বিশেষ প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার জেলার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে বিবেচনায় রেখে পর্যটনকে জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য মৌলভীবাজারের ইতিবাচক ভাবমূর্তি বিনির্মাণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বিশ্বে পরিচিত করা, জেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির লালন, স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করা, বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন, স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি, জনসাধারণকে উন্নয়নের মহাসড়কের সহিত সম্পৃক্ত করা, জেলার দারিদ্রতা দূর, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ সাধনের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়ন তরান্বিত করা। কিন্তু বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এজেলায় পর্যটন বিকাশের কার্যক্রম অনেকটা দিবস পালনের মধ্যে সিমাবদ্ধ। পর্যটন শিল্পকে উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা মাফিক কোনো কাজই হচ্ছে না। গেল বছর মৌলভীবাজারের পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জেলা প্রশাসন।
এদিকে জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশায় গেল বছর পর্যটক অনেকটা কমেছে। এর ফলে কয়েক লক্ষ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে সরকার। লোকসানে পড়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা। আগামী শারদীয় দূর্গা উৎসবেও এর প্রভাব পড়বে বলে তারা ধারণা করছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যটক হারানোর মূল কারণ বিভিন্ন সড়কের বেহাল দশা ও ঘন ঘন ট্রেন দূর্ঘটনা। এসব কারণে পর্যটক কমছে। আবার ট্রেনের টিকেট কম থাকায় পর্যটকদের বিড়ম্ভনার স্বীকার হতে হয়। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন পর্যটক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। পাশাপাশি শমসেরনগর বিমান বন্দরটিও পূণরায় চালু করার দাবি তুলছেন তারা। বিমান সুবিধা না থাকায় অনেক পর্যটকরা মৌলভীবাজার আসতে চান না।
জেলায় পর্যটকদের জন্য রয়েছে নয়নাভিরাম শতাধিক চা বাগান, জীব্যবৈচিত্র্য ভরপুর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, দেশের বৃহত্তম জলরাশি মাধবকুন্ড জলপ্রপাত, দূর্গম পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে হামহাম জলপ্রপাত, এশিয়ার বৃহত্তম হাকালুকি হাওর, দোসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার, গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট, রাঙাউটি রিসোর্ট, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাধবপুর লেইক, শ্রীমঙ্গলের স্বাধীনতার বধ্যভুমি, বাইক্কা বিল, টি হেভেন রিসোর্ট, আগরের কারখানা, রাবার বাগান, জুড়ির কমলার বাগান, তুর্কি নকশায় নির্মিত শ্রীমঙ্গলের দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, বীরশ্রেষ্ট হামিদুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, মনিপুরি তাঁতশিল্প, খাসিয়াদের চাষকৃত পানের বরজ ও মৌলভীবাজারের বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক সহ আরো অনেক সুন্দর আকর্ষণীয় জায়গা।
জেলা এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, জেলার প্রায় ১৬শ কিলোমিটার পাকা রাস্তার মধ্যে এবারের বন্যায় ৩৩ কিলোমিটার রাস্তা ও ১৫ টি ব্রীজ কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অর্থে ক্ষতির পরিমান ৮ কোটি ৮০ লক্ষ টাকারও বেশী। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে সদর, রাজনগর, কুলাউড়া ও কমলগঞ্জ উপজেলায়।
এদিকে মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, তাদের আওতাধীন ৫ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিন্তু বেসরকারি হিসেবে ৩০ কিলোমিটারের চেয়ে অনেক বেশি রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়ক ও জনপথ বিভাগের মৌলভীবাজার-শমসেরনগর ও মৌলভীবাজার কমলগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসসড়ক দীর্ঘ ৩ বছর ধরে বেহাল অবস্তায় পড়ে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে কেউই রাস্তাটি মেরামত করেনি। রাস্তাটি যোগাযোগের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই রোড দিয়ে চলাচলকারী যাত্রীরা এখন কালেঙ্গা বাগানের ভেতরের রোডসহ অন্য রোড ব্যবহার করছেন। চাতলাপুর চেকপোষ্ট দিয়ে যাতায়াতকারীদেরকেও চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই শুরু হবে।
এছাড়াও জেলার মৌলভীবাজার-শমশেরনগর, কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়া-জুড়ী, জুড়ী-বড়লেখা ও মৌলভীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। এই সড়ক গুলোই হচ্ছে জেলার প্রধান সড়ক। কিন্তু এই সড়ক গুলো যোগাযোগের অনেকটা অনুপযোগী। স্থানীয়রা দীর্ঘ দিন যাবত স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার অবেদন করলেও এখন পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। তবে কাজ শুরুর বিষয়ে তারা আশ্বস্থ করছেন।
কয়েকজন রেস্ট হাউজ মালিকের সাথে কথা হলে তারা জানান, অনেক জায়গায় সড়কের সংস্কার কাজ চলায় কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। যার জন্য এসব স্থানে পর্যটকদের দূর্ভোগ পোহাতে হবে। তারপরেও আমরা আশাবাদী এবছর পর্যটকদের সমাগম ঘটবে। আর ভ্রমন পিপাসুদের ভ্রমনকে আরামদায়ক করতে নেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
জেলা প্রশাসক বেগম নাজিয়া শিরিন বলেন, একই সাথে পর্যটন কেন্দ্রিক প্রতিটি উপজেলার উন্নয়নের জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এনিয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথেও যোগাযোগ চলছে। বিশেষ করে রাজনগর উপজেলার অন্তেহরীকে পর্যটন স্পটে রূপ দেয়ার চেষ্টা পুরো ধমে চলছে। তবে তিনি দিবস পালনের মধ্যে পর্যটন শিল্পের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ কথাটি মানতে না রাজ।