকে কখন তার প্রতারণার জালে জড়াবে তা বলা মুশকিল। তাই কুলাউড়ায় কর্মরত ২৫ জন সাংবাদিক এই প্রতারকের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে রাহেলা সিদ্দিকার মোবাইল ফোনে কল দিলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে কি অভিযোগ আমি নিজেও জানি না বলে ফোন কেটে দেন।
এদিকে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সাংবাদিকদের অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে আমলে নেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।